পাতা:ত্রৈলোক্যনাথ রচনাসংগ্রহ.djvu/৩৪৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

খাইল। ঘরের ভিতর মেটে দেয়ালের গায়ে পেরেকে বহুদিনের ছোট একখানি আরাসী থাকিত। পান খাইয়া ঠোঁট লাল হইল কি না, তাহা দেখিবার নিমিত্ত পেরেক হইতে আব্দুরী আরসীখানি পাড়িয়া লইল। আরসীখানি হাতে লইয়া, ঠোঁট একটু ফুলাইয়া, মুখ দেখিতে লাগিল। যে দুইএক কোসা চুল এলোথোলোভাবে আশেপাশে পড়িয়াছিল, তাহা সোজা করিয়া দিল । একমনে এইরূপ ভাবন করিতে ব্যস্ত আছে, এমন সময়ে বাহির হইতে মা পুনরায় চীৎকার করিয়া উঠিলেন, — পোড়ারমুখি! আজি তোর কি আর বার হবে না?” “যাই মা! যাই।” —এই কথা বলিয়া আব্দুরী আরসীখানি দেয়ালের গায়ে পেরেকে ঝুলাইতে গেল। দৈবক্রমে আরাসীর সূতা পেরেকে না লাগিয়া, পাশ দিয়া গেল। আরসীখানি তাহার হাত হইতে পড়িয়া চুরমার হইয়া ভাঙ্গিয়া গেল। দুঃখে ও ভয়ে আব্দুরীর মন নিতান্ত কাতর হইয়া পড়িল। বহুদিনের আরসী। এই আরাসীতে তাহার দিদিমা যৌবনকালে মুখ দেখিয়াছিলেন, চুল বঁাধিয়াছিলেন; তাহার মাও তাঁহাই করিয়াছিলেন; আব্দুরী নিজেও বাল্যকাল হইতে এই আরসীতে মুখ দেখিতেছিল। আজ সেই আরসীখানি তাহার অসাবধানতাবশতঃ ভাঙ্গিয়া গেল । মা সহজেই উগ্ৰস্বভাববিশিষ্টা স্ত্রীলোক; কথায় কথায় সৰ্ব্বদা বকিয়া-ঝকিয়া থাকেন। আজ মা যে কত তিরস্কার করিবেন, তাহার ঠিক নাই। খণ্ড খণ্ড হইয়া আরসী ঘরের মেজেতে পড়িয়া রহিল। সেসব কাচের খণ্ড আব্দুরী আর তুলিল না। ভয়বিহবল চিত্তে, শশব্যস্ত হইয়া দধির ভাণ্ড মাথায় লইয়া, সে তাড়াতাড়ি ঘর হইতে বাহির হইল । মা জিজ্ঞাসা করিলেন,- “ঘরের ভিতর ঝণাৎ শব্দ হইল?” আদুরী তাহার উত্তর না দিয়া কেবল বলিল,-দুইশ’ অনেক বেলা হইয়া গিয়াছে।” এই বলিয়া হন-হন করিয়া সে চলিয়া গেল। **** A. খিতে পাইল, তাহাকে সে চিনিতে পারিল না। “এ আর কেহ নয়, এ সেই সীেরভী নাপতিনী,”—এই ভাবিয়া আব্দুরী ঘোর শোকোকুলা হইয়া, সোজা পথ ছাড়িয়া, অপথ ধরিল। কাটা খোঁচা পায়ে ফুটিতে লাগিল; কিন্তু আদুরীর তাহা গ্ৰাহ্য নাই। মনের আবেগে দ্রুতবেগে সে চলিতে লাগিল। সহসা একটা কাটায় বাধিয়া তাহার সেই কালাপেড়ে কাপড়খানি ফালা ফালা হইয়া ছিড়িয়া গেল। বহুকালের সঞ্চিত আরসীখানি ভাঙ্গিল, স্বামী পর হইয়া গেল, বড় সাধের কালাপেড়ে কাপড় ছিড়িয়া নষ্ট হইল!—আব্দুরীর আর দুঃখের সীমা রহিল না। নিকটে একটি ছোট পুষ্করিণী ছিল। সেই পুষ্করিণীর ধারে, এক নিৰ্জ্জন গাছতলায়, দধির ভাণ্ডটি মাথা হইতে নামাইয়া সে ভূমিতে রাখিল। তাহার পর বামহাতের উপর গণ্ডদেশ রাখিয়া বসিয়া বসিয়া নীরবে সে কাদিতে লাগিল। দরিদর ধারায় চক্ষের জল তাহার হাত বাহিয়া পড়িতে লাগিল। বিপদের উপর বিপদ!! এমন সময় কোথা হইতে একটা কুকুর আসিয়া সেই দধিভাণ্ডের ভিতর মুখ প্রবিষ্ট করিয়া দধি খাইতে চেষ্টা করিল। দধিভাণ্ড গড়াইয়া পুষ্করিণীর ভিতর পড়িল! আর কিছু বাকি রহিল না! দুৰ্ভাগ্য একেবারে চরম সীমায় উঠিল! “হে ঠাকুর! আমার উপর আজ কেন এত লাগিয়াছ?”-এই বলিয়া আব্দুরী আরও অনেকক্ষণ ধরিয়া সেই স্থানে বসিয়া w°)\5ዕbr află cios as se - www.amarboi conf**