পাতা:ত্রৈলোক্যনাথ রচনাসংগ্রহ.djvu/৪৩২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

গৌরীশঙ্করকে শবের পৃষ্ঠ হইতে উত্তোলন করিতে চেষ্টা করিল, কিন্তু তাঁহাকে উঠাইতে পারিল না। দৃঢ় বীরাসনে তিনি শবের পৃষ্ঠে বসিয়া রহিলেন। দন্ত কিডুমিড় করিয়া, হুহুঙ্কার শব্দ করিয়া মড়া উঠিতে চেষ্টা করিল। কিন্তু তাহার পদদ্বয় পাটের দড়ি দ্বারা বাধা ছিল। নিজের দুই পা দিয়া গৌরীশঙ্কর তাহার হাত দুইটা মাটিতে চাপিয়া রাখিলেন। শিব উঠিতে পারিল না। এই সময় আকাশে মাঝে মাঝে উল্কাপাত হইতে লাগিল। মাঝে মাঝে বিদুৎ খেলিতে লাগিল; ঘোর বজ্ৰ-শব্দে কৰ্ণে তালি লাগিতে লাগিল। এই সমস্ত উপদ্রবে। গৌরীশঙ্কর কিছুমাত্র ভীত হইলেন। না। শবের উপর বসিয়া একান্ত মনে তিনি জপ করিতে লাগিলেন। বায়ুবেগে মেঘ ক্ৰমে দূরীভূত হইল, আকাশ পরিষ্কার হইল; পৃথিবী ক্ষণকালের নিমিত্ত স্থির হইল। এমন সময় সহসা একদিক হইতে বন্য শূকরের পাল আসিয়া দন্ত দ্বারা গৌরীশঙ্করকে বিদ্ধ করিবার নিমিত্ত ধাবিত হইল। সহসা এই বিপদ দেখিয়া, ক্ষণকালের নিমিত্ত তিনি চমকিত হইলেন। কিন্তু পরীক্ষণেই চক্ষু মুদিত করিয়া, তিনি জপে প্ৰবৃত্ত হইলেন। বন্য শূকর অদৃশ্য হইয়া পড়িল। পৃথিবী আর একবার নিস্তব্ধ হইল। তাহার পর, সহসা অতি নিকটে ব্যাঘের ভীষণ গৰ্জ্জন শ্ৰবণ করিয়া গৌরীশঙ্কর একবার চাহিয়া দেখিলেন। দেখিলেন যে, এক প্ৰকাণ্ড ব্যাঘ তাহার কারাল বদন ব্যাদান করিয়া, তাঁহাকে গ্ৰাস করিতে আসিতেছে। গ্ৰাস করে আর কি! সহসা ভীত হইয়া, গৌরীশঙ্কর পলায়নের উপক্ৰম করিলেন। কিন্তু সে চিন্তা নিমেষের নিমিত্ত তাহার মনে উদয় হইয়াছিল। মনকে দৃঢ় করিয়া চক্ষু মুদিত করিয়া, পুনরায় তিনি জপে প্ৰবৃত্ত হইলেন। ব্যাঘ চলিয়া গেল। তাহার পর গৌরীশঙ্করের চারিদিকে অসুংখ্য কাল-সৰ্প আসিয়া ফৌশ ফোশ করিতে লাগিল। কিন্তু এবারও তিনি চক্ষু চাহিয়া না, সে নিমিত্ত ভয়ও পাইলেন না। হাসির শব্দ হইল। সেরূপ বিকট হাসি প্ৰাণ কাঁপিয়া উঠিল। কিন্তু তৎক্ষণাৎ স্থির করিলেন। তাহার পরীক্ষণেই পালে আসিয়া তাঁহার চারিদিকে নৃত্য করিতে লাগিল। নৃত্য করিতে করিতে মাঝে মাঝে এরূপ বিকট শব্দ করিতে লাগিল যে, সে শব্দ শুনিলে কোন মনুষ্যই চেতন অবস্থায় থাকিতে পারে না। পুনরায় আর একবার পলায়ন করিবার নিমিত্ত গৌরীশঙ্করের মন হইল। কিন্তু পরীক্ষণেই তিনি মনকে দৃঢ় করিতে সমর্থ হইলেন। চক্ষু মুদিত করিয়া তিনি একান্ত মনে জপ করিতে লাগিলেন। গৌরীশঙ্কর ভাবিলেন যে,- “ভূত-প্রেত কখন দেখি নাই, একবার চাহিয়া দেখি, ভূত-প্ৰেত কিরূপ হয়।” এই বলিয়া তিনি নিমিষের নিমিত্ত একবার চাহিয়া দেখিলেন। কিন্তু সেই ভীষণ দৃশ্য দর্শনে পরীক্ষণেই পুনরায় তাঁহাকে চক্ষু বুজিতে হইল। সে বিকট মূৰ্ত্তি দেখিয়া, কেহ স্থির থাকিতে পারে না। সে অন্ধকারে তিনি তাহাদিগকে দেখিতে পাইতেন না; কিন্তু মাঝে মাঝে তাহাদের মুখবিবর হইতে অগ্নিস্ফুলিঙ্গ বাহির হইতেছিল। সেই আলোকে তাহাদের রূপ তাঁহার নয়নগোচর হইল। ঘোর কৃষ্ণবর্ণ, সৰ্ব্বাঙ্গে সহস্ৰ সহস্ৰ কৃমি দুলিতেছে। পাতালের ন্যায় মুখবিবর। মুখের ভিতর হইতে অনবরত রক্ত নিৰ্গত হইতেছে। গজদন্তের ন্যায় বড়, কিন্তু বক্রাকার, ভীষণ দন্ত। ললাট দেশে কেবল একটি গোলাকার চক্ষু। সেই চক্ষু হইতেও অগ্নিস্ফুলিঙ্গ ও সর্প বাহির হইতেছিল। চকিতের নিমিত্ত তিনি চাহিয়া দেখিতে সমৰ্থ হইয়াছিলেন। সেই সময়ে কেবল একটি ভূতের উপর তাঁহার চক্ষু পড়িয়াছিল। সেই একজনের যৎসামান্য রূপের পরিচয় তিনি পাইয়াছিলেন। অন্যান্য ভূতের কিরূপ আকার ছিল, তাহা তিনি 88 দুনিয়ার পাঠক এক হও! ~ wwamarboicomo