পাতা:ত্রৈলোক্যনাথ রচনাসংগ্রহ.djvu/৪৬০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ভাবিলাম যে, নিয়োগীদিগেরও ইহাতে যোগ আছে। তা না হইলে, যে লোক বিছানা হইতে উঠিতে পারে না, সে কেন এই রাত্রি দুই প্ৰহরের সময় এ স্থানে আসিবে! যাহা হউক, আমি তাহার ঘরের ভিতর আর প্রবেশ করিলাম না। প্ৰাণ লইয়া তৎক্ষণাৎ সে স্থান হইতে পলায়ন করিবার উপক্ৰম করিলাম। কিন্তু পাল মহাশয় খপ করিয়া আমার হাত ধরিয়া ফেলিলেন। আমার হাত ধরিয়া তিনি বলিলেন, — “কোথায় যাও!” আমি তাঁহার পায়ে পড়িলাম! তাহার পা দুইটি জড়াইয়া আমি বলিলাম,- “আমি একলা মায়ের একেলা ছেলে! দোহাই আপনার!” পাল মহাশয় বলিলেন,- “সে আবার কি!” আমি বলিলাম,- “দোহাই আপনার। আপনার উনি জামাতা, উনি বোধ হয় বিভীষণের প্রপৌত্র। উনি দেবতা। আমাকে খাইয়া উনি সুখ পাইবেন না। উনি বরং আসিয়া টিপিয়া দেখুন, আমার গায়ে মাংস নাই, আমার গায়ে সব হাড় ।” পাল মহাশয় বলিলেন,- “এ বলে কি!” এই সময় গঙ্গাদত্তর কথা আমার মনে পড়িল। আমি বলিলাম,- “আমাকে ছাড়িয়া দিন। রাক্ষস মহাশয়ের নিমিত্ত আমি ভাল মোটা তাজা মানুষ ডাকিয়া আনিতেছি। তাহার কোমল মাংস ভক্ষণ করিয়া, রাক্ষস মহাশয় পরম তৃপ্তিলাভ করিবেন। জামাতার আদর করিয়া, আপনিও সন্তোষলাভ করিবেন; আমাকে খাইয়া তাহার সুখ হইবে না। এ চাষার মাংস। স্বহস্তে আমরা চাষ করি। আমাদের মাংস শুষ্ক ও কঠিন, ঠিক দড়ির মত। দোহাই আপনার!” এত বিনয়বাচনে আমি প্ৰাণ-ভিক্ষা চাহিলাম, মহাশয়ের দয়া হইল না। তিনি আমাকে ছাড়িয়া দিলেন না। তখন নিরুপায় হইয় একদিকে তাহার হাত ছাড়াইতে চেষ্টা করিতে লাগিলাম, তেমনি অন্যদিকে লোকুঞ্জিড় করিবার নিমিত্ত চীৎকার করিতে উদ্যত হইলাম। “কর কি!” এই কথা বলিয়া পৃষ্ঠা য়। আমার মুখ চাপিয়া ধরিলেন। আর সেই সময় রাক্ষস উঠিয়া আমাকে আসিয়া ধরল। নিমিষের মধ্যে সে আমাকে ঘরের ভিতর টানিয়া লাইল; তাহার পর, সে ঘরের দ্বার বন্ধ করিয়া দিল। একবার, আমাদের গ্রামে, কাজি বুড়ীর ধামা-ঢাকা বীজ মোরগ রাত্রিকালে আমি চুরি করিয়া খাইয়াছিলাম। জবাই করিবার সময়, আমার হাতে সেই মোরগ যেরূপ ঝটুপটু করিয়াছিল, আজ রাক্ষসের হাতেও আমি সেইরূপ ঝটুপটু করিতে লাগিলাম। কিন্তু সে হইল রাক্ষস, আর আমি হইলাম মানুষ। তাহার হাত হইতে আমি আপনাকে ছাড়াইতে পারিলাম না। তাহার স্পর্শে আমার হাত-পা অবশ হইয়া গেল। ক্রমে আমার সর্বাঙ্গ হিম হইয়া গেল, কপালে বিন্দু বিন্দু ঘাম দেখা দিল, কম্পজুরের ন্যায় শরীর আমার কাঁপিতে লাগিল, দাঁতে দাঁত লাগিয়া ঠকঠক করিয়া শব্দ হইতে লাগিল । আমি অচেতন্যপ্ৰায় হইলাম, আমার কণ্ঠ হইতে কেবল গো-গো ধ্বনি বাহির হইতে লাগিল । কিন্তু তখন সম্পূর্ণভাবে আমি অজ্ঞান হই নাই, কারণ, তখনও আমি ভাবিতেছিলাম যে,- “হায় রে! শেষে রাক্ষসের আহার হইব বলিয়া কি বাপ-মা আমাকে এতবড় করিয়াছিলেন!” 86ጽS দুনিয়ার পাঠক এক হও! ~ www.amarboi.comর্জিািকনীৰ্থ রচনাসাউথই