পাতা:ত্রৈলোক্যনাথ রচনাসংগ্রহ.djvu/৪৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

 এই চিঠিখানি পাইয়া রামহরি খেতুকে দেখাইলেন। খেতু বলিলেন,— “দাদা মহাশয়! আমি এইক্ষণে দেশে যাইব।”

 রামহরি বলিলেন,— “জনার্দ্দন চৌধুরী বড়লোক, তুমি সহায়হীন বালক, তুমি দেশে গিয়া কি করিবে?”

 খেতু বলিলেন,— “আমি কিছু করিতে পারিব না সত্য, তথাপি নিশ্চিন্ত থাকা উচিত নয়। কঙ্কাবতীকে এ বিপদ হইতে রক্ষা করিবার নিমিত্ত চেষ্টা করাও কর্ত্তব্য। কৃতকার্য্য না হই, কি করিব?”

 খেতু দেশে আসিলেন। মা'র নিকট ও পাড়া-প্রতিবেশীর নিকট সকল কথা শুনিলেন। শুনিলেন যে, জনার্দ্দন চৌধুরী প্রথমে কিছুতেই বিবাহ করিতে সম্মত হন নাই। কেবল তাঁহার সভাপণ্ডিত গোবৰ্দ্ধন শিরোমণি তাঁহাকে অনেক বুঝাইয়া সম্মত করিয়াছেন।

 বৃদ্ধ হইলে কি হয়? জনার্দ্দন চৌধুরীর শ্রী-চাঁদ আছে, প্রাণে সখও আছে। দুর্লভ পঞ্চমুখী রুদ্রাক্ষের মাল্য দ্বারা গলদেশ তাঁহার সর্ব্বদাই সুশোভিত থাকে। কফের ধাতু বলিয়া শৈত্য নিবারণের জন্য চূড়াদার টুপি মস্তকে তাঁহার দিন-রাত্রি বিরাজ করে। এইরূপ বেশভূষায় সুসজ্জিত হইয়া নিভৃতে বসিয়া যখন তিনি গোবৰ্দ্ধন শিরোমণির সহিত বিবাহ-বিষয়ে পরামর্শ করেন, তখন তাঁহার রূপ দেখিয়া ইন্দ্র চন্দ্র বায়ু বরুণকেও লজ্জায় অধোমুখ হইতে হয়।

 খেতু শুনিলেন যে, জনার্দ্দন চৌধুরী বিবাহ করিবার জন্য এখন একেবারে পাগল হইয়া উঠিয়াছেন। আর বিলম্ব সহে না। এই বৈশাখ মাসের ২৪শে তারিখে বিবাহ হইবে। জনার্দ্দন চৌধুরী এক্ষণে দিন গণিতেছেন। তাঁহার পুত্রকন্যা সকলের ইচ্ছা, যাহাতে এ বিবাহ না হয়। কিন্তু কেহ কিছু বলিতে সাহস করেন না। তাঁহার বড় কন্যা একদিন মুখ ফুটিয়া মানা

কঙ্কাবতী
৩৩