পাতা:ত্রৈলোক্যনাথ রচনাসংগ্রহ.djvu/২৭৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

না। আমি তাঁহার বাড়ীতে আর যাইব না। তাঁহার টাকা, তাহার সম্পত্তি,-আমি আর কিছুই চাই না। লজ্জায় ঘূণায় ক্ৰোধে আমি আত্মহত্যা করিব বলিয়া মনে করিয়াছিলাম। আমি মনে করিলাম যে, যেমন তিনি আমাকে অপমান করিয়াছেন, তেমনি, আমি তাঁহাকে পুত্ৰশোকে কাতর করিব। অপমানের জ্বালায় আমি এত জ্ঞানশূন্যা হইয়াছিলাম যে, আমার নিশ্চয় বোধ হয়, আমি একাজ করিয়া ফেলিতাম। কিন্তু কুসী। তিমিরাবৃত আকাশে যেরূপ চাঁদের উদয় হয়, আমারও অন্ধকারময় মনে সেই সময় তোমার মুখখানি উদয় হইল। সেই মধুমাখা মুখখানি স্মরণ করিয়া, আমার মন হইতে সকল দুঃখ দূর হইল। “যাহা হউক, কুসী! তুমি ভয় করিও না। আমি যদি মানুষ হই, আমার নাম যদি হীরালাল হয়, তাহা হইলে দেখিও, আমি অর্থ উপাৰ্জন করিতে পারি কি না। সেজন্য, কুসী, তুমি কিছুমাত্র ভয় করিও না। তবে আপাততঃ তোমাকে বসন-ভুষণে সুসজ্জিত করিতে পারিলাম না, তাহাই আমার দুঃখ । “আমি একজন প্রতিবাসীর বাটীতে আছি। আজ সন্ধ্যাবেলা সেই স্থানে গোপনে মাতার সহিত সাক্ষাৎ করিব। তাঁহার নিকট হইতে বিদায় হইয়া, কল্যই কলিকাতা রওনা হইব। দুই চারি দিনের মধ্যে তােমার সহিত সাক্ষাৎ করিব। সাক্ষাৎ হইলে সমুদয় বৃত্তান্ত আরও ভাল করিয়া তোমাকে বলিব ।” দুই চারি দিন অতীত হইয়া গেল, আট দিন অতিবাহিত হইল, দশ দিন অতিবাহিত হইল, হীরালাল আর কোন চিঠি-পত্ৰ লিখিল না। হীরালালের কোন সংবাদ নাই। কুসী ও তাহার মাসী-মা বড়ই উদ্বিগ্ন হইলেন। দিনের পর দিন যত ত লাগিল। কুসী যে কোনও সন্ধান লাইবে, তাহার উপায় ছিল না। কাহাকে সূপুত্ৰ ? পাছে কুসীর পত্র কাহারও হাতে পড়ে, সে জন্য হীরালাল তাহাকে দেশের পৃষ্ঠানসম্বলিত খাম দিয়া যায় নাই। হীরালালের বাড়ী কোথায়, কুসী। তাহা জানিত না। মাষ্ট্ৰীও জানিতেন না। জানিত কেবল রামপাদ, আর জানিতেন মেসো-মহাশয়। তাহারা জীবর্তি নাই। তাহার পর হীরালালের ঠিকানা জানিলেও কুসী। কি করিয়া পত্র লিখিবে! সে বাড়ীতে নাই। তাহার পিতা তাহার উপর খড়গহস্ত হইয়াছেন। বিবাহের সময় হীরালালের যে দুই চারিজন বন্ধু উপস্থিত ছিল, তাহাদের নাম-ধাম কুসী কিছুই জানে না। হীরালালের সন্ধান করিবার কোন উপায় ছিল না। পািনর দিন এই ভাবে কাটিয়া গেল। দুর্ভাবনার আর সীমা পরিসীমা রহিল না। ষোল দিনের দিন, কুসী। দূর হইতে ডাকপেয়াদাকে দেখিতে পাইল। কুসীর আর আনন্দের সীমা রহিল না। ডাকহরকরা তাহদের বাড়ী পৰ্যন্ত আসিয়া উপস্থিত হয়, সে বিলম্ব কুসীর সহ্য হইল না। দৌড়িয়া আগে গিয়া তাহার নিকট হইতে পত্র চাহিয়া লইল। একখানি ছাপা কাগজ ডাকে আসিয়াছিল। কিন্তু তাঁহাদের উপর যে শিরোনামা লেখা ছিল, দেখিয়া কুসীর মুখখানি মলিন হইল। দুইখানিই তাহার মাসীর নামে আসিয়াছিল। শিরোনামা হীরালালের হস্তাক্ষরে লিখিত হয় নাই৷ অজানিত অপরিচিত হস্তাক্ষরে মাসীকে কে পত্র লিখিল, কাগজ ও চিঠিখানি হাতে লইয়া কুসী। তাঁহাই ভাবিতে লাগিল। চিঠিখানির সহিত আর একখানি ক্ষুদ্র হরিদ্রাবর্ণের কাগজ সংলগ্ন ছিল। ኴ

  • " দুনিয়ার পাঠক এক হও! ৩ www.amarboi.com ০০০ RO(?