পাতা:ত্রৈলোক্যনাথ রচনাসংগ্রহ.djvu/৪১০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

এক বালিকাকে নিদ্রাবস্তায় দর্শন করা,-সে এক আশ্চৰ্য্য কথা। তাহার পর সেই স্বপ্নের বালিকাকে শরীরী-অবস্থায় দর্শন করা,-সে এক আশ্চৰ্য্য কথা। অবশেষে তাহার হাতের আংটি আমার হাতে উড়িয়া আসা, ইহা অপেক্ষা আশ্চর্য্যের বিষয় আর কি হইতে পারে? সত্য-সত্য কি এই ব্যাপারে কোন দেব, দানব, ভূত, প্ৰেত, অথবা জিন, পরী দ্বারা সংঘটিত হারাধন এইরূপ ভাবিতে লাগিলেন। তাহার বুকের ভিতর “গুর-গুর” করিতে লাগিল। তাহার মনে আতঙ্ক হইল। আংটির প্রতি তিনি সাবধানে দৃষ্টিপাত করিলেন,-দেখিলেন, তাহা সোনার নহে, রূপা নহে, তামার নহে, পারদের নহে, অষ্টধাতুর নহে, কোন প্রকার জ্ঞাতপরিচিত দ্রব্য দ্বারা সে আংটি গঠিত নহে। সে অপূৰ্ব্ব অলৌকিক আংটি। হারাধন আংটির প্রতি আরও সাবধানে নিরীক্ষণ করিয়া দেখিলেন। আশ্চৰ্য্য! শুভ্ৰবর্ণের সামান্য সেই রেখা-প্ৰায় আংটির ভিতর একজন ভীষণ কৃষ্ণকায় বীর অবিরত তলোয়ার ঘুরাইতেছে, এইরূপ তিনি দেখিতে পাইলেন। ভয়-বিহবল হইয়া হাত হইতে আংটি খুলিয়া ফেলিতে চেষ্টা করিলেন। অনেক টানাটানি করিয়া কিছুতেই খুলিতে পারিলেন না। হারাধনের মন নিতান্ত উতলা হইয়া উঠিল। যত মনে করেন, এখন আর আমি আংটির দিকে চাহিয়া দেখিব না, ততই মন সেইদিকে ধাবিত হয়, ঘুরিয়া-ফিরিয়া চক্ষু সেই আংটির দিকে গিয়া পড়ে। আংটির দিকে চক্ষু পড়িলেই তাঁহার হৃৎকম্প উপস্থিত হয়। হারাধন পাগলের ন্যায় হইলেন। “হাত হইতে আংটি না খুলিলে, হয় পাগল হইয়া যাইব, না হয় মরিয়া যাইব,ং তাঁহার মনে এইরূপ ধারণা হইল। গাড়ী করিয়া দ্রুতবেগে হারাধন গৃহে প্ৰত্যাগমন । বাটী আসিয়া প্ৰথমে অঙ্গুলিতে তৈল মর্দন করিয়া অঙ্গুরীয় খুলিতে চেষ্টা করলেনঃ “অঙ্গুরী কিছুতেই বাহির হইল না। তাহার পর সাবানের জল দিয়া চেষ্টা করিলেন । একটুও সরিল না, বরং টানাটানিতে অঙ্গুলি ফুলিয়া আংটি আরও গভীরভাবে । সুতরাং মানসিক ভয় ব্যতীত এখন শারীরিক যন্ত্রণাও উপস্থিত হইল। “সহসা এ পদে পড়িলাম! এমন বিপদে কেহ তো কখন পড়ে না।” হারাধন এইরূপ ভাবিতে রাত্রি হইল। বালিকার মধুর মুখখানি সৰ্ব্বদাই তিনি মানস-চক্ষে দর্শন করিতে লাগিলেন। অন্য চিন্তা তাঁহার মনে স্থান পাইল না, সৰ্ব্বদাই কেবল সেই বালিকার চিন্তা। এ চিন্তায় আনন্দ ছিল বটে, কিন্তু অন্যদিকে আংটির চিন্তায় তিনি আকুল হইয়া পড়িলেন। আংটির প্রতি যখনই চাহিয়া দেখেন, তখনই সেই খড়গধারী বীরকে তাহার ভিতর দর্শন করেন। “হায়, আমার এ কি হইল! যাহাকে তিন বৎসর একমনে ধ্যান করিতেছিলাম, আজ তাহার দর্শন পাইয়া কোথায় আনন্দসাগরে ভাসমান হইব, না। আমি ভৌতিক অঙ্গুরীয়ের জ্বালায় অস্থির হইলাম!” ভয়ে ও চিন্তায় সে রাত্রিতে হারাধনের কিছুমাত্র নিদ্রা হইল না। বিছানায় পড়িয়া তিনি ছটুফটু করিতে লাগিলেন। পরদিন প্ৰাতঃকালে উঠিয়া তিনি প্ৰথমে স্বর্ণকারের বাটীতে গমন করিলেন। স্বর্ণকার চিমটাি, হাতুড়ী ও নানাবিধ যন্ত্ৰ দিয়া অঙ্গুরীয় খুলিতে চেষ্টা করিল; কিন্তু কিছুতেই কৃতকাৰ্য হইতে পারিল না। অবশেষে উকা দিয়া কাটিয়া ফেলিতে চেষ্টা করিল। কিন্তু উকা ঘর্ষণে আংটির গায়ে বিন্দুমাত্র দাগও পড়িল না। এ আংটির তুলনায় হীরক বরং কোমল, স্বর্ণকারের এইরূপ বোধ হইল। আংটি খুলিয়া কি কাটিয়া ফেলিতে কৰ্ম্মকারগণও বিধিমত চেষ্টা করিল, কিন্তু কিছুতেই কিছু হইল না। অবশেষে হারাধন রাসায়নিক পণ্ডিতদিগের নিকট গমন করিলেন। নানাপ্রকার 8OS দুনিয়ার পাঠক এক হও! ~ w.amarboi.com%"o