পাতা:ত্রৈলোক্যনাথ রচনাসংগ্রহ.djvu/৩৪৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

“ও সাহেব, পাগলা শেয়াল! ও সাহেব, শেয়াল!” —এইরূপ চীৎকার করিতে করিতে তিনি সাহেবের পশ্চাৎদিকে আসিয়া হাতের ঠেঙ্গার বাড়ি শৃগালকে দুই ঘা মারিলেন। শৃগাল সাহেবকে ছাড়িয়া আব্দুরীর দিদিমাকে আক্রমণ করিল ও দুই-তিন স্থানে বিলক্ষণ দংশন করিল! মুহুৰ্ত্তমধ্যে সাহেবও উঠিয়া বন্দুকের কুঁদের আঘাতে শৃগালকে বধ করিলেন। আদুরীর মাতামহীকে শৃগাল দংশন করিয়াছে, রক্ত পড়িতেছে, তাহা দেখিয়া সাহেব সাতিশয় দুঃখিত হইলেন। সাহেব বলিলেন, — “তুমি আমার সঙ্গে চলো, ভাল ডাক্তার দেখাইয়া তোমার চিকিৎসা করাইব। তুমি আমার প্রাণরক্ষা করিয়াছ, তোমার ঋণ আমি কিছুতেই শুধিতে পারিব না।” আব্দুরীর দিদিমা কিছুতেই সম্মত হইলেন না। তিনি বলিলেন,- “তোমার সহিত সহরে যাইলে, ডাক্তারের ঔষধ খাইলে, আমার জাতি যাইবে । আমি ঘরে লোহা পোড়াইয়া দিব, কলার ভিতর করিয়া সুলতানি বনাত খাইব; তাহা করিলেই ভাল হইয়া যাইব । আমি বৃদ্ধা বিধবা; আমাদের সহজে মৃত্যু হয় না।” সাহেব তাহার পর তাহাকে ছোট একটি চামড়ার থলি অর্থাৎ মণিব্যাগ দিলেন ও বলিলেন,- “তুমি আমার প্রাণরক্ষা করিয়াছ। সে ঋণ ইহাতে শোধ হয় না। তবে আমার নিকট যাহা ছিল, সমস্ত আমি তোমাকে দিলাম। ইহার ভিতর যাহা আছে, তাহা খরচ করিয়া আপনার চিকিৎসা করাইবে।” এই বলিয়া সাহেব প্ৰস্থান করিলেন। বাটী আসিয়া আব্দুরীর আয়ী মণিব্যাগ খুলিয়া ছোট একখানি ছাপার কাগজ রহিয়াছে। টাকা উদ্যত হইলেন। কিন্তু আদুরীর মা যে, তাহার ভিতর পাঁচটি টাকা ও লইয়া তিনি কাগজখানি ফেলিয়া দিতে “মা! কাজগখানি ফেলিও না, এ হয়তো সামান্য কাগজ নয়; সেই যারে বলে । শ্ৰী হয়তো তাই। হটবারদিন হাটে গিয়া গদাধর কাপড়ওয়ালাকে দেখাইবে । এ নোট সে তোমায় বলিয়া দিবে।” হাটবারদিন সমুদায় বৃত্তান্ত আদুরীর দিদিমা গদাধরকে কাগজখানি দেখাইলেন। গদাধর সৎ লোক! গদাধর বলিল,- “এ নোট বটে! একশত টাকার নোট। কিন্তু নোট ভাঙ্গাইতে হইলে বাটা লাগে। এই কাগজখানি লইয়া আমি তোমাকে পাচ কম পাঁচ কুড়ি টাকা দিতে পারি।” কিন্তু তাহাকে তৎক্ষণাৎ কাগজখানি না দিয়া আব্দুরীর দিদিমা আরও পাঁচ জনকে দেখাইলেন। অন্যান্য লোক কেহ চারিটিাকা কম, কেহ তিন টাকা কম, কেহ দুই টাকা কম পাচ কুড়ি টাকা দিতে চাহিল। কিন্তু আব্দুরীর দিদিমা তবুও কাগজখানি কাহাকেও দিলেন না। বাটী ফিরিয়া আসিয়া মেয়েকে বলিলেন, — “এত নগদ টাকা এখন এই আমার ঘা সারিয়া গেলে, আমি ভাল হইলে, চুপি চুপি টাকাগুলি আনিয়া ঘটি করিয়া এক স্থানে পুতিয়া রাখিব। এখন খরচ করিয়া ফেলা হইবে না। সময় আছে, অসময় আছে। অসময়ে কাজে লাগিবে ।” ኳ তাহাই স্থির হইল। আব্দুরীর মাতামহী নোটখানি লুকাইয়া রাখিলেন। কিন্তু কোথায় রাখিলেন, সে কথা কাহাকেও বলিলেন না, মেয়েকেও বলিলেন না। আব্দুরীর দিদিমার জলাতঙ্করোগ ঘটিল না বটে; কিন্তু অল্পদিন পরে জুরবিকার-রোগে সহসা তাঁহার মৃত্যু 9 află cios as se - www.amarboi conf**