পাতা:ত্রৈলোক্যনাথ রচনাসংগ্রহ.djvu/৩৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

মাঝে খেতু কেবল একটু-আধটু বসিয়া বলিয়া দিতেন।

 কঙ্কাবতী পড়িতে বড় ভালবাসিতেন। কলিকাতা হইতে খেতু, তাহাকে নানারূপ পুস্তক ও সংবাদপত্র পাঠাইয়া দিতেন। সংবাদপত্রের বিজ্ঞাপনগুলি পর্যন্ত কঙ্কাবতী পড়িতেন।


দশম পরিচ্ছেদ

বৌ-দিদি

তের বৎসর বয়সে খেতু ইংরেজীতে প্রথম পাসটি দিলেন। পাস দিয়া তিনি জলপানি পাইলেন। জলপানি পাইয়া মা'র নিকট তিনি একটি ঝি নিযুক্ত করিয়া দিলেন। মা বৃদ্ধ হইতেছেন, মা'র যেন কোনও কষ্ট না হয়। এটি সেটি আনিয়া, কাপড়খানি চোপড়খানি কিনিয়া, রামহরির সংসারেও তিনি সহায়তা করিতে লাগিলেন।

 পনের বৎসর বয়সে খেতু আর একটি পাশ দিলেন। জলপানি বাড়িল। সতর বৎসর বয়সে আর একটি পাস দিলেন। জলপানি আরও বাড়িল।

 খেতু টাকা পাইতে লাগিলেন, সেই টাকা দিয়া মা'র দুঃখ সম্পূর্ণরূপে ঘুচাইলেন। মা যখন যাহা চান, তৎক্ষণাৎ তাহা পান। তাঁহার আর কিছুমাত্র অভাব রহিল না।

 শিবপূজা করিবেন বলিয়া খেতুর মা একদিন ফুল পান নাই। তাহা শুনিয়া খেতু বাড়ির নিকট একটি চমৎকার ফুলের বাগান করিলেন। কোলকাতা হইতে কত গাছ লইয়া সেই বাগানে পুতিলেন। নানা রঙের ফুলে বাগানটি বার মাস আলো করা থাকিত।

 রামহরির কন্যা সীতার এখন সাত বৎসর বয়স। মা একেলা থাকেন, সেইজন্য দাদাকে বলিয়া, খেতু সীতাকে মা'র নিকট পাঠাইয়া দিলেন। সীতাকে পাইয়া খেতুর মা'র আর আনন্দের অবধি নাই।

 কঙ্কাবতীও সীতাকে খুব ভালবাসিতেন। বৈকালবেলা দুই জনে গিয়া বাগানে বসিতেন। কঙ্কাবতী এখন খেতুর সম্মুখে বড় বাহির হন না। খেতুকে দেখিলে কঙ্কাবতীর এখন লজ্জা করে। তবে খেতুর গল্প করিতে, খেতুর গল্প শুনিতে তিনি ভালবাসিতেন। অন্য লোকের সহিত খেতুর গল্প করিতে, কিংবা অন্য লোকের মুখে খেতুর কথা শুনিতে, তার লজ্জা করিত। এসব কথা সীতায় সহিত হইত। বৈকালবেলা দুই জনে ফুলের বাগানে যাইতেন। নানা ফুলে মালা গাঁথিয়া কঙ্কাবতী সীতাকে সাজাইতেন। ফুল দিয়া নানারূপ গহনা গড়িতেন। গলায়, হাতে, মাথায়, যেখানে যাহা ধরিত, কঙ্কাবতী সীতাকে ফুলের গহনা পরাইতেন। তাহার পর সীতার মুখ হইতে বসিয়া বসিয়া খেতুর কথা শুনিতেন।

 নিরঞ্জন কাকাকে খেতু ভুলিয়া যান নাই। যখন খেতু বাটী আসেন, তখন নিরঞ্জন কাকার জন্য কিছু না কিছু লইয়া আসেন। নিরঞ্জন ও নিরঞ্জনের স্ত্রী তাঁহাকে বিধিমতে আশীর্ব্বাদ করেন।

 কঙ্কাবতী বড় হইলে, খেতু তাঁহাকে পুস্তক ও সংবাদপত্র ব্যতীত আরও নানা দ্রব্য দিতেন। আজকাল বালিকাদিগের নিমিত্ত যেরূপ শেমিজ প্রভৃতি পরিচ্ছদ প্রচলিত হইয়াছে, কঙ্কাবতীর নিমিত্ত কলিকাতা হইতে খেতু তাহা লইয়া যাইতেন।

২৪
ত্রৈলোক্যনাথ রচনাসংগ্রহ