পাতা:ত্রৈলোক্যনাথ রচনাসংগ্রহ.djvu/৪৩৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

তৃতীয় অধ্যায় বীরের বাক্যবাণ গৌরীশঙ্কর পুনরায় একান্ত মনে জপে প্ৰবৃত্ত হইলেন। কিছুক্ষণ পরে সহসা মাতার কণ্ঠস্বর তাহার কর্ণকুহরে প্রবেশ করিল। সেই অমাবস্যা রাত্রি,-— সেই ভয়াবহ শ্মশান-ভূমি— সে স্থানে মাতা কেন আসিয়া উপস্থিত হইলেন, এই চিন্তা করিয়া তাঁহার মন বড়ই কাতর হইল। তিনি চক্ষু চাহিয়া দেখিলেন, —সত্য সত্যই তাঁহার বৃদ্ধ মাতা বটে। যষ্টিহন্তে তাঁহার সম্মুখে দাঁড়াইয়া মা বলিলেন, — “উত্তিষ্ঠ বৎস তে কাৰ্য্যং সৰ্ব্বং যাতুন সংশয়ঃ। প্রভাতসময়ােজাতত্ত্বৎপিতা ক্রোশতে গৃহম্৷৷ প্ৰায়ো বিমৎসরা লোকা রাজানো দণ্ডধারিনঃ । কদাচিৎ কেন বা দৃষ্টিস্তদা কিঞ্চিদৃ ভবিষ্যতি৷” মাতার মুখে এরূপ সংস্কৃত বচন শুনিয়া গৌরীশঙ্কর বিস্মিত হইলেন। “আমার পিতা নাই, দেশে রাজপুরুষ আছে বটে; কিন্তু রাজা নাই। ইনি কি আমার মাতা নহেন, ইনি কি মায়া?” গৌরীশঙ্কর ভালরূপে পুনরায় নিরীক্ষণ করিয়া দেখিলেন। হু-বহু তাঁহার মাতা, কিছুমাত্র প্রভেদ নাই। মস্তকে করাঘাত করিয়া কাঁদিতে কাঁদিতে মাতা বলিলেন, — “বাছা, তুই আমার একমাত্র সন্তান। কেন তুই এমন অসীম সাহসিক কাৰ্য্যে প্ৰবৃত্ত মৃ? যদি তোর কোনরূপ বিপদ ঘটে, তাহা হইলে কাহাকে লইয়া আমি আর ৱ থাকিব? কাজ কি বাছা ধনে? ব্ৰাহ্মণের ছেলে,—তুই ভিক্ষা করিয়া খাইবি, ঘরে চল, আর জপে প্রয়োজন নাই।” মাতা এইরূপে খেদ করিতে লাগিলেন গৌরীশঙ্কর তাহার কথায় কৰ্ণপাত করিলেন না। তিনি মনে করিলেন যে, যদি মাতা হন, তাহা হইলে ইনি আমার হাত ধরিয়া তুলিতে চেষ্টা করিবেন। কিন্তু মাতা স্পর্শ করিলেন না। অনেক খেদ করিয়া, অবশেষে তিনি প্ৰস্থান করিলেন। ইহার পর আরও অনেক আত্মীয়-বন্ধুবান্ধব আসিয়া গৌরীশঙ্করকে তুলিতে চেষ্টা করিল। বহুকাল পূৰ্ব্বে মৃত পিতা ও জ্ঞাতিগণও আসিয়া, তাঁহাকে শবের উপর হইতে উঠিতে অনুরোধ করিলেন। কিন্তু গৌরীশঙ্কর উঠিলেন না। নানারপ বিভীষিকা দর্শনে তাহার হৃদয় কিছুমাত্র বিচলিত হইল না। রাত্রি প্রায় তিনটা হইল। এমন সময় একজন থিয়েটারী বীর সেই শশানক্ষেত্রে আসিয়া উপস্থিত হইল। গৌরীশঙ্কর একবার থিয়েটার দেখিতে গিয়াছিলেন। সে স্থানে একজন অভিমনু সাজিয়া আসিয়াছিল। থিয়েটারে যাহারা বীর সাজেন, তাহারা মনে করেন যে, খুব চীৎকার করিতে পারিলেই বীরত্ব প্ৰদৰ্শন করা হয়। থিয়েটারের রীতি অনুসারে সেই অভিমনু্যও ভয়ানক চীৎকার করিয়াছিল। তাহার চীৎকারে অনেক লোকের কান হইতে পোকা বাহির হইয়া গিয়াছিল; অনেক লোকের কৰ্ণে তালি লাগিয়াছিল; তাহা ভিন্ন চারি-পাঁচ জনের কৰ্ণতন্তু ছিন্ন হইয়া গিয়াছিল; চারি-পাঁচ জনের কৰ্ণপাটহে ছিদ্র হইয়া গিয়াছিল। সেই হতভাগারা জন্মের মত বধির হইয়া গিয়াছে। গৌরীশঙ্কর চীৎকারে অস্থির হইয়া তৎক্ষণাৎ থিয়েটার হইতে প্ৰস্থান করেন। সেই অবধি থিয়েটারী বীরকে তিনি বড় ভয় করেন। এখন সেই থিয়েটারী বীর শ্মশানক্ষেত্রে আসিয়া উপস্থিত হইল। থিয়েটারী বীর অতিকাের্কশ স্বরে ঘোর চীৎকার করিয়া বলিতে লাগিল,- “রে রে রে, কে রে তুই? যুদ্ধং দেহি, যুদ্ধং দেহি! 8SS দুনিয়ার পাঠক এক হও! ~ www.amarboi.comৰ্ম্মিািক্যনাথ রচনাসংগ্ৰহ