পাতা:ত্রৈলোক্যনাথ রচনাসংগ্রহ.djvu/৩২৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

তাহাকে আমি বুকে তুলিয়া লইলাম। অতিকষ্টে আস্তে আস্তে আমার বাটীর দিকে অগ্রসর হইলাম। অনেক রাত্রিতে আমি বাটি আসিয়া উপস্থিত হইলাম। বাহিরের একটি চালায় লোকটিকে রাখিয়া তাহার সেবা-শুশ্রুষা করিতে লাগিলাম। আমাদের গ্রাম হইতে প্ৰায় দুই ক্রোশ দূরে এক হাতুড়ে ডাক্তার ছিলেন। তাঁহাকে আনিতে পাঠাইলাম। কিন্তু তিনি আমার ভ্রাতার ইয়ার। তিনি আসিলেন না। অন্য যাহা কিছু ঔষধ পাইলাম, লোকটিকে তাহাই সেবন করাইলাম। কিন্তু কোন ফল হইল না। দুই দিন পরে সেই অনাথা হিন্দুস্থানী আমার বাটীতে মৃত্যুমুখে পতিত হইল। তাহার সৎকারের নিমিত্ত আমি প্রতিবাসীদিগের সাহায্য প্রার্থনা করিলাম। কিন্তু কেহই আসিলেন না। বরং গ্রামের সকল লোকেই আমার উপর খাগড়হস্ত হইলেন। সকলে বলিলেন,- “সুবল উন্মাদ পাগল হইয়াছে। তাহা না হইলে বিসূচিকা রোগগ্ৰস্ত, অজ্ঞাতকুলশীল, একটা খোট্টাকে বাটী আনিবে কেন? সে নিজে পাগল হউক, তাহাতে ক্ষতি নাই, কিন্তু গ্রামের ভিতর বিসূচিকা আনিয়া সে আমাদিগকে বিপদগ্ৰস্ত করে কেন?” গ্রামের লোক যে নিতান্ত অন্যায় কথা বলিল, তাহা নহে। বরং আমি নিজেই যে অন্যায় কাজ করিয়াছি, তাহা আমি বুঝিতে পারিলাম। কিন্তু কি করিব! সেই অনাথ লোকটিকে সে অবস্থায় মাঠের মাঝখানে ফেলিয়া আসিতে আমি পারি নাই। আমার একজন প্রজার একখানি গরুর গাড়ী ছিল। সেই গরুর গাড়ীতে মৃতদেহ শ্মশানে লইয়া গিয়া আমি একলাই তাহাতে দাহ করিলাম। পরদিন আমি একজন প্রতিবাসীর গৃহে গমন কািন্তছিলাম। তিনি তামাক খাইয়া আমাকে ইহার অর্থ আমি বুঝিতে পারিলাম না। অষ্টি — “তামাক ছাড়িয়া দিব কেন?” নিসী, নিজেই ধূমপান করিয়া হঁকটি রাখিয়া দিলেন। ক তুমি বাটী আনিয়াছিলে, যাহার শব তুমি দাহ y ਨ নাই। একথা লইয়া গ্রামে ঘোরতর গোলযোগ উপস্থিত হইয়াছে। অন্য লোক দূরে থাকুক, তোমাদের ঠাকুর মহাশয়ও তোমার বাটীতে আর জলগ্ৰহণ করিবেন না।” ফলকথা, সেইদিন হইতে গ্রামে আমি একঘরে হইলাম। ক্ৰমে শুনিলাম যে, আমাদের ঠাকুর মহাশয়ের উদ্যোগেই সকলে আমাকে একঘরে করিয়াছেন। যাহা হউক, আমি চুপ করিয়া রহিলাম। গ্রামবাসীদিগের বাটীতে গমনাগমন বন্ধ করিয়া দিলাম। আমার বাটীতেও কেহ। আসিতেন না। সেইদিন হইতে আমি তামাক ছাড়িয়া দিলাম। কিছুদিন পরে শুনিলাম যে, আমার ভ্রাতা দেশে আসিয়াছে। গ্রামে এক বন্ধুর বাটীতে সে অবস্থিতি করিতেছে। আরও শুনিলাম যে, পৈতৃক সম্পত্তি বিভাগের নিমিত্ত সে আদালতে নালিশ করিবে। আমার নিকট হইতে যে টাকা পাইয়াছিল, তাহা খরচ হইয়া গিয়াছে। মকদ্দমা খরচের নিমিত্ত সে তাহার অংশ বন্ধক দিবে। এইরূপ কথা শুনিয়া আমি ভ্ৰাতার নিকট বলিয়া পাঠাইলাম যে,- “সম্পত্তি বিভাগের নিমিত্ত মকদ্দমা করিবার প্রয়োজন কি? গ্রামের দুই-একজন ভদ্রলোককে সে মধ্যস্থ মনোনীত করুক। তাহারা যেরূপ বিভাগ করিয়া দিবেন, আমি তাহাতেই সম্মত হইব। অথবা সে না হয়, নিজেই বিভাগ করুক। তাহার যেরূপ ইচ্ছা, সেইরূপ অংশ সে আমাকে প্ৰদান করুক। তাহাতে আমি কিছুমাত্র আপত্তি করিব না।”

    • află cios (gs se - www.amarboi conf اSy(