পাতা:ত্রৈলোক্যনাথ রচনাসংগ্রহ.djvu/৩৩৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ও চাদর আমার শরীরে দৃঢ়রপে বন্ধন করিয়াছিলাম। বায়ুভরে ঘুড়িগুলি যাই উড়িল, আর সেই সময় আমিও গির্জার চূড়া ছাড়িয়া দিলাম। ঘুড়িগুলি বায়ুভরে আকাশপথে চলিতে লাগিল, দড়ি ধরিয়া আমি তাহার নীচে বুলিতে লাগিলাম। কিন্তু দুৰ্ভাগ্যবশতঃ ঘুড়ি অনেকগুলি মাটির দিকে নামিল না, আকাশের উপর উঠিতে লাগিল। ইহার কারণ এই যে, ঘুড়ি অনেকগুলি ছিল, বায় অধিক প্ৰবল ছিল, আর মনোদুঃখে ও ভালরূপে আহার অভাবে আমার শরীর শীর্ণ শুষ্ক ও লঘ হইয়া গিয়াছিল। হু-হু শব্দে আমি আকাশে উঠিতে লাগিলাম। মেঘরাশি পার হইয়া অসীম আকাশের নিবিড় নীল প্ৰান্তরে গিয়া উপস্থিত হইলাম। তখন সন্ধ্যা হইয়া গিয়াছিল, আকাশে তখন সূৰ্য ছিল। না। ভাগ্যে সেদিন কৃষ্ণপক্ষের রাত্রি ছিল, আকাশে চন্দ্র ছিল না। সূৰ্য, কি চন্দ্র আমার মাথায় লাগিয়া গেলে বড়ই বিপদ ঘটিত। কিন্তু আকাশের উপর নক্ষত্র বিজুবিজ করিতেছিল। পাছে নক্ষত্র আমার চক্ষুতে লাগিয়া যায়, সেজন্য আমাকে বড়ই সতর্ক হইতে হইল।। যতদূর সাধ্য অতি সাবধানে নক্ষত্রের নিকট দিয়া ঘুড়িগুলি চালাইতে লাগিলাম। তথাপি হঠাৎ একটি নক্ষত্রের গায়ে আমার ঘুড়িগুলি লাগিয়া গেল। আকাশপটে নক্ষত্রগণ চুমকির ন্যায় আটা দিয়া জোড়া থাকে। কেবল যেগুলি মজবুত, সেইগুলি পিত্তলনিৰ্ম্মিত পেরেকের ন্যায় পোতা থাকে। নীচে হইতে তাহাদের স্কুল গোড়াগুলি আমরা দেখিতে পাই। কোন কোন পুরাতন পেরেকের ন্যায় নক্ষত্রের গোড়া আলগা হইয়া গিয়াছে। খোচার ন্যায় তাহারা উঠিয়া আছে। এইরূপ একটা নক্ষত্রের গায়ে আমার ঘুড়ি লাগিয়া গেল। নক্ষত্রটি তৎক্ষণাৎ আকাশপট হইতে খসিয়া পড়ল। সেই সূর্তেসীমার পক্ষাশখানি ঘুড়ি ছিড়িয়া গেল। প্রথম আমার বড় ভয় হইয়াছিল, কিন্তু ইহা আম ংস্কৃৈির্প বর হইল। এখন আমি পৃথিবীর দিকে অল্প অল্প নামিতে লাগিলাম! এখন আমি কুঁজেত পারিলাম যে, ঘুড়ির সংখ্যা কিছু অধিক হইয়াছিল, সেইজন্য তাহারা নীচে নামে নাই আমাকে লইয়া উপরে উঠিয়াছিল। একে একে ঘুড়িগুলিকে আমি কাটিয়া দিতে । ঘুড়ির সংখ্যা যতই অল্প হইতে লাগিল, ততই আমি নীচে নামিতে লাগিলাম । কিছুক্ষণ পরে একপ্রকার কোলাহল শব্দ আমার কর্ণগোচর হইল। তখন ঘোর রাত্রি, নিবিড় অন্ধকার! নিম্নদিকে চাহিয়া দেখিলাম। কিছুতেই দেখিতে পাইলাম না, কিসের কোলাহল কিছুই বুঝিতে পারিলাম না। আরও নীচে নামিলাম। সৰ্ব্বনাশ! সুন্দরবন পার হইয়া আমি সমুদ্রের মাঝখানে আসিয়া উপস্থিত হইয়াছি। কিসের কোলাহল, এখন তাহা বিলক্ষণ বুঝিতে পারিলাম। কিন্তু আর উপায় নাই। সমুদয় ঘুড়ি প্রায় কাটিয়া দিয়াছি, পুনরায় উপরে উঠিবার আর উপায় নাই। ফলকথা, অবিলম্বে ঝাপ করিয়া আমি সমুদ্রের জলে পড়িলাম। পৰ্ব্বতসমান তরঙ্গ আমাকে একবার আকাশে তুলিতে লাগিল, একবার পাতালে নামাইতে লাগিল। নাকেমুখে আমার জল প্ৰবেশ করিতে লাগিল। ভয়ানক লোনা জল! ভাগ্যে আমি সীতার জানিতাম, তাই জলের উপর ভাসিয়া থাকিতে পারিলাম। কিন্তু সমুদ্রের পর্বতমান ভীষণ তরঙ্গের ভিতর পড়িয়া মানুষ কতক্ষণ বঁচিয়া থাকিতে পারে! প্ৰাণের আশা আমি একেবারে ছাড়িয়া দিলাম। মনে মনে আমি ঠাকুরদের নাম করিতে লাগিলাম। হাত-পা শিথিল হইয়া কখন জলমগ্ন হই, সেই প্রতীক্ষা করিতেছি, এমন সময় নিকটে বৃহৎ একটি ঝিনুক দেখিতে পাইলাম। আপনারা পুষ্করিণীতে যে ঝিনুক দেখিয়াছেন, এ সেরূপ নহে, এ সমুদ্রের ঝিনুক, বৃহৎ একখানি মানােয়ারি জাহাজের মত। ঝিনুকটি হাঁ করিয়া সমুদ্র-জল 2\3-1-3UF7 sNAls viði (SS BS! ro www.amarboi.com ro \DRGł