পাতা:ত্রৈলোক্যনাথ রচনাসংগ্রহ.djvu/৪৪৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

তৃতীয় অধ্যায় রাক্ষস না ভূত এইরূপে কিছুদিন গত হইল। পাল মহাশয়ের সহিত আমার পরিচয় হইল না। ভট্টাচাৰ্য্য মহাশয়ের সহিত সৰ্ব্বদা আমি সাক্ষাৎ করিতাম। তিনি বলিতেন,- “ব্যস্ত হইও না । নিয়োগীপুত্রের জীবনের আশা থাকিতে তোমার কোন আশা নাই। অপেক্ষা কর, দেখা যাউক কি হয়।” আমাদের বাটীর সম্মুখে রাস্তার অপর পারে একখানি মুদির দোকান আছে। একদিন রবিবার বৈকালবেলা দেখিলাম যে, পাল মহাশয় সেই দোকানে বসিয়া আছেন। তাঁহার মুখ সেইরূপ বিষন্ন ও চিন্তায় আচ্ছন্ন। একখানি পুস্তক তিনি পাঠ করিতেছিলেন ও কদাচ কখন কখন এক একবার মুখ তুলিয়া কাহারও সহিত দুই-একটি কথা কহিতেছিলেন। তাঁহাকে দেখিয়া আমি দোকানে প্ৰবেশ করিয়া যে তক্তপোষের উপর তিনি বসিয়াছিলেন, তাহার এক পার্শ্বে উপবেশন করিলাম। কোন দ্রব্য আমার প্রয়োজন আছে কি না, মুদি আমাকে জিজ্ঞাসা করিল। আমি বলিলাম,- “না।” তক্তপোষের উপর আরও তিন ব্যক্তি বসিয়া তামাক খাইতেছিলেন। পাল মহাশয়ের ন্যায় তাহারাও প্রবীণ। তাঁহাদের মধ্যে কেহ আমাকে কোন কথা বলিলেন না। পাল মহাশয় পুস্তক হইতে মুখ তুলিয়া আমার দিকে একবার চাহিয়াও দেখিলেন না। আমি যুবক; সামান্য একটা ছােড়া বললেও হয়; আর তাঁহারা সকুঞ্জ প্রবীণু। তাঁহাদের সহিতু প্ৰথম কথা কহিতে আমি সাহস করিলাম না। তাঁহারা, প্রথমুণ্ঠীর্মার পরিচয় জিজ্ঞাসা করিবেন, সেই ; কিন্তু...আমার সহিত কেহ একটিও কথা কহিলেন না। নিরাশ হইয়া সে স্থান হইতে আমি প্ৰস্থাই করিলাম। কিন্তু পাল মহাশয় একমনে কি পুস্তক সেই দিনই আমি সেই পুস্তক ক্ৰয় করিলাম; আর সেই রাত্রি হইতে তাহা উচ্চৈঃস্বরে পাঠ করিতে লাগিলাম। ভিতর-বাটীতে পাল মহাশয়ের ঘর, আর বাহির-বাটীতে আমার ঘর, দুইয়ের মাঝখানে কেবল একটি প্রাচীর ব্যবধান ছিল। আমি মনে করিলাম যে, আমার মহাভারত পাঠের শব্দ প্রাচীর পার হইয়া, পাল মহাশয়ের কর্ণকুহরে প্রবেশ করিবে। তাহা হইলে আমার প্রতি তাঁহার শ্রদ্ধা হইবে। কিন্তু ঠিক বিপরীত ফল হইল। আমার ঘরের সম্মুখে বারেণ্ডা আছে; আর সেই বারেণ্ডার উত্তর-সীমায় বাটীর ভিতর যাইবার জন্য দ্বার আছে। সেই দ্বারা সৰ্ব্বদা বন্ধ থাকে। একদিন রাত্রিকালে আমি যথারীতি উচ্চৈঃস্বরে মহাভারত পাঠ করিতেছি, এমন সময় বাটীর ভিতর দিক হইতে সেই দ্বারে কে ধাক্কা মারিতে লাগিল । মহাভারত পাঠে আমার মন তখন নিমগ্ন ছিল, সুতরাং সে শব্দ প্রথম আমি শুনিতে পাই নাই। ক্ৰমে ধাক্কার শব্দ বৃদ্ধি হইয়া যখন আমার কণ্ঠ-শব্দকে পরাজয় করিল, তখন সে শব্দ আমি শুনিতে পাইলাম । তাড়াতাড়ি ঘর হইতে বাহির হইয়া সেই দ্বারের নিকট গিয়া আমি জিজ্ঞাসা করিলাম, “কে গা! কে শব্দ করিতেছে!” ভিতর হইতে পােল মহাশয় উত্তর করিলেন, — “একটু ধীরে ধীরে যদি বাপু তুমি পুস্তক পাঠ কর, তাহা হইলে এ বাড়ীতে আমি তিষ্ঠিতে পারি, তা না হইলে আমাকে অন্যত্র পলায়ন করিতে হইবে।” 88d află cios (gs se - www.amarboi conf**