পাতা:ত্রৈলোক্যনাথ রচনাসংগ্রহ.djvu/৩১২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

কুসী বলিল,- “কখনই না। যতক্ষণ না বলিবেন যে, আমি যাব, ততক্ষণ আমি ছাড়িব ਜ" কাজেই আমাকে বলিতে হইল যে, আমি যাব। কাজেই আমাকে যাইতে হইল। কাজেই কুসীর শ্বশুরবাড়ীতে আমাকে কিছুদিন বাস করিতে হইল। কাজেই হীরালালের পিতার সমাদর ও যত্নে আমাকে পরম আপ্যায়িত হইতে হইল। কাজেই সে স্থান হইতে পুনরায় বিদায় গ্রহণের সময় কুসীর কান্না দেখিয়া আমাকেও কাঁদিয়া ফেলিতে হইল। সে স্থান হইতে আমি স্বগ্রামে প্রত্যাগমন করিলাম। কাৰ্যোপলক্ষে কলিকাতা আমাকে সৰ্ব্বদা গমন করিতে হয়। কলিকাতার পথে একদিন সহসা বিন্দীর সহিত আমার সাক্ষাৎ হইল। তাহার সহিত প্ৰায় একশত স্ত্রীলোক আর দুই-একজন পুরুষমানুষ ছিল। আমি কোন কথা বলিতে না বলিতে, বিন্দী আসিয়া আমায় ধরিল। বিন্দী বলিল,— “কেও ডাক্তারবাবু, আমাকে চিনিতে পারেন?” আমি উত্তর করিলাম,- “তোমাকে আমি বিলক্ষণ চিনিতে পারি, কিন্তু তুমি আমাকে বিন্দী বলিল,— “আমি! আমি সকলকেই চিনিতে পারি। সেই যে উজিরগড়ের ঢলঢলিতে আপনি ছিলেন!! আপনি কে, সে কথা আমি জমাদারকে জিজ্ঞাসা করিয়াছিলাম।” আমি জিজ্ঞাসা করিলাম,- “দিগম্বরবাবু আর তাহার স্ত্রী, এখন কোথায়?” বিন্দী উত্তর করিল, “নাতিনীর বিবাহ দিতে তিনি দেশে আসিয়াছেন; আমিও সেই সঙ্গে দেশে আসিয়াছি। আমি কি সে দেশে থাকিতে পারিন, আমি সেথােগিরি করি, তাহাতে বেশ দুপিয়সা পাওনা আছে, এই দেখুন কতগুলি লোকফুর্ক কালীঘাট লইয়া যাইতেছি। আমি কি সেই খোট্টার দেশে বসিয়া থাকিতে পারি। তুঙ্গুর নূতন একটি ফন বাহির করিয়াছি। উদ্ধৃত্যু পাওন্যা-থােওনা যা হয়, দুইজনে ভূমির পুরোহিত, আমি হইয়াছি মাইজী স্বামী। সে কাজের জন্য আমার রং করা আলখেল্লা আছে।” আমি জিজ্ঞাসা করিলাম,- “সে আবার কি ফনৃ?” বিন্দী উত্তর করিল,- “এই কলিকাতায় মাইজী স্বামী হইয়া টিকিদার বাবুদের বাড়ী যাই। বাবু আর বাবুয়ানীরা আমার খুব আদর করেন। সকলেই বলেন,-মাইজী স্বামী আসিয়াছেন! মাইজী স্বামী আসিয়াছেন। তাহার পর বাবুরা আফিসে চলিয়া গেলে আমি গৃহিণীদের বলি,— “গিামীবাবু! সাবিত্ৰীব্ৰত ঘুচিয়া এখন এক নূতন ব্ৰত উঠিয়াছে, তাহা করিবেন? গিামীবাবু জিজ্ঞাসা করেন,-কি ব্ৰতা? আমি বলি, ইহার নাম দিগম্বৱী-ব্ৰত। গিনীবাবু জিজ্ঞাসা করেন,-সে ব্ৰত করিলে কি হয়? আমি বলি,- সে ব্ৰত করিলে স্বামী চিরকাল পদানত হইয়া থাকে। অনেকেই এখন সেই ব্ৰত করিতেছেন।” লেখা-পড়া শিখিয়া যাহাদের মেজাজ গরম হইয়া গিয়াছে, সংসারে কাজকৰ্ম্ম যাহারা কিছুমাত্র করেন না, পঙ্গুর মত কেবল বসিয়া থাকেন, আর রং-বেরঙের পোষাক কিনিয়া স্বামীকে যাহারা। ফতুর করেন, সেইসব মেয়েদের মধ্যে এই দিগম্বৱী-ব্ৰতটি বিলক্ষণ চলন হইয়াছে। লোকের বাড়ী বাড়ী গিয়া আমি "গিনীবাবুর’ যোগাড় করি, উদ্ধব দা-ঠাকুর পূজা করেন, আর মন্ত্র পড়ান। এখন হইতে সাবিত্রী-ব্ৰত আর কাহাকেও করিতে হইবে না, দিগম্বৱী-ব্ৰত করিলেই চলিবে। এই নূতন দিগম্বৱী-ব্ৰত করিলেই চলিবে। এই নূতন ব্ৰতের কথা। আপনিও পাঁচজনকে বলিবেন।” ফোকলা দিগম্বর দুনিয়ার পাঠক এক হও! ৩ www.amarboi.com ~ vQOv)