পাতা:ত্রৈলোক্যনাথ রচনাসংগ্রহ.djvu/৩৩০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

এইরূপ চিন্তা করিতে করিতে আমি ক্ৰমে গড়ের মাঠে গিয়া উপস্থিত হইলাম। সে স্থানে নিৰ্জ্জন একটি বৃক্ষতলে বসিয়া নিজের অবস্থার কথা ভাবিতে লাগিলাম। ক্রমে সন্ধ্যা হইয়া গেল। পথে এক একটি গ্যাসের লণ্ঠন জুলিয়া উঠিল। আকাশে এক একটি করিয়া নক্ষত্র উদিত হইল। সাহেব ও মেমদিগের গাড়ীর আলোক আকাশভ্ৰষ্ট নক্ষত্রের ন্যায় দ্রুতবেগে ছুটিতে লাগিল। এই সময় সহসা এক বৃদ্ধ আমার নয়নগোচর হইলেন। আমার নিকট হইতে প্ৰায় দশ হাত দূরে তিনি বসিয়াছিলেন। এতদূরে তিনি বসিয়াছিলেন, তথাপি তাঁহার শ্বাস-প্ৰশ্বাসের শব্দ আমি শুনিতে পাইতেছিলাম। দ্রুতবেগে অতিকষ্টে শ্বাস-প্ৰশ্বাস কাৰ্য সাধিত হইলে যেরূপ শব্দ হয়, তাহার নাসারন্ধ হইতে সেইরূপ শব্দ নির্গত হইতেছিল। বৃদ্ধের যাতনা দেখিয়া আমার মনে দুঃখ হইল। আমি তাঁহার নিকটে গিয়া জিজ্ঞাসা করিলাম,- “মহাশয়ের কি হাঁপানি রোগ আছে? নিশ্বাস ফেলিতে কি আপনার বড় কষ্ট হইতেছে?” কিছু রুক্ষভাবে তিনি উত্তর করিলেন,- “হাঁপানি রোগ থাকিবে কেন? আমি অতিশয় শ্ৰান্ত হইয়াছি, সেইজন্য এত দ্রুতবেগে নিশ্বাস-প্ৰশ্বাস প্রবাহিত হইতেছে।” আমি জিজ্ঞাসা করিলাম,- “দ্রুতবেগে দীেড়িয়া আসিয়াছেন? এ বয়সে ছুটিাছুটি করা উচিত নয়।” বৃক্ষ উক্ত কহিনুৰ "তােমুদুর মৃতদীেড়িম্ভূক্ষ্মকে পথ চলিতে হয় না। আকাশপথে আমি ভ্ৰমণ করি! এইমাত্র জাপান হইতে আসিতেছি৫) তাহার কথায় আমার প্রত্যয় হইল না। মানুষ ৰাষ্ট্ৰয়ী শূন্যপথে কেহ কি ভ্ৰমণ করিতে পারে! বুণ্ঠে আসিয়া উপস্থিত হইতে পারে। আমি মনে কল্পিী- “জাপানে, মহাশয় কি জন্য গিয়াছিলেন?” বৃদ্ধ উত্তর করিলেন,- “সে স্থানে আমি ভূমিকম্প করিতে গিয়াছিলাম। পৃথিবীতে যত ভূমিকম্প হয় সে সমুদয় ভূমিকম্প আমিই করিয়া থাকি। ভূমিকম্প করিয়া আমি জীবিকা নিৰ্ব্বাহ করি।” আমি ঘোরতর আশ্চৰ্য হইলাম। মানুষ যে আবার ভূমিকম্প করে, ভূমিকম্প করা যে আবার মানুষের একটা ব্যবসায়, একথা আমি পূৰ্ব্বে কখন শুনি নাই। এখন আমার নিশ্চয় বিশ্বাস হইল যে, লোকটা বদ্ধ পাগল। তথাপি পুনরায় আমি জিজ্ঞাসা করিলাম,- “পিতামাতার নিকট আমি শুনিয়াছি যে, সহস্রফণা বাসুকি পৃথিবী বহন করিয়া আছেন। একটি মস্তক শ্ৰান্ত হইলে, যখন তাহা পরিবৰ্ত্তিত করিয়া অন্য মস্তকে তিনি পৃথিবী গ্ৰহণ করেন, তখনই পৃথিবী কম্পিত হয়, আর তাহাকেই লোকে ভূমিকম্প বলে। একথা যদি সত্য হয়, তাহা হইলে আপনার কথা কিরূপে আমি বিশ্বাস করিতে পারি?” বৃদ্ধ উত্তর করিলেন,- “সেসব গালগল্প। বাসুকিকে আর ভূমিকম্প করিতে হয় না! বাসুকির মস্তক-পরিবর্তনে যদি ভূমিকম্প হইলে এককালে সমস্ত পৃথিবী কম্পিত হইত। এইমাত্র আমি জাপানে বৃহৎ একটি ভূমিকম্প হইত, তাহা করিয়া আসিতেছি। কিন্তু দেখ, সে ভূমিকম্প কলিকাতায় হয় নাই ।” ORR দুনিয়ার পাঠক এক হও! ~ www.amarboiconi লোক্যনাথ রচনাসংগ্ৰহ