পাতা:ত্রৈলোক্যনাথ রচনাসংগ্রহ.djvu/৩২১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

গুরুদেব উত্তর করিলেন, — “আমি নিজে খাই না, আমি বিক্রয় করি। আমার শিষ্যযজমান আছে। মাছ-মাংস একেবারেই আমি খাই না। সকলেই জানে যে, গোলোক চক্ৰবৰ্ত্তী নিষ্ঠাবান সদব্ৰাহ্মণ। লেখাপড়া জানি না, নিজের নামটিও সই করিতে পারি না, ঢেরা দিয়া সারি। তবুও দেখ, এই নিষ্ঠার জন্য তোমার বাপ-মায়ের কল্যাণে সকলেই আমাকে ভক্তি-শ্রদ্ধা করে ।” আমাদের এইরূপ কথাপকথন হইতেছে, এমন সময় বাহিরে একজন খরিদদার আসিয়া উপস্থিত হইল। ঠাকুর মহাশয় তাড়াতাড়ি বাহিরে গমন করিলেন। খরিদদারের সহিত তাঁহার কথাবাৰ্ত্তায় আমি বুঝিতে পারিলাম যে, সে পাঠার মাংস ভিন্ন অন্য মাংসা লইবে না; পাঠা তাহাকে দেখাইয়া তৎক্ষণাৎ কাটিয়া দিতে হইবে। তাহার জন্য সে অধিক মূল্য দিতে প্ৰস্তুত আছে। খোয়াড়ের ভিতর যে তিন-চারিটি পাঠা ছিল, তাহার একটিকে ঠাকুর মহাশয় অনেক কষ্টে বাহির করিয়া খরিদদারকে দেখাইলেন। ক্রেতার তাহা মনোনীত হইল। তাহার পর ঠাকুর মহাশয় সেই পাঠাকে বাটীর ভিতর আনিলেন। যে স্থানে আমি বসিয়াছিলাম, তাহার নিকটে দুইটি খোটা ভূমিতে প্রোথিত ছিল। পাঠাকে ফেলিয়া ঠাকুর মহাশয় তাহাকে সেই খোঁটায় বঁধিলেন। তাহার পর তাহার মুখদেশ নিজের পা দিয়া মাড়াইয়া জীয়ন্ত অবস্থাতেই মুণ্ডদিক হইতে ছাল ছাড়াইতে আরম্ভ করিলেন। পাঠার মুখ গুরুদেব মাড়াইয়া আছেন, সুতরাং সে চীৎকার করিয়া ডাকিতে পারিল না। কিন্তু তথাপি তাহার কণ্ঠ হইতে মাঝে মাঝে এরূপ বেদনাসূচক কাতরধ্বনি নিৰ্গত হইতে লাগিল যে, আমার বুক যেন ফাটিয়া যাইতে লাগিল। তাহার পর তাহার চক্ষু দুইটি ! আহা! * সে চক্ষু দুইটির দুঃখ আক্ষেপ ও ভৎসনাসূচক ভাব দেখিয়া আমি যেন জ্ঞান- হইয়া পড়িলাম। সে চক্ষু দুইটির ভাব এখনও মনে হইলে আমার শরীর রোমাঞ্চ আমি আর থাকিতে পারিলাম না। আমি বলিয়া উঠিলাম,- “ঠাকুর মহাশয়! য়! করেন কি? উহার গলাটা প্ৰথমে ফাটিয়া ফেলুন। প্রথম উহাকে বধ করিয়া ত র উহার চৰ্ম্ম উত্তোলন করুন।” ঠাকুর মহাশয় উত্তর করিলেন, ... “চুপ! চুপ! বাহিরের লোক শুনিতে পাইবে । জীয়ন্ত অবস্থায় ছাল ছাড়াইলে ঘোর যাতনায় ইহার শরীর ভিতরে ভিতরে অল্প অল্প কঁাপিতে থাকে। ঘন ঘন কম্পনে ইহার চৰ্ম্মে একপ্রকার সরু সরু সুন্দর রেখা অঙ্কিত হইয়া যায়। এরূপ চৰ্ম্ম দুই আনা অধিক মূল্যে বিক্রীত হয়। প্রথম বধ করিয়া তাহার পর ছল ছাড়াইলে সে চামড়া দুই আনা কম মূল্যে বিক্ৰীত হয়। জীয়ন্ত অবস্থায় পাঠার ছাল ছাড়াইলে আমার দুই আনা পয়সা লাভ হয়। ব্যবসা করিতে আসিয়াছি, বাবা! দয়ামায়া করিতে গেলে আর ব্যবসা চলে না।” ঠাকুর মহাশয় এইরূপ বলিতে লাগিলেন, আর ওদিকে তাহার হাত চলিতে লাগিল। সিদ্ধহস্ত! শীঘ্রই অনেক চৰ্ম্ম তিনি তুলিয়া ফেলিলেন। আর একবার আমি পাঠার চক্ষু দুইটির দিকে চাহিয়া দেখিলাম। সেই চক্ষু দুইটি যেন আমাকেও ভৎসনা করিয়া বলিল,- “আমি দুৰ্ব্বল, আমি নিঃসহায়, এ ঘোর যাতনা তোমরা আমাকে দিলে, মাথার উপর ভগবানু কি নাই!” আমি এ নিষ্ঠুর দৃশ্য আর দেখিতে পারিলাম না। তৎক্ষণাৎ সে স্থান হইতে প্ৰস্থান করিলাম। বাসায় প্রত্যাগমন করিয়া ভ্রাতাকে পুনৰ্ব্বার আমি অনেক বুঝাইলাম ও তাঁহাকে দেশে লইয়া যাইতে চেষ্টা করিলাম। কিন্তু কিছুতেই সে আমার সহিত দেশে গমন করিল না। নিরাশ হইয়া পরদিন আমি একেলাই কলিকাতা পরিত্যাগ করিয়া যাত্ৰা করিলাম। দেশে প্ৰত্যাগমন করিয়া কিছুদিন পরে শুনিলাম যে, যেদিন ঠাকুর মহাশয়ের সহিত আমার কথাবাৰ্ত্ত হইয়াছিল, ঠিক মুক্তা-মালা 9SVE sNAls viði (SS BS! ro www.amarboi.com ro