পাতা:ত্রৈলোক্যনাথ রচনাসংগ্রহ.djvu/৪৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

ধাত, রাগে এমনি তাঁহার ভয়ানক কাসি আসিয়া উপস্থিত হইল যে, সকলে বোধ করিল, দম আটকাইয়া তিনি বা মরিয়া যান!

 কাসিতে কাসিতে তিনি বলিলেন,— “গলাধাক্কা দিয়া এ ছোঁড়াকে আমার বাড়ী হইতে বাহির করিয়া দাও!”

 অনুমতি পাইয়া পারিষদগণ খেতুর গলাধাক্কা দিতে আসিল। খেতু জনার্দ্দন চৌধুরীর লাঠিগাছটি তুলিয়া লইলেন। পারিষদবৰ্গকে তিনি ধীরভাবে বলিলেন,— “তোমরা কেহ আমার গায়ে হাত দিও না। যদি আমার গায়ে হাত দাও, তাহা হইলে এই দণ্ডে তোমাদের মুণ্ডপাত করিব।”

 খেতুর তখন সেই রুদ্রমূর্ত্তি দেখিয়া, ভয়ে সকলেই আকুল হইল। গলাধাক্কা দিতে আর কেহ অগ্রসর হইল না।

 নিরঞ্জন উঠিয়া, উভয়পক্ষকে সান্ত্বনা করিয়া খেতুকে সেখান হইতে বিদায় করিলেন। খেতু চলিয়া গেলেন। তবুও জনার্দ্দন চৌধুরীর রাগও থামে না, কাসিও থামে না। রাগে থরথর করিয়া শরীর কাঁপিতে লাগিল, খক-খক্‌ করিয়া ঘন ঘন কাসি আসিতে লাগিল।

 কাসিতে কাসিতে তিনি বলিলেন,— “ছোঁড়ার কি আস্পর্দ্ধা! আমাকে কি না বুড়ো বলে।”

 গোবৰ্দ্ধন শিরোমণি বলিলেন,— “না না! আপনি বৃদ্ধ কেন হইবেন? আপনাকে যে বুড়ো বলে, সে নিজে বুড়ো।”

 ষাঁড়েশ্বর সেখানে উপস্থিত ছিলেন। ষাঁড়েশ্বর বলিলেন,— “হয়তো ছোকরা মদ খাইয়া আসিয়াছিল! চক্ষু দুইটা যেন জবাফুলের মত, দেখিতে পান নাই?”

 নিরঞ্জন বলিলেন,— “ও কথা বলিও না! যারা মদ খায়, তারা খায়। কে মদ-মুরগী খায়, তা সকলেই জানে। পরের নামে মিথ্যা অপবাদ দিও না।”

 ষাঁড়েশ্বর উত্তর করিলেন,— “সকলে শুনিয়া থাকুন, ইনি বলিলেন, —'যে, আমি মদ-মুরগী খাই।' আমি ইহার নামে মানহানির মকদ্দমা করিব। এ'র হাড় কয়খানা জেলে পচাইব।”

 গোবৰ্দ্ধন শিরোমণি বলিলেন,— “ক্ষেত্রচন্দ্র মদ খান, কি না খান, তাহা আমি জানি না। তবে তিনি যে যবনের জল খান, তাহা জানি। সেই যারে বলে 'বরখ', সাহেবেরা কলে যাহা প্রস্তুত করেন, ক্ষেত্রচন্দ্র সেই বরখ খান। গদাধর ঘোষ ইহা স্বচক্ষে দেখিয়াছে।”

 জনার্দ্দন চৌধুরী জিজ্ঞাসা করিলেন,— “কি কি? কি বলিলে?”

 ষাঁড়েশ্বর বলিলেন,— “সর্ব্বনাশ! বরফ খায়? গোরক্ত দিয়া সাহেবেরা যাহা প্রস্তুত করেন? এবার দেখিতেছি, সকলের ধর্ম্মটি একেবারে লোপ হইল। হায় হায়! পৃথিবীতে হিন্দুধর্ম্ম একেবারে লোপ হইল।”

 নিরঞ্জন বলিলেন,— “ষাঁড়েশ্বরবাবু! একবার মনে করিয়া দেখ, খেতুর বাপ তোমার কত উপকার করিয়াছেন। খেতুর অপকার করিতে চেষ্টা করিও না।”

 জনার্দ্দন চৌধুরী বলিলেন,— “ওসব বাজে কথা এখন তোমরা রাখ। গদাধর ঘোষকে ডাকিতে পাঠাও।”

 গদাধর ঘোষকে ডাকিতে লোক দৌড়িল।

কঙ্কাবতী
৩৫