পাতা:ত্রৈলোক্যনাথ রচনাসংগ্রহ.djvu/৩৫৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

চুল স্কন্ধের উপর আসিয়া পড়িয়াছিল। দীর্ঘকেশ-সম্বলিত মস্তক নাড়িয়া যখন দুই ভ্রাতার কথাবাৰ্ত্ত হইত, তখন কাহার পাষাণ মন সে রমণীয় দৃশ্যে ও সে সুধামাখা স্বরে দ্রবীভূত না হইত? হইত না কেবল বিমাতার, আর হইত না স্ত্রীচরণপরায়ণ পিতাঠাকুরের। মাতৃহীন বালক দুইটির সকল গুণই ছিল। দোষের মধ্যে ছিল কেবল বয়সগুণে অস্থিরতা, দৌড়াদৌড়ি ও দুরন্তাপনা। ফলকথা, শিশু দুইটির রূপ-গুণ দিন দিন যতই বিকসিত হইতে লাগিল, বিমাতার মনে হিংসা-দ্বেষও ততই প্রবল হইতে লাগিল। কিন্তু জোন সাহেব তাহাদিগকে বড়ই স্নেহ করিতেন, তাহদের দুরন্তপন্যা তিনি ভালবাসিতেন, তাহাদের সহিত তিনি নিজে ছুটাছুটি করিতেন। নীলের হাউজ হইতে শিশু দুইটি যখন তাঁহার দুগ্ধফেননিভ। ধবল বসন কৃষ্ণবর্ণে রঞ্জিত করিয়া দিত, তখন রাগ করা দূরে থাকুক, আদরে তিনি তাহাদিগকে বুকে করিয়া লাইতেন। জুতা, মোজা ও ভাল পরিচ্ছদ জোন সাহেব তাহাদিগকে সৰ্ব্বদাই কিনিয়া দিতেন। শিশু দুইটির আর একজন সহায় ছিলেন। আমার পতি পাড়ে তাহাদিগকে প্রাণ অপেক্ষা ভালবাসিতেন। ভাল মাছ, দুধের সর, ঘরে যাহা কিছু উপাদেয় বস্তু প্ৰস্তুত হইত, লুকাইয়া তিনি তাহাদিগকে তাহা আহার করিতে দিতেন! আরও দুই বৎসর কাটিয়া গেল। লব-কুশির বয়স সাত বৎসর হইল। এই সময়ে গদর পড়িল, অর্থাৎ সিপাহী-বিদ্রোহ উপস্থিত হইল। দেশে অরাজকতার আর সীমা-পরিসীমা রহিল। না। গৃহদাহ, লুটপাট, মারপিট, চুরি-ডাকাতি, খুন-খারাবি চারিদিকেই চলিতে লাগিল । বিদ্রোহিগণ ঘোর নিষ্ঠুরতাসহকারে সাহেবদিগকে বধ কুরিতে লাগিল। বাঙ্গালীরা ইংরেজের গুরু, এই বলিয়া বাবুদের প্রতিও অত্যাচার কম হইলন্তী” নানাসাহেবের প্রধানমন্ত্রী আজিমুল্লা বাবুদের ডাকিয়া বলিল,- “তোমরা আমাদের অধীনে চাকুরী করা।” বাবুরা তাহাতে সম্মত டிகி দিবার হুকুম হইল। কিন্তু সৌভাগ্যক্রমে বঁলিলেন, — “বাবু। এ-স্থানে আর আমার থাকা উচিত। ফিলিবে। আপাততঃ কানপুরে গিয়া আশ্ৰয় লইব । আমার অনুপস্থিতিতে তুমি যথারীতি কুঠির কৰ্ম্ম চালাইবে। যদি জীবিত থাকি, তাহা হইলে পুনরায় সাক্ষাৎ হইবে।” এই বলিয়া গোবিন্দবাবুর হস্তে সমস্ত কাৰ্য্যের ভার দিয়া সাহেব প্ৰস্থান করিলেন। নিকটস্থ গ্রামবাসীদিগের জোন সাহেব বাপ-মা ছিলেন। দয়া-মায়া, পরোপকারে তিনি দেবত্বভাববিশিষ্ট ব্যক্তি ছিলেন। জোন সাহেব তাহাদিগকে ছাড়িয়া যাইবেন, এই অশুভ সংবাদে চারিদিকে হাহাকার পড়িয়া গেল। শত শত লোক আসিয়া যোড়হন্তে জোন সাহেবকে বলিল,- “মহাশয়! আপনি আমাদিগকে ছাড়িয়া যাইবেন না, আপনার নিমিত্ত আমরা সকলে প্ৰাণ দিব।” কিন্তু সে ঘোরতর বিপ্লবের সময় জোন সাহেব সে স্থানে থাকা উচিত বোধ করিলেন না। বাবুর হাতে সকল কৰ্ম্মের ভার দিয়া তিনি প্ৰস্থান করিলেন। জোন সাহেব একবার বিলাতে গিয়া বিবাহ করিয়াছিলেন; কিন্তু অল্পদিন পরেই তাঁহার গৃহ শূন্য হইয়াছিল। আর তিনি বিবাহ করেন নাই । জোন সাহেব চলিয়া গেলে, দুই দিবস পরেই বদমায়েসেরা সাহেবের বাঙ্গলা জ্বালাইয়া দিল। গোবিন্দবাবুর ঘর লুটপাট করিল। তাঁহাকে খুঁটিতে বঁধিয়া বিলক্ষণ প্রহার করিল। তাহার স্ত্রীর গায়ে যাহা কিছু গহনা-পত্র ছিল, সে সমস্তই কড়িয়া লইল । পুনরায় আসিয়া

  • I3.j-wթ7 sNAls viði (SS BS! ro www.amarboi.com ro w8s