পাতা:ত্রৈলোক্যনাথ রচনাসংগ্রহ.djvu/৪৪৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ভাগ্যে আমার বাসার নিকট দুই-তিনখানি খোলার বাড়ী ছিল, তাই আমাকে অধিকক্ষণ আর পথে প্রতীক্ষা করিয়া থাকিতে হইল না। খোলাঘরের লক্ষ্মীগণের সরস্বতীর প্রতি বিদ্বেষ নাই । কাৰ্ত্তিক ঠাকুরের প্রতি তাঁহাদের যেরূপ ভক্তি, সরস্বতী ঠাকুরাণীর প্রতিও তাঁহাদেৱ সেইরূপ ভক্তি। মহাসমারোহের সহিত আজ তাহারা দেবীর পূজা করিতেছেন। ঘরের মাঝখানে তাঁহাৱা একখানি প্রতিমা খাড়া করিয়াছেন। প্রতিমার সম্মুখে বড় একখানি থালা রাখিয়াছেন, সেই থালে ঝমা-ঝম প্ৰণামী পড়িতেছে। কলিকাতায় পূজা-করা ব্যবসাটি নিতান্ত মন্দ নহে। বড় পূজার সময় নিমন্ত্রিত ব্যক্তিগণের নিকট হইতে অনেকে প্ৰণামীস্বরূপ এত টাকা আদায় করেন যে, বারো মাস সুখে-স্বচ্ছন্দে তাহাদের সংসার চলিয়া যায়। আমি গলির পথে দাড়াইয়া আছি, এমন সময়ে নিকটের একখানি খোলার বাড়ী হইতে একজন ব্ৰাহ্মণ বাহির হইলেন। বর্ণ তাহার কালো নহে; শ্যামবর্ণ বলিলে যাহা বুঝায়, তাহার বর্ণ সেইরূপ ছিল। তাঁহার মুখে বসন্তের দাগ ছিল। কপালে তাঁহার সুদীর্ঘ একটি ফোঁটা ছিল; গায়ে একখানি নামাবলি ছিল। তিনি যে পুরোহিত, তাঁহাকে আর জিজ্ঞাসা করিতে হয় না। ভক্তিভাবে আমি তাঁহাকে প্ৰণাম করিলাম। হাত তুলিয়া জয়-অস্তু বলিয়া তিনি আমাকে আশীৰ্ব্বাদ করিলেন। আমার ঘরে গিয়া মায়ের পূজা করিতে তাঁহাকে আমি অনুরোধ করিলাম। আমার কথায় তিনি সম্মত হইলেন। তাঁহার পূজা ও আমার অঞ্জলি প্রদানের পর, আমি তাঁহাকে দক্ষিণা প্ৰদান করিলাম। আজ আমার মুখে হাসি দেখিয়া আপনারা কত কি মনে করিতেছেন, কিন্তু সেদিন তাঁহার প্রফুল্ল ডায়মনকাটা মুখখানি যদি দেখিতেন, তাহা হইলে বলিতেন যে, হাঁ! হাসি বটে! তাহার কারণ এই যে, দক্ষিণাটি কিছু ভূটুর্ণ সেই প্ৰফুল্লবদনে ভট্টাচাৰ্য মহাশয় মৃত্যুখে বলিলেন,- “দেখ, বাপু! আজিকালের ছোকরাদের মতি-গতি নিতান্ত মন্দ মুম্বাই সব সাহেব ধরণ—সুহেবি মূত। কিন্তু তুমি ছোকরা দেখিতেছি ভাল। ধৰ্ম্মকৰ্ম্মে ভুঞ্জির মতি আছে। তােমার নাম কি বাপু !" আমি উত্তর করিলাম,- “আমার নাম মদনমোহন ঘোষ। আমরা সন্দূগোপ।” ভট্টাচাৰ্য মহাশয় বলিলেন, — “বা চমৎকার নামটি। মদনমোহনা! অতি সুন্দর নাম।” আমার নামটি যে ভাল, জ্ঞান হইয়া পৰ্যন্ত তাহা আমি জানিতাম। মনে মনে কত আমি নামের গৌরব করিতাম। ভট্টাচাৰ্য মহাশয়ও আজ সেই নামের প্রশংসা করিলেন। তাহার প্রতি আমার প্রগাঢ় ভক্তি হইল। আমার নিবাস কোথায়, আমার পিতা-মাতা বৰ্ত্তমান আছেন কি না, এইরূপ নানাপ্রকার পরিচয় গ্রহণ করিয়া ভট্টাচাৰ্য মহাশয় সেদিন বিদায় গ্ৰহণ করিলেন। তাহার পর মাঝে মাঝে তিনি আমার বাসায় পদধূলি প্ৰদান করিতেন। প্ৰণামীস্বরূপ টাকাটা-সিকিটা দিয়া আমি তাহার সম্মান করিতাম। ক্ৰমে আমি জানিতে পারিলাম যে, পুরোহিতাগিরি ব্যতীত তিনি ঘটকালী ব্যবসায়ও করিয়া থাকেন। সে নিমিত্ত আমার যে তখনও বিবাহ হয় নাই, কথায়-বাৰ্ত্তায় তাহাকে আমি জানাইলাম। ভট্টাচাৰ্য মহাশয় কিছু আশ্চৰ্য হইয়া বলিলেন,- এমন সুপােত্র! বিদ্বানু! চাকরে! এখনও বিবাহ হয় নাই!” আমি চুপ করিয়া রহিলাম। উত্তর আর কি করিব! প্রতিদিন আমি সাবান মাখিয়া স্নান করি। এখন আর আমার পাড়া গেয়ে চেহারা নাই। নানারূপ সুগন্ধযুক্ত তৈলে সিক্ত করিয়া, চুলগুলি 8vo. afraig -iibg gis so! - www.amarboi.com?437******