পাতা:ত্রৈলোক্যনাথ রচনাসংগ্রহ.djvu/৪৬১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

দশম অধ্যায় আমার সাহস ও বিক্রম পড়িল। অবশেষে আমি একেবারে অজ্ঞান হইয়া পড়িলাম। অজ্ঞান অবস্থায় কতক্ষণ ছিলাম, তাহা ঠিক বলিতে পারি না। বােধ হয়, অধিকক্ষণ নহে। পুনরায় আমার জ্ঞান হইলে, চক্ষু চাহিয়া আমি দেখিলাম যে, মাদুরের উপর আমি শয়ন করিয়া আছি। পাল মহাশয়ের গৃহিণী আচল দিয়া আমার কপাল মুছাইতেছেন। তাঁহার কন্যা আমাকে বাতাস করিতেছে। নিকটে উনিশ-কুড়ি বৎসর বয়স্ক এক সুশ্ৰী যুবক বসিয়া আছে। আর কিছু দূরে পাল মহাশয় নিজে বাক্সর ভিতর একটি শিশি তুলিয়া রাখিতেছেন। আমি তখন কোথায় আছি, প্রথম তাহা আমার স্মরণ হইল না। ক্রমে সকল কথা স্মরণ হইল। সভয়নয়নে চারিদিকে চাহিয়া দেখিলাম। কিন্তু রাক্ষসকে সে ঘরে আর দেখিতে পাইলাম না । আমাকে চেতন করিবার নিমিত্ত পাল মহাশয় শিশি হইতে কি ঔষধ দিয়াছিলেন। সেই শিশি পুনরায় তিনি বাক্সর ভিতর তুলিয়া রাখিতেছিলেন। আমার জ্ঞান হইয়াছে দেখিয়া, তিনি আমার নিকট আসিলেন । তাহার কন্যা ও স্ত্রী সেই সময় সে স্থান হইতে সরিয়া বসিলেন। আমি পাল মহাশয়কে জিজ্ঞাসা করিলাম—“রা- য়া-রা?” সমুদয় প্রশ্নটি স্পষ্টরূপে আমার মুখ দিয়া হইল না। সে রাক্ষস মহাশয় এখন কোথায়, ইহাই আমার জিজ্ঞাস্য ছিল। আমার মােনর ভাব বুঝিতে পারিয়া পাল মহাশয় উত্তর করিলেন,- “তোমাকে আর কি বলিব! তুমিঃমানুষ কি, কি, তাহাই আমি বুঝিতে পারি না। রাক্ষস আবার কোথায়? আমার এত য়াছে; কিন্তু রাক্ষস আমি কখনও দেখি নাই। ইনি আমার পুত্র। বিপদে পড়িয়া আমার ছদ্মবেশ ধারণ করিতে হইয়াছে। এই সে পরচুলের দাড়ি-গোপ, আর এই সে মুখস,—যাহা দেখিয়া তুমি এত ভয় পাইয়াছিলো।” এই কথা বলিয়া, পাল মহাশয় প্রথম আমায় সেই সুশ্ৰী যুবককে দেখাইলেন, আর তাহার পর সেই পরচুল ও মুখস দেখাইলেন। নিজের বড়াই করিতে নাই; কিন্তু স্বভাবতঃ আমি যে একজন সাহসী পুরুষ, সে পরিচয় বােধ হয়, আর আপনাদিগকে দিতে হইবে না। প্রকৃত রাক্ষস না হউক, রাক্ষসের মত তো বটে! সেই ভয়ঙ্কর রাক্ষসের হাতে পড়িয়াও আমি ধৈৰ্য ধরিতে সমর্থ হইয়াছিলাম, তাহাই আমার সাহসের যথেষ্ট পরিচয় । আপনারা হইলে ভয়ে হয়তো কত কি করিয়া ফেলিতেন। তাহার পর বলিলে হয়তো আপনারা বিশ্বাস করিবেন না; কিন্তু সত্য বলিতেছি যে, কিছুমাত্র ভয় না করিয়া, রাক্ষসের মুখস আমি টিপিয়া দেখিলাম— স্বচ্ছন্দে হাতে করিয়া টিপিয়া দেখিলাম। তাহাতে আমার কিছুমাত্র ভয় হইল না। এখন আপনারা বুঝিয়া দেখুন, আমার কত সাহস! যখন আমি নিশ্চয় বুঝিলাম যে, সে বস্তুটা মুখস বটে; রাক্ষসের মুণ্ড বা অন্য কোন ভয়াবহ পদার্থ নহে, তখন আমি উঠিয়া বসিলাম। বসিয়া আমি পাল মহাশয়কে জিজ্ঞাসা করিলাম,- “কি জন্য আপনার পুত্ৰকে এরূপ ছদ্মবেশ ধারণ করিতে হইয়াছে? আর কেনই বা ইহাকে অশ্বখ গাছ-পথে যাতায়াত করিতে হয়?” ՀԾ|-3յթil 86ኰx© sNAls viði (SS BS! ro www.amarboi.com ro