পাতা:ত্রৈলোক্যনাথ রচনাসংগ্রহ.djvu/৩০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

 এই কথা শুনিয়া সকলে নিরঞ্জনকে ছি-ছি করিতে লাগিল। সকলে বলিল,— “নিরঞ্জনের মনটি হিংসায় পরিপূর্ণ। তা না হইলেই বা ওঁর এমন দশা হইবে কেন? যার দুই শত বিঘা ব্রহ্মোত্তর ভূমি ছিল, আজ সে পথের ভিখারী; কোনও দিন অন্ন হয়, কোনও দিন অন্ন হয় না।”

 খেতুর মাতে আর তনু রায়ের স্ত্রীতে নানারূপ কথাবার্ত্তা হইতে লাগিল।

 খেতুর মা জিজ্ঞাসা করিলেন,— “তোমার এ মেয়েটি বুঝি এক বৎসরের হইল?”

 তনু রায়ের স্ত্রী উত্তর করিলেন,— “হা! এই এক বৎসর পার হইয়া দুই বৎসরে পড়িবে।”

 খেতুর মা পূনরায় জিজ্ঞাসা করিলেন,— “মেয়েটির নাম রাখিয়াছ কি?”

 তনু রায়ের স্ত্রী উত্তর করিলেন,— “ইহার নাম হইয়াছে, কঙ্কাবতী।”

 খেতুর মা বলিলেন,— “কঙ্কাবতী! দিব্য নামটি তো? মেয়েটিও যেমন নরম নরম দেখিতে, নামটিও সেইরূপ নরম নরম শুনিতে।”

 এইরূপ খেতুর মাতে, আর তনু রায়ের স্ত্রীতে ক্রমে ক্রমে বড়ই সদ্ভাব হইল। অবসর পাইলে তনু রায়ের স্ত্রী খেতুর মার কাছে আসেন, আর খেতুর মাও তনু রায়ের বাটীতে যান। মাঝে মাঝে তনু রায়ের স্ত্রী কঙ্কাবতীকে খেতুর মার কাছে ছাড়িয়া যান।

 মেয়েটি এখনও হাঁটিতে শিখে নাই; হামাগুড়ি দিয়া চারিদিকে বেড়ায়, কখনও বা বসিয়া খেলা করে, কখনও বা কিছু ধরিয়া দাঁড়ায়। খেতুর মা আপনার কাজ করেন ও তাহার সহিত দুটি-একটি কথা ক'ন্। কথা কহিলে মেয়েটি ফিক ফিক করিয়া হাসে, মুখে হাসি ধরে না। মেয়েটি বড় শান্ত, কাদিতে একেবারে জানে না।

অষ্টম পরিচ্ছেদ

বালক-বালিকা

কলিকাতায় গিয়া খেতু ভালরূপে লেখাপড়া করিতে লাগিলেন। শান্ত, শিষ্ট, সুবুদ্ধি। খেতুর নানা গুণ দেখিয়া সকলে তাহাকে ভালবাসিতেন।

 রামহরির এক্ষণে কেবল একটি শিশুপুত্র, তাহার নাম নরহরি। তিন বৎসর পরে একটি কন্যা হয়; তাহার নাম হইল সীতা।

 রামহরি ও রামহরির স্ত্রী, খেতুকে আপনাদিগের ছেলের চেয়ে অধিক স্নেহ করিতেন। খেতুর প্রখর বুদ্ধি দেখিয়া স্কুলে সকলেই বিস্মিত হইলেন। খেতু সকল কথা বুঝিতে পারেন, সকল কথা মনে করিয়া রাখিতে পারেন। যখন যে শ্রেণীতে পড়েন, তখন সেই শ্রেণীর সর্ব্বোত্তম বালক—খেতু; খেতুর উপর কেহ উঠিতে পারে না। যখন যে কয়খানি পুস্তক পড়েন, তাহার ভিতর হইতে প্রশ্ন করিয়া খেতুকে ঠকানো ভার। এইরূপে খেতু এক শ্রেণী হইতে অপর শ্রেণীতে উঠিতে লাগিলেন।

 জল খাইবার নিমিত্ত রামহরি খেতুকে একটি করিয়া পয়সা দিতেন; খেতু কোনও দিন খাইতেন, কোনও দিন খাইতেন না। কি করিয়া রামহরি এই কথা জানিতে পারিলেন।

১৮
ত্রৈলোক্যনাথ রচনাসংগ্রহ