পাতা:ত্রৈলোক্যনাথ রচনাসংগ্রহ.djvu/৪৫৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

“মহাশয়! আমাদের বিষয়ে আপনি লোককে কোন কথা বলিয়াছেন। লোকের কাছে এরূপ গল্প করিলে আমাদের মন্দ হইবে। এরূপ গল্প আর করিবেন না। আমাদের এই উপকার করবেন।” কাগজখানিতে কাহারও নাম স্বাক্ষর ছিল না। কিন্তু হাতের লেখা নিতান্ত কাচা । তাহা দেখিয়া আমি বুঝিলাম যে, এ লেখা পাল মহাশয়ের কন্যার। তাহার পত্ৰ পাইয়া আমি রাক্ষসের কথা সব ভুলিয়া যাইলাম। কাগজে লেখা আছে,— “আমাদের এই উপকার করিবেন।” ইহার অর্থ কি? পাল মহাশয়ের কন্যা দ্বারের ফাঁক দিয়া আমাকে দেখিয়া থাকিবে। আমার রূপ দেখিয়া সে মোহিত হইয়াছে, আমার উপর সে মন-প্ৰাণ সমৰ্পণ করিয়াছে। এ চারিটি কথার ইহা ভিন্ন অন্য অর্থ হইতে পারে না। উপকার! আমাকে ভালবাসে, আমাকে বিবাহ করিবার নিমিত্ত সে লালায়িত হইয়াছে। সামান্য ঐ “উপকার” কথাটির ভিতর যে এত অর্থ নিহিত আছে, অন্যে তাহা বুঝিতে পরিবে না। কিন্তু আমাদের দুই জনের মন-প্ৰাণ এক হইয়া গিয়াছে, সেজন্য তাহার মনের ভাব আমি অনায়াসেই বুঝিতে পারিলাম। পুলকে পুলকিত হইয়া কাগজখানি আমি একবার মাথায় রাখিলাম। তাহার অর্থ এই যে, “হে সুন্দরি! তোমার আজ্ঞা আমি শিরোধাৰ্য্য করিলাম।” তারপর তক্তপোষের উপর শয়ন করিয়া কাগজখানি আমি বুকের উপর রাখিলাম। তাহার অর্থ যে, “হে বরাননে! তোমার পত্ৰস্পর্শে আমার উত্তাপিত হৃৎপিণ্ড সুশীতল হইল।” সাধে কি পিতা-মাতা আমার নাম মদন রাখিয়াছিলেন!। মদন না হইলে এত ভাবুক আর কেহ হইতে পারে না। কিন্তু এমন সুখের সময় পোড়া ব্ৰাক্ষসের কথা পুনরায় আমার মনে পড়িল। যাহার পায়ে আমি প্ৰাণ সঁপিয়াছি, রাক্ষসের সহিত তাহার যে ভাব, সেই চিন্তায় আমার হৃদয় জর-জর হইল। তুহুঙ্কুর পর যক্ষ-রক্ষ প্রভৃতি দেব-যোনি-ভু জীবগণ অন্তৰ্য্যামী হইয়া থাকে। আমার থা যদি সেই রাক্ষস জানিতে পারে? কুপিত হইয়া রাত্রিকালে আমার ঘরের ভিতর করিয়া যদি হারাণ সুরের ন্যায় কড়মড় করিয়া আমাকে ভক্ষণ করে? প্ৰাতঃকালে সকলে যদি দেখে যে, মদনের আর চিহ্নমাত্র নাই, বিছানার উপর কেবল দুইতিন কুচি হাড় পড়িয়া আছে? ভয়ের কথা বটে। কিন্তু চিরকাল হইতে আমি সাহসী পুরুষ, তাহাতে রাম-কবচ ধারণ করিয়াছি। নানারূপ প্ৰবোধ দিয়া মন হইতে আমি রাক্ষসকে দূর করিলাম। আমি ভাবিলাম যে, পাল মহাশয়ের কন্যার ন্যায় শান্ত সুশীলা রূপবতী গুণবতী কামিনী রাক্ষসের সহিত প্ৰণয় করিতে পারে না। তাহা যদি করিত, তাহা হইলে আমাকে ঘোরতর ভালবাসিয়া আমার নিকট উপকারের প্রার্থনা করিত না। প্রকৃত আমি রাক্ষস দেখি নাই, আমি স্বপ্ন দেখিয়াছিলাম। আর যদিও প্রকৃত সে রাক্ষস হয়, তাহা হইলে পাল মহাশয়ের নিকট অন্য কোন কাজে সে আসিয়া থাকিবে । কলিকাতা সহরে জনাকীর্ণ পথে দিনের বেলা গাড়ী করিয়া অথবা পদব্রজে রাক্ষস আসিতে পারে না। সেজন্য রাত্রিকালে গোপনভাবে আসিয়াছিল। শুনিয়াছি যে, সহরের ভিতর উট কি হাতী আসিবার হুকুম নাই। রাক্ষস আসিবারও বোধ হয়, হুকুম নাই। এইরূপ নানাপ্রকার প্রবােধ দিয়া মন হইতে কুচিন্তা আমি দূর করিলাম। পালকন্যার কল্পিত মুখচন্দ্রের বিমল জ্যোতি দ্বারা আমার তাপিত হৃদয় আলোকিত ও স্নিগ্ধ করিতে লাগিলাম। 88 frig -ibas gri se - www.amarboicomf3?"