পাতা:ত্রৈলোক্যনাথ রচনাসংগ্রহ.djvu/৪৫৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

পুত্রদিগকে ইংরেজী শিক্ষা দিয়া জেটুমান করিতেছেন।” পাল মহাশয় বলিলেন,- “আমাদের মধ্যে যেরূপ ভদ্র সদৃগোপ ও চাষী সদৃগোপ আছে, আপনাদের মধ্যেও সেইরূপ ভদ্র ও চাষী ব্ৰাহ্মণ আছে। হলধারী ব্ৰাহ্মণদিগকে বাভন বলে; বেহার অঞ্চলে তাহারা বাস করে। ভাল ব্ৰাহ্মণগণ যেরূপ তাহদের সহিত আদান-প্ৰদান করিতে পারে না, আমরাও সেইরূপ চাষী সদগোপকে কন্যা-সম্প্রদান করিতে পারি না।” ভট্টাচাৰ্য মহাশয়ের ঘরে বসিয়া, তাহার মুখ হইতে আমি এই সমুদয় বিবরণ শ্রবণ করিতেছিলাম। পাল মহাশয়ের কথা শুনিয়া আমি একেবারে বসিয়া পড়িলাম। সত্য বটে, আমার পিতা স্বহস্তে চাষ করিতেন। আর একথাও সত্য যে, চাষ ছাড়াইয়া আমি তাঁহাকে মুদিখানার দোকান করিয়া দিয়াছি। আমি মনে করিয়াছিলাম যে, চাষের কলঙ্ক দূর হইয়াছে; আমরা এক্ষণে বাবু হইয়াছি। কিন্তু পাল মহাশয় গোপনে গোপনে এত সন্ধান লইবেন, তাহা আমি কি করিয়া জানিবা! যাহা হউক, তাহার কন্যাকে লাভ করা সম্বন্ধে আমি এক্ষণে হতাশ হইয়া পড়িলাম। কিন্তু ভট্টাচাৰ্য মহাশয় আমাকে আশ্বাস প্ৰদান করিয়া বলিলেন,- “তুমি হতাশ হইওনা। শাস্ত্ৰ হইতে বচন বাহির করিয়া পাল মহাশয়কে আমি বুঝাইয়া দিব যে, সকল সদৃগোপী একজাতি।” আমি জিজ্ঞাসা করিলাম,- “শাস্ত্ৰ হইতে এরূপ বচন বাহির করিতে পরিবেন?” ঈষৎ হাসিয়া ভট্টাচাৰ্য মহাশয় উত্তর করিলেন,- “আমাদের শাস্ত্ৰ মহাসাগরস্বরূপ । এমন জিনিষ নাই, যা ইহার ভিতর হইতে বাহির হয় না।” ভট্টাচাৰ্য মহাশয় বৃদ্ধাঙ্গুলি ও মধ্যমা নাড়িয়া ইঙ্গিত । তাহার অর্থ এই যে, সব টাকার খেলা! টাকা দিলে শাস্ত্রের ভিতর হইতে যাহা ইচ্ছা! করিয়া দিতে পারা যায়। এই সময় বাহিরে একটু কাসির শব্দ মহাশয় কিছু চমকিত হইয়া বলিলেন,- “এঃ! গোপছােটা নিয়োগী আড় চূড়াইয়া, আমাদের কথা শুনিতেছে।” এই কথা বলিতে বলিতে নিয়োগী য় আসিয়া দ্বারের নিকট দাঁড়াইলেন । ভট্টাচাৰ্য্য মহাশয়কে লক্ষ্য করিয়া তিনি “কি ঠাকুর! সকল সদৃগোপ একজাতি? তাহদের মধ্যে ইতার-ভদ্ৰ নাই?” ভট্টাচাৰ্য মহাশয় উত্তর করিলেন,- “হাঁ! আমার মত তাই। সকল সদৃগোপ একজাতি । চাষ ছাড়িয়া দিলেও সে সদৃগোপ থাকে, অন্য জাতি হয় না। তাহা ব্যতীত তোমরা সকলেই ব্ৰহ্মার পা হইতে বাহির হইয়ােছ।” নিয়োগী বলিলেন,- “আমরা ব্ৰহ্মার পা হইতে বাহির হইয়াছি? আর তোমরা?” ভট্টাচাৰ্য মহাশয় উত্তর করিলেন,- “আমরা ব্ৰহ্মার মুখ হইতে বাহির হইয়াছি।” এই কথা শুনিয়া নিয়োগী মহাশয় রাগে জুলিয়া উঠিলেন। আমাকে লক্ষ্য করিয়া অন্যান্য জাতি বিষয়ে তিনি নানারূপ প্রশ্ন করিলেন। যথাসাধ্য আমি সেই সমুদয় তর্কের উত্তর দিলাম। অবশেষে যখন দেখিলাম যে, তাহার ক্ৰোধ ক্ৰমেই বৃদ্ধি হইতেছে ও তিনি অশ্লীল ভাষা ব্যবহার করিতেছেন, তখন সে স্থান হইতে আমি চলিয়া যাইতে উদ্যত হইলাম। যাইবার সময় নিয়োগী আমাকে বলিলেন,- “পালের কন্যাকে তুমি বিবাহ করিবে! বামন হইয়া চাঁদে হাত! পাল অন্য স্থানে বর খুঁজিতেছে! বটে! তোমার পালকেও আমি দেখিয়া লইব । রাত্ৰিতে জামালা দিয়া ঘরে রাক্ষস আসে! বটে। পালকেও বলিও যে, রাক্ষসের উপর খোঙ্কস আছে।” 8to দুনিয়ার পাঠক এক হও! ~ www.amarboi.com"ির্থ","থ ********