পাতা:ত্রৈলোক্যনাথ রচনাসংগ্রহ.djvu/৪১৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

আংটিাবীরকে দেখিলাম। দেখিয়া, আমি বড় ভয় পাইলাম। কিন্তু আংটিাবীর অতি ব্যস্তভাবে হাত তুলিয়া— যাও, যাও, শীঘ্ৰ যাও!” আমাকে এইরূপ আদেশ করিলেন। তাঁহার কথার শব্দ আমি শুনি নাই, তবে তাঁহার মুখের ভাবে আমি বুঝিলাম যে, তিনি আমাকে এইরূপ আদেশ করিতেছেন। তাহার পর কি হইল, আমি কোথায় যাইলাম, কি করিলাম, সে বিষয় আমি কিছুমাত্ৰ জানি না, আমার কিছুমাত্ৰ মনে নাই।” আংটিাবীরের আদেশ পাইয়া বিমলা এলোথোলো বেশে পাগলিনীর প্রায় হইয়া দাঁড়াইল । চুল বঁধিবার সাজসজ্জা ও আবুলী সেই স্থানে পড়িয়া রহিল। তখন সন্ধ্যা হইয়া আসিয়াছে। রুদ্ধশ্বাসে দ্রুতবেগে সে বাড়ী হইতে বাহির হইল । ঘটনাচক্ৰে কাহারও সহিত তাহার সাক্ষাৎ হইল না, কেহ তাহাকে নিবারণ করিল না। নিশি-ভূতে মানুষকে রাত্রিকালে ঘর হইতে বাহির করিয়া অজ্ঞান অবস্থায় যেরূপ নানাস্থানে লইয়া যায়, বিমলাকে লইয়া আংটিাবীরও সেইরূপ করিল। অজ্ঞাত অপরিচিত পথে বিমলা দ্রুতবেগে চলিতে লাগিল। অজ্ঞান অবস্থায় পাঁচ-ছয় ক্রোশ পথ চলিয়া অবশেষে ঘোর রাত্রে সেই অপরিচিত শ্মশানভূমিতে আসিয়া সে উপস্থিত। হইল। চিতায় যখন সবেমাত্র আগুন ধরিয়াছে, চিতার অধোদেশ হইতে যখন অগ্নিশিখা উঠিতেছে, ঠিক সেই মুহুৰ্ত্তে বিমলা আসিয়া শ্মশানে উপস্থিত হইল। নিতান্ত উতলা হইয়া, হাত তুলিয়া, বিমলা বলিল,— “রও! অগ্নি শীঘ্ৰ নিৰ্ব্বাণ কর।” সেই ঘোর নিশীথে, সেই শ্মশানভূমিতে, সহসা চিতায় পার্শ্বে এক রূপবতী যুবতীকে দেখিয়া, সকলেই ভয়ে ভীত হইলেন। কিন্তু কাহারও সাহসী হইল না । একজন হাতযোড় করিয়া সতয়ে জিজ্ঞাসা করিলেন, — “মা, তুমিষ্টকে, তা বল।” নিতান্ত উতলা হইয়া বিমলা বলিল,- নিৰ্ব্বাণ করা। চিতা হইতে শীঘ্ৰ ইহাকে বাহির করা। ইনি মরেন নাই, ইনি জীবিত |” এই কথা বলিয়া বিমলা নিজে চিতা হইতে জুলন্ত কাষ্ঠ লইয়া দূরে নিক্ষেপ্তষ্করিতে লাগিল। তখন আর সকলেও তাড়াতাড়ি অগ্নি নিৰ্ব্বাণ করিয়া ফেলিলেন ও হাঃ দেহ ভিতর হইতে বাহির করিয়া মাটিতে শায়িত করিলেন। ভাগ্যে অগ্নি তখনও চিতার উপর দিকে যায় নাই। নতুবা হারাধনের দেহ নিশ্চিত কিছু না কিছু পুড়িয়া যাইত। যাহা হউক, হারাধনের দেহে অগ্নি স্পর্শ পৰ্যন্ত করে নাই। বিমলা ধীরে ধীরে হারাধনের নিকট গিয়া বসিল, ধীরে ধীরে তাঁহার অঙ্গুলি হইতে আংটি খুলিয়া লাইল। যে অঙ্গুরীয় স্বর্ণকার, কৰ্ম্মকার প্রভৃতি কত লোক কত টানাটানি করিয়াও খুলিতে পারে নাই, আজ বিমলা একটু ছুইবামাত্র সেই আংটি খুস করিয়া খুলিয়া আসিল। কিন্তু সেই সময় হইতে আংটি যে কোথায় গেল, তাহার কিছু ঠিক নাই। তখন হইতে সে আংটি আর কেহ দেখে নাই। বিমলা যেই আংটি খুলিয়া লইল, আর সেই মুহুৰ্ত্তে হারাধন একটি নিশ্বাস পরিত্যাগ করিলেন। তাঁহার শ্বাস-প্ৰশ্বাস প্রবাহিত হইতে লাগিল, তাঁহার হৃৎপিণ্ডের কার্য্য পুনরায় আরম্ভ হইল। একবার তিনি চক্ষু চাহিয়া দেখিলেন, কিন্তু পুনরায় তৎক্ষণাৎ চক্ষু মুদিত করিলেন। তাহার জ্ঞান কিন্তু এখনও হইল না। “হারাধন!! হারাধন!! করিয়া সকলে উচ্চৈঃস্বরে ডাকিতে লাগিলেন, কিন্তু তিনি উত্তর করিলেন না। যাহা হউক, সকলে এখন বুঝিতে পারিলেন যে, হারাধন পুনরায় জীবনলাভ করিয়াছেন। কিন্তু আশ্চর্য্যের কথা এই যে, যে মুহূৰ্ত্তে বিমলা হারাধনের অঙ্গুলি হইতে অঙ্গরীয় খুলিয়া লইল, সেই মুহূৰ্ত্তে আংটি তাহার হাত হইতে অন্তৰ্হিত হইয়া গেল, আর সেই মুহূৰ্ত্তে বিমলাও মূৰ্ছিত হইয়া ভূতলে পতিত হইল। মুখে-হাতে জল দিয়া সকলে তাহার চেতনা করিতে চেষ্টা "3cr দুনিয়ার পাঠক এক হও! ~ www.amarboicom.5°