পাতা:ত্রৈলোক্যনাথ রচনাসংগ্রহ.djvu/৪৮০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

নিকট না আসে, লোকে ভূত মনে করিয়া পলায়ন করে, সেইজন্য গাছে উঠিবার সময় আমি মুখস পরিতাম। দুই-একবার ভূত মনে করিয়া লোকে পলায়ন করিয়াও ছিল।” খুনী অভিযোগ হইতে মিহির সহজে নিকৃতি পায় নাই। ভাল হইয়া হুগলীর কাছারিতে তাহাকে হাজির হইতে হইয়াছিল। সে স্থানে সামান্য একটু মোকদ্দমাও হইয়াছিল। এই বিচারের সময় আর একটি নূতন কথা বাহির হইয়া পড়িল। বেচুর সহিত আর দুইটি ছাত্র একঘরে শয়ন করিত। খুনের সময় তাহাদের একজন জাগরিত ছিল। বেচুকে বেণীর ঘরে প্ৰবেশ করিতে ও কিছুক্ষণ পরে দ্রুতপদে ফিরিয়া আসিতে সে দেখিয়াছিল। এইরূপ আরও অনেক কথা সে অবগত ছিল। মিহিরের হইয়া সে সাক্ষ্য প্ৰদান করিল। যাহা হউক, অল্পদিনের মধ্যেই মিহির খালাস পাইল । অধিক আর কিছুই বলিবার নাই। মিহির খালাস পাইলে, পাল মহাশয় তাহাকে লইয়া দেশে গমন করিলেন। মাঝে মাঝে তিনি ও মিহির কলিকাতায় আসিয়া, আমার সহিত সাক্ষাৎ করিতেন। আমিও মাঝে মাঝে তাঁহাদের গ্রামে গমন করিতাম। রাধারণীর সহিত আমার যে বিবাহ হইবে, সে সম্বন্ধে স্পষ্ট কোন কথা হয় নাই। কিন্তু কি আমি, কি ডট্টাচাৰ্য মহাশয়, কি আর আর লোক, সকলেই বুঝিল যে, সে তো হবেই, তবে আর কথার আবশ্যক। কি! আমার পিতা যে স্বহস্তে চাষ করিতেন, সে কথার কোনরূপ আর উল্লেখ হইল না। তবে একদিন কথায় কথায় ভট্টাচাৰ্য মহাশয়কে পাল মহাশয় বলিলেন যে,- “লোকের মনে কি কুসংস্কার! যাহাদের পরিশ্রমে ভূমি হইতে মনুষ্যের আহার অ উৎপাদিত হয়, তাহাদিগকে লোকে চাষা বলিয়া ঘূণা করে। বড়মানুষের রাজভবন ও ལྔ་》རི་ হইতে সামান্য ভিখারীর একমুষ্টি অন্ন পৰ্যন্ত সমুদয় বস্তু কৃষকের পরিশ্রমেই উৎখান্ন হয়। ভারতের সমুদয় জাতির সম্বল— কৃষিকার্যের ফল। সুতরাং কৃষকেরা সাধুরঞ্জর পূজ্য, তাহারা ঘূণিত নহে। এ বিবেচনা যাহাদের নাই, তাহাদিগকে আমি আর ক্লিঙ্গুলিব!" পাল মহাশয় পুনরায় বলিলেন,৩৯*বিপদে পতিত হইয়া আমি আর একটি জ্ঞানলাভ করিয়াছি। ঈশ্বর সর্বদাই আমাদের নিকট আছেন। জলে যেমন মৎস্য ডুবিয়া থাকে, ঐশ্বরিক শক্তির ভিতর সেইরূপ আমরা ডুবিয়া আছি। সেই অনন্ত জ্ঞানসাগরে আমরা যে ডুবিয়া আছি, তাহা যদি ভালরূপে আমরা বুঝিতে পারিতাম, তাহা হইলে মনুষ্য নানা জ্ঞান ও নানারূপ অলৌকিক শক্তি লাভ করিতে সমর্থ হইত। কিন্তু তিনি যে সৰ্ব্বদাই আমাদের কাছে আছেন, তাহা আমরা হদয়ঙ্গম করিতে পারি না। সেইজন্য সেই বিশ্বাত্মার সহিত নিজের আত্মা-সংযোজিত করিয়া, মানুষ সেই অন্তত জ্ঞান ও শক্তি-সাগর হইতে নিজের সামান্য জ্ঞান ও শক্তি পরিপুষ্ট করিতে পারে না। তথাপি তিনি সৰ্ব্বদাই আমাদের মঙ্গল সাধন করিতেছেন। বিনা দোষে মিহিরকে যখন পথে পথে ফিরিতে হইয়াছিল, তখন ভগবানের অবিচারের উপর আমি কতই না দোষারোপ করিয়াছিলাম। কিন্তু মিহিরের উপর সেই মিথ্যা অভিযোগ যদি আরোপিত না হইত, তাহা হইলে তাহার একমাস পরেই বেচুর সহিত আমার কন্যার বিবাহ হইয়া যাইত। কারণ, বিবাহের দিন স্থির পর্য্যন্ত হইয়া গিয়াছিল। সে বিবাহ হইলে আমার সাৰ্ব্বনাশ হইত! যে চুরি করিতে পারে, যে খুন করিতে পারে, আমার কন্যা সেইরূপ লোকের হাতে পড়িত। তাহার পর, রোগগ্ৰস্ত লোকের হাতে পড়িয়া অল্পদিনের মধ্যেই তাঁহাকে বিধবা হইতে হইত। অতএব মিহিরকে দুই বৎসরের নিমিত্ত ক্লেশ দিয়া, দয়াময় ভগবান চিরজীবনের নিমিত্ত আমার কন্যাকে রক্ষা করিয়াছেন।” BԳՀ দুনিয়ার পাঠক এক হও! ~ www.amarboi.comাির্ডস”********