পাতা:ত্রৈলোক্যনাথ রচনাসংগ্রহ.djvu/৪০০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

পাঠাইয়া দিবে। পায়ে বেড়ি দিয়া আমাকে সেই জেলখানায় রাখিয়া দিবে। তারকেশ্বরের মোহান্তকে যেরূপ করিতে হইয়াছিল, আমাকেও সেইরূপ করিতে হইবে। হাঁটু পৰ্যন্ত ইজের পরিয়া আমাকে ফুলগাছে জল দিতে হইবে, পাথর ভাঙ্গিতে হইবে, ঘানিগাছে সরিষা হইতে তেল বাহির করিতে হইবে। কালীঘাটে মোহান্তর পট কিনিয়াছিলাম, তাহাতে এইসব দেখিয়াছি। কি লজ্জার কথা— কি ঘূণার কথা! এ বৃদ্ধবয়সে আমি কি করিয়া ইজের পরিব, সে সব কাজ কি করিয়া করিব?” গোপীবাবু বলিলেন, “না, মা! তোমার সে সব ভয় নাই।” মাতা বলিলেন, — “পুলিশে যদি একথা জানিতে না পারে, তাহা হইলে আমি নিজে গিয়া ধরা দিব। আহা! আমার পাপের জন্য সে ব্ৰাহ্মণের ছেলের কত না লাঞ্ছনা হইয়াছে! শুনিতেছি, সে মর-মর হইয়াছে। আজ সাত বৎসরের কথা হইল বটে, কিন্তু সেইদিন হইতে সে কখন সুখী হয় নাই। সেই অপমান সে কখনও ভুলিতে পারে নাই। সেই মনস্তাপে অবশেষে তাহার এই উৎকট রোগ হইয়াছে। আমার এই পাপের জন্য পুলিশে আমি নিজে গিয়া ধরা দিব। তারপর, না হয় গলায় দড়ি দিয়া, কি আফিম খাইয়া মরিব । কিন্তু ধৰ্ম্ম জানেন, আমি জানিয়া শুনিয়া একাজ করি নাই! তাড়াতাড়ি যখন চট সব গুটািইয়া লইলাম, সেই সঙ্গে বোধ হয়, এই কাল বাক্সটাও গুটাইয়া লইয়াছিলাম। যতক্ষণ দালানে ছিলাম, ততক্ষণ তক্তপোষের উপর বাক্স দেখিয়াছিলাম। বাক্স যে সেইখানেই ছিল, সে সময় নিশ্চয় তাহাই আমার মনে হইয়াছিল। তাই বুলিয়াছিলাম যে, যখন আমি বাড়ীর ভিতর আসি, তখনও তক্তপোষের উপর বাক্স দেখ্রিয়ান্ট)ত নরকেও আমার স্থান হইবে না। কিন্তু ভগবান ਝ এ মিথ্যা কথা বলি নাই।” আহাদী বলিল,— “আমিও তো সেই কুণ্ডবিলিয়াছিলাম। অত শত কে জানে বাপু! দালানে গিয়া তক্তপোষের উপর মোহরের বাক্স-স্ট্রেখিলাম!! আমরা তাড়াতাড়ি বাড়ীর ভিতর আসিলাম । তুমি বাছা যে চটের সঙ্গে বাক্স গুটািইয়া আনিবে, আমি কি করিয়া জানিব? আমি ভাবিয়ছিলাম যে, বাক্স সেইখানেই রহিল, এই মনে করিয়া আমিও সেই কথা বলিয়াছিলাম। আমারও কত পাপ হইয়াছে!” এই কথা বলিয়া আহন্দী কাঁদিতে লাগিল । মাতা বলিলেন, “গোপী! সেই সময়ে গিরিশের নামে নালিশ করিতে আমি তোমাকে নিষেধ করিয়াছিলাম। তুমি আমার কথা শুনা নাই। মাধব চক্ৰবৰ্ত্তাঁকে ছাড়াইয়া দিতে মানা করিয়াছিলাম। তুমি আমার কথা রাখ নাই। তাহার পর গিরিশের প্রতি শক্রিতা করিতেও নিষেধ করিয়াছিলাম। সে কথাও তুমি আমার রক্ষা কর নাই। বিনাদোষে সেই ব্ৰাহ্মণের ছেলের প্রতি তুমি ঘোরতর অত্যাচার করিয়াছ। সেই পাপে একদিনে তোমার চাঁদের মত দুইটি ছেলে গিয়াছে। সেই পাপে আমার শ্বশুরের বংশ নিৰ্ব্বংশ হইয়া গেল, একগণ্ডুষ জল দিতে আর কেহ। द्रशिक्ल न!' গোপীবাবু বলিলেন,- “আমি নিশ্চয় বুঝিয়াছিলাম যে, গিরিশ আমার মোহর চুরি করিয়াছে, তাই একাজ করিয়াছিলাম। আর মা, আমাকে ভৎসনা করিও না। সেই সব কথা মনে করিয়া আমার বুক ফাটিয়া যাইতেছে।” মাতা বলিলেন, — “এখন তোমাকে একটি কথা বলি, শুন । নিশ্চয় ইহা মাতৃ-আজ্ঞা বলিয়া জানিও। যদি এবার আমার কথা না রক্ষা কর, তাহা হইলে ভগবানকে সাক্ষী করিয়া বলিতেছি। S দুনিয়ার পাঠক এক হও! ~ www.amarboicon-3-