পাতা:ত্রৈলোক্যনাথ রচনাসংগ্রহ.djvu/৩৬০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

কুশি উত্তর করিল,— “না পাড়েনী, আমি আর বলিব না। সে কূপের ভিতর গৰ্ত্ত আছে। সে গৰ্ত্তের ভিতর রামদীন কখন কখন শুইয়া থাকে। তাহার ভিতর রামদীনের টাকা আছে। বলিতে সে মানা করিয়াছিল। যদি বলি, সে আমাকে কাটিয়া ফেলিবে ।” যাহা হউক, ছেলে দুইটিকে ভুলাইয়া আমি সকল কথা বাহির করিলাম। বুঝিলাম যে, আমাদের বাড়ী হইতে অল্পদূরে যে একটি বাগান আছে, আর সেই বাগানের ভিতর যে এক পুরাতন অন্ধকূপ আছে, রামদীন সেই কৃপা হইতে কপোতশাবক ধরিয়া দিয়াছিল। আরও বুঝিলাম যে, সিপাহীরা বিদ্রোহী হইয়া যখন সরকারী খাজনাখানা লুঠ করে ও পথে মাঠে টাকা সংগ্ৰহ করে, আর সেই টাকা কূপের ভিতর সে লুকাইয়া রাখিয়াছে। পরদিন আমি রামদীনকে মিনতি করিয়া বলিলাম,- “বাবা! অনাথ শিশু দুইটি আমাদের আশ্রয়ে আসিয়াছে। তাহাদিগকে প্রাচীন অন্ধকূপের নিকট লইয়া যাওয়া কি ভাল? কোনদিন পড়িয়া গিয়া শেষে কি তাহারা প্ৰাণ হারাইবে।” “তোমাকে বলিয়া দিয়াছে, বটে!” এই কথা বলিতে বলিতে রামদীন গজগজ করিতে করিতে চলিয়া গেল । চারি-পাচ দিন গত হইয়া গেল। একদিন অপরাহ তিনটার সময়, যে বাগানে সেই অন্ধকৃপ আছে, ছেলে দুইটি সেই বাগানে খেলা করিতেছিল। কুশি সেদিন আমার নিকট হইতে আর একবার কাঁসি চাহিয়া লইয়াছিল। নিকটে সেই বাগানের বাহিরে, আমি গরু দুইটি ছাড়িয়া দিয়া, পাছে কাহারও ক্ষেতে পড়ে, এ মিনিত্ত চৌকি দিয়া বসিয়াছিলাম। ওদিকে কুশি কাঁসি বাজাইতেছিল । সেই শব্দ শুনিয়া ছেলেদের জন্য ছিলাম। কিছুক্ষণ পরে সহসা কাঁশির শব্দ বন্ধ হইয়া গেল। “লব তুমি পাব্লিবের্না, আমি নামি,” এই কয়টি কথা সহসা আমার কর্ণকুহরে প্রবেশ করিল। এই কয়টি ব্যু”শুনিয়া আমি তাড়াতাড়ি উঠিয়া দাঁড়াইলাম। দাঁড়াইয়া সেই প্রাচীন কৃপের দিকে দেখিলাম। দেখিলাম যে, লব উপরে দাড়াইয়া আছে, আর সর্বনাশ! একটি টুর্গমাথা কৃপের ভিতর নামিতেছে। সেই মুহূৰ্ত্তে ঝাঁকড়ামাথাটি কূপের ভিতর অদৃশ্য হইয়া গেল। “ও মা! এ কি সৰ্ব্বনাশ হইল,” “কে কোথায় আছ, শীঘ এস,”- এইরূপ চীৎকার করিতে করিতে আমি কূপের দিকে উৰ্দ্ধশ্বাসে দীেড়িলাম। কুপের নিকট আসিয়া লবকে জিজ্ঞাসা করিলাম,- “লব! লব! কুশি কই?” লব উত্তর করিল,— “তোমার কঁসিখানি কৃপের ভিতর পড়িয়া গিয়াছে, কুশি তাহা তুলিয়া আনিতে কূপের ভিতর নামিয়াছে। পাতকোর ভিতর আমি উকি মারিয়া দেখিলাম, কিন্তু কুশিকে দেখিতে পাইলাম না। আমি তাড়াতাড়ি কূপের ভিতর নামিতে চেষ্টা করিলাম; কিছুতেই নামিতে পারিলাম না। পুনরায় উপরে আসিয়া কূপের ভিতর মুখ করিয়া,- “কুশি! কুশি!” করিয়া বার বার চীৎকার করিতে লাগিলাম। আমি কত ডাকিলাম, লব কত ডাকিল; কিন্তু কোন উত্তর নাই; কোন সাড়াশব্দ নাই। ঘোরতর বিপদ যে ঘটিয়াছে, তখন তাহা নিশ্চয় বুঝিতে পারিলাম। উচ্চৈঃস্বরে কাঁদিতে কাঁদিতে লোক ডাকিতে লাগিলাম। কিন্তু সে মাঠের মাঝখানে কাহারও সাড়া পাইলাম না, জনপ্ৰাণী কেহ আসিল না। তখন আমি লবকে বলিলাম,- “তুমি শীঘ্ৰ নবাবগঞ্জে গিয়া খবর দাও। দুই-চারি জন পুরুষমানুষ, যাহাকে দেখিতে পাও, তাহাকে ডাকিয়া আন । আমি কূপের ধারে দাঁড়াইয়া থাকি।” voርኵS দুনিয়ার পাঠক এক হও! ~ www.amarboi.comৰ্ম্মিািন্টন/*********