পাতা:ত্রৈলোক্যনাথ রচনাসংগ্রহ.djvu/৪৪৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ঘোরতর অপ্রতিভ হইয়া আস্তে আস্তে পড়িবার নিমিত্ত আমি তাহার নিকট অঙ্গীকার করিলাম। অঙ্গীকার করিয়া সে রাত্রিতে যখন লজ্জায় ও ঘূণায় অভিভূত হইয়া পুনরায় আমি আমার ঘরে প্রবেশ করিলাম, তখন যদি আপনারা আমাকে দেখিতেন, তাহা হইলে এই মদনের বদনে আপনারা বিন্দুমাত্ৰও হাসি পাইতেন না। রাগ করিয়া আমি মহাভারত দূরে নিক্ষেপ করিলাম। সেইদিন হইতে আর সে পুস্তক আসি স্পর্শ করিলাম না। পাল মহাশয়ের সহিত আমার আলাপ-পরিচয় হইল না। বরং মহাভারত পাঠের নিমিত্ত তাহার নিকট আমি লাঞ্ছিত হইলাম। গোফ ছাঁটা নিয়োগী মহাশয় বক্ষঃস্থল স্বীত করিয়া দম্ভের সহিত বিচরণ করেন। তাঁহাকে দেখিলে আমার সাৰ্ব্বশরীর জুলিয়া যায়। ডাক্তারগণ আসিয়া তাহার পুত্রকে পনের দিনের মধ্যে ভাল করিয়া দিবেন বলিয়া আস্ফালন করে। কিন্তু তাহার কাসি যায় না, জুরিও কমে না, শরীরে সে বলও পায় না। ভট্টাচাৰ্য মহাশয় আমাকে ক্রমাগত আশ্বাস প্ৰদান করেন। তাঁহার কৃপা আমি কখনও তুলিতে পারিব না। এইভাবে আরও কিছুদিন কাটিয়া গেল । ক্ৰমে চৈত্র মাস পড়িল। তখন নূতন গ্ৰীষ্ম পড়িয়াছে। রাত্রিতে সহসা আমার নিদ্ৰা ভঙ্গ হইল। তাহার পর পুনরায় নিদ্রা যাইবার নিমিত্ত অনেকক্ষণ চেষ্টা করিলাম; কিছুতেই আর নিদ্রার আবেশ হইল না। শয্যা হইতে উঠিয়া আমি আলো জ্বালাইয়া ঘড়িতে দেখিলাম যে, একটা বাজিয়া গিয়াছে। আমার ঘরের পশ্চিমদিকে দুইটি জানােলা ছিল। তাহার একটি জানােলা খুলিয়া দীড়াইলাম। আমার ঘরের নিয়েই গলি পথ। গলির ভিতুৱা পাল মহাশয়ের দিকে দূরে একটি গ্যাসের আলো । গলির ওপারে অন্যান্য লোকের বাড়ী যে বাটীতে থাকি, তাহার উত্তরে ঠাকুরের অনেকগুলি নোড়া-নুড়ি ছিল। সেই ধ্ৰুংমধ্যে দুইটি ঘরের ঠিক গায়ে লাগিয়াছিল। ৰই গাছের দিকে একবার দৃষ্টি পড়িল। সৰ্ব্বনাশ! অশ্বথগাছের ডাল, পাল মহাশয়ের তিনটি সেই গাছের উপর, নিবিড় শাখা-প্ৰশাখ$) মত সেই স্কুল ডালটির উপর আসিয়া বসিল। তাহার পর ধীরে ধীরে সেই বৃক্ষ-শাখার উপর দিয়া সে পাল মহাশয়ের দ্বিতীয় ঘরের দিকে অগ্রসর হইতে লাগিল। একটু দূরে গ্যাসের আলোক ছিল, তাই আমি তাহাকে দেখিতে পাইলাম; নতুবা সে অন্ধকার রাত্রিতে আমি তাহাকে দেখিতে পাইতাম না। যখন সে আরও অগ্রসর হইল, তখন আমি দেখিলাম যে, সে কোনরূপ জন্তু নহে। তাহার আকৃতি কতকটা মানুষের মত। মানুষের মত বটে; অথচ তাহাকে মানুষ বলিয়া আমার বোধ হইল না। ঘোড়ার মত তাহার মুখ লম্বা ছিল। মুখের বর্ণ সবুজ। বন্য-শূকরের ন্যায় বড় বড় দাঁত। যে স্থানে চক্ষু থাকে, তাহার সেই স্থানে গোল গোল দুইটি গৰ্ত্ত ছিল। শরীরের নিম্নভাগ মানুষের মত ছিল। কিন্তু সে মানুষ নহে, ভুতও নহে। আমি ভাবিলাম যে, যখন ইহার সবুজ কপালের উপর রক্তচন্দনের দীর্ঘ ফোঁটা রহিয়াছে, তখন এ নিশ্চয়ই রাক্ষস। আর, তাহার কি দাড়ি! ঘোর কৃষ্ণবর্ণের এমন চাঁপদাড়ি তো কখনও দেখি নাই! গোফে ও দাড়িতে তাহার সেই সবুজ লম্বা মুখমণ্ডলের আধোদেশটি আবৃত হইয়াছিল। ভয়ে আমি বিহ্বল হইয়া পড়িলাম, আতঙ্কে স্তম্ভিত হইয়া আমি আর জানালা বন্ধ করিয়া দিতে পারিলাম না, সে স্থান হইতে পলাইতেও পারিলাম না, কি চীৎকার করিতেও পারিলাম না! আরও অদ্ভুত কথা । সেই রাক্ষসটা ক্ৰমে অগ্রসর হইয়া পাল মহাশয়ের দ্বিতীয় অর্থাৎ মাঝের ঘরের জানালার নিকট আসিয়া উপস্থিত হইল। তাহার পর সেই জানালাতে সে অঙ্গুলি মুক্তা-মালা 88S sNAls viði (SS BS! ro www.amarboi.com ro