মা বলিলেন,— “না না, আমি তোমাকে কোলে করিয়া লইয়া যাইব।” কোলে যাইতে যাইতে খেতু পয়সাগুলি চুপিচুপি মা'র আচলে বাধিয়া দিলেন। বাড়ী যাইয়া যখন খেতু মা'র কোল হইতে নামিলেন, তখন মা'র আঁচল ভারি ঠেকিল।”
মা বলিলেন,— “এ আবার কি? খেতু! তুমি বুঝি আমার আঁচলে পয়সা বঁধিয়া দিলে?”
খেতু হাসিয়া উঠিলেন আর বলিলেন,— “মা! রও, তোমাকে আবার একটা তামাসা দেখাই।”
এই বলিয়া খেতু মালা-ছড়াটি মা'র গলায় দিয়া দিলেন, আর বলিলেন,— “কেমন মা! মনে আছে তো?”
মা খেতুর গালে ঈষৎ ঠোনা মারিয়া বলিলেন,— “ভারি দুষ্ট ছেলে!” খেতু হাসিয়া উঠিলেন, মাও হাসিলেন।
পরদিন খেতু দেখিলেন যে, তাঁহাদের বাটীতে কোথা হইতে একটি ছোট মেয়ে আসিয়াছে। খেতু জিজ্ঞাসা করিলেন,— “মা! ও মেয়েটি কাদের গা?”
মা বলিলেন,— “জান না? ও যে তোমার তনু কাকার ছোটমেয়ে! ওর নাম কঙ্কাবতী। তনু রায়ের স্ত্রী এখন সর্ব্বদাই আমার নিকট আসেন। আমি পৈতা কাটি, আর দুই জনে বসিয়া গল্পগাছা করি। মেয়েটিকে তিনি আমার কাছে মাঝে মাঝে ছড়িয়া যান। মেয়েটি আপনার মনে খেলা করে, কোনও রূপ উপদ্রব করে না। আমার কাছে থাকিতে ভালবাসে।”
তনু রায়ের সহিত খেতুর কোন সম্পর্ক নাই, কেবল পাড়া-প্রতিবাসী, সুবাদে কাকা কাকা বলিয়া ডাকেন।
কঙ্কাবতীকে খেতু বলিলেন,— “এস, এই দিকে এস।”
কঙ্কাবতী সেইদিকে যাইতে লাগিল। খেতু বলিলেন,— “দেখ দেখ, মা! কেমন এ টল-টল করিয়া চলে!"
খেতুর মা বলিলেন,— “পা এখনও শক্ত হয় নাই।”
একটি পাতা দেখাইয়া খেতু বলিলেন,— “এই নাও।”
পাতাটি লাইবার নিমিত্ত কঙ্কাবতী হাত বাড়াইল ও হাসিল।
খেতু বলিলেন,— “মা! কেমন হাসে দেখ?”
মা উত্তর করিলেন,— “হঁ বাছা! মেয়েটি খুব হাসে, কাঁদিতে একেবারে জানে না, অতি শান্ত।”
খেতু বলিলেন,— “মা! আগে যদি জানিতাম, তো ইহার জন্য একটি পুতুল কিনিয়া আনিতাম।”
মা বলিলেন,— “এইবার যখন আসিবে, তখন আনিও।”