পাতা:ত্রৈলোক্যনাথ রচনাসংগ্রহ.djvu/২৬৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

মনের ভাব মুখে প্ৰকাশ হইয়া পড়িল, সেজন্য সে তাহাকে কলিকাতা যাইতে মানা করিল। হীরালাল যখন সংসারের কথা জিজ্ঞাসা করিল, কুসী। তাহার কিছুই উত্তর করিতে পারিল না। সে কেবল বলিল,- “আমি জানি না।” হীরালাল জিজ্ঞাসা করিল,- “এখন তোমাদের সংসার কি করিয়া চলিতেছে?” কুসী। উত্তর করিল,— “মেসো-মহাশয়ের কিছু জমি আছে। তিনি ধান পাইয়াছিলেন। তাহাতেই এখন চলিতেছে।” হীরালাল জিজ্ঞাসা করিল,- “সে ধানে বারো মাস চলে?” কুসী বলিল,- “সে কথা আমি বলিব না। ঘরের কথা বলিতে নাই।” হীরালাল বলিল,- “তবে তুমি আমাকে পর ভাব! এ তোমার বড় অন্যায়। আমার দিব্য! তোমাকেই বলিতেই হইবে। আমি বৃথা। এ সব কথা জিজ্ঞাসা করিতেছি না। বিশেষ কারণ আছে, সেইজন্য জিজ্ঞাসা করিতেছি।” নিরুপায় হইয়া কুসীকে সকল কথা বলিতে হইল। লজ্জায় অধোবদন হইয়া সে বলিল,— “বারো মাস চলে না। আর অল্প ধানই আছে। পৌষ মাসের এ দিকে পুনরায় আর আমরা ধান পাইব না। সেজন্য যাহাতে পৌষ মাস পর্যন্ত চলে, আমরা তাঁহাই করিতেছি।” হীরালাল জিজ্ঞাসা করিল,- “সে আবার কি?” কুসী পুনরায় চুপ করিয়া রহিল। কিন্তু হীরালাল কিছুতেই ছাড়িল না। তখন ছলছল চক্ষে কুসী বলিল,— “মাসী-মা এখন একবেলা আহার করেন। সেইরূপ করিতে আমিও চাহিয়াছিলাম। কিন্তু তিনি না। তাঁহাকে লুকাইয়া যতদূর পারি, ততদূর আমিও অল্প আহার করিতেছি।” 9 হীরালাল বলিল,- “সৰ্ব্বনাশ! কুসী! তুমিঠাধ কুসী উত্তর করিল,—“না, তা নয়। শুদ্ধ কুসী। উত্তর করিল,— “মাছ অ’ তরকারি আমাদের কিনিতে হয় না। পাড়ায় যাহার বাড়ীতে যাহা হয়, আমাদিগের সকলে তাহা দিয়া যায়। তারপর সজিনা শাক আছে, কলমি শাক আছে, ডুমুর আছে, খোড় আছে, পাড়িয়া কি তুলিয়া কি কাটিয়া আনিলেই হয়। অধিক করিয়া সেই সব খাইলে আর ক্ষুধা পায় না।” হীরালাল জিজ্ঞাসা করিল,— “তেল নুন কি করিয়া হয়?” কাটনার ডালার দিকে দৃষ্টি করিয়া, কুসী। উত্তর করিল,— “মাসী-মা ও আমি দুইজনেই পৈতা কাটি । আমি একদিনে একটা পৈতা কাটিতে পারি। তাহা এক পয়সায় বিক্রীত হয়। মাসী-মা চক্ষে ভাল দেখিতে পান না। দুই দিনে তিনি একটি পৈতা কাটিতে পারেন। রাত্রিতে সূতা কাটিলে আমি আরও অধিক পৈতা কাটিতে পারি। কিন্তু তাহাতে তেল খরচ হয়।” এইসব কথা শুনিয়া হীরালালের মনে বড় কষ্ট হইল। কুসীর দুঃখে হীরালালের বুক ফাটিয়া যাইতে লাগিল। আর কোন কথা না বলিয়া, হীরালাল তখন সে স্থান হইতে উঠিল; দ্রুতবেগে রামপন্দর নিকট গমন করিল। যে পথ দিয়া হীরালাল চলিয়া গেল, কুসী বিরস-বদনে একদৃষ্টি সেইদিকে চাহিয়া রহিল। কুসী ভাবিল,- “এমন কি কথা বলিয়াছি যে, ইনি রাগ করিয়া চলিয়া গেলেন। আমরা বড় দুঃখী, সেইজন্য কি ইনি চলিয়া গেলেন? আর কখনও কি আসিবেন না?” এইরূপ ভাবিয়া কুসী। দীর্ঘনিঃশ্বাস পরিত্যাগ করিল। SCጽbr দুনিয়ার পাঠক এক হও! ~ wamarboicomo