পাতা:ত্রৈলোক্যনাথ রচনাসংগ্রহ.djvu/৫০০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

সন্ধ্যা বেলা তিনি বাটী প্রত্যাগমন করিলেন। বৈবাহিক কখন টাকা আনিবেন, সেই প্ৰতীক্ষায় অতি উদ্বিগ্ন চিত্তে তিনি বসিয়া রহিলেন। সাতটা বাজিয়া গেল, আটটা বাজিয়া গেল, নয়টা বাজিয়া গেল, টাকা লইয়া বৈবাহিক আসিলেন না। ভয়ে মুস্তাফির প্রাণ উড়িয়া গেল। আহার প্রস্তৃত; তিনি আহার করিলেন না। চাদরখানি লইয়া তিনি বাটী হইতে বাহির হইলেন। গঙ্গা পার হইয়া সোজা বৈবাহিকের বাটী। গিয়া উপস্থিত হইলেন। বৈবাহিকের সহিত তাহার সাক্ষাৎ হইল । মাশ্চন্টক মহাশয় বলিলেন,- “কি করিব, ভাই! অনেক চেষ্টা করিয়াও আজ, টাকার যোগাড় করিতে পারি নাই। তা, তুমি ভাবিও না। কাল প্ৰাতঃকালে, যেখান হইতে পাই, তোমার টাকার যোগাড় করিব। নয়টার ভিতর তোমাকে টাকা দিয়া আসিব ।” মুস্তাফি বলিলেন,- “দেখিও, ভাই, যেন এ কথার অন্যথা হয় না। তাহা হইলে, আমি মারা যাইব ।” মাশ্চন্টক বলিলেন,- “আমি পাগল হই নাই; কা’ল প্ৰাতঃকালে নয়টার ভিতর নিশ্চয় তুমি তোমার টাকা পাইবে। বাড়ীতে থাকিও।” মুস্তাফির আহার হইয়াছে কি না, বৈবাহিক তাহা জিজ্ঞাসা করিলেন না। সে রাত্রি সেখানে থাকিতেও বলিলেন না। কন্যার সহিত দেখা না করিয়া বিষগ্ন বদনে মুস্তাফি বাটী প্ৰত্যাগমন করিলেন । পরদিন প্ৰাতঃকালে বৈবাহিকের প্রতীক্ষায় মুস্তাফি বাটীতে বসিয়া রহিলেন। নয়টা বাজিয়া গেল, দশটা বাজিয়া গেল, বৈবাহিক আসিলেন না । “আমার অসুখ হইয়াছে, আজ আমি আফিসে যাইতে পারিব না।”— এই কথা বলিয়া মুস্তফি আফিসে চিঠি লিখিলেন। তাহার পর তাড়াতাড়ি দুইটা ভাত নাকে মুখে গুজিয়া, তিনি বৈবাহিকের আফিসে গমন করিলেন। আফিসে তাঁহাকে দেখিতে পাইলেন না। সকলে বলিল যে, তিনি কসাই-খানায় গিয়াছেন। বিস্মিত হইয়া মুস্তাফি জিজ্ঞাসা করিলেন, — “কসাই-খান!” আফিসের লোক বলিল,- “হা, জাহাজে যোগান দিবার নিমিত্ত তিনি মাংসের ঠিকা লইয়াছেন।” জাহাজে যোগাইবার নিমিত্ত কি মাংসের তিনি ঠিকা লইয়াছেন, আফিসের লোক তাঁহাকে অতি পরিষ্কার করিয়াই বলিল। কিন্তু সে মাংসের নাম শুনিলে হিন্দুর প্রাণ ব্যথিত হয়; সে জন্য তাহার নাম এস্থানে লিখিত হইল না। দ্রব্যটী কি, আর বোধ হয়, তাহা স্পষ্ট করিয়া বলিতে হইবে না । আফিস হইতে প্রতিদিন জাহাজে যে সে মাংস যোগাইতে হয়, মুস্তাফি তাহা জানিতেন। যখন যেরূপ জাহাজ থাকে, মাংসের প্রয়োজন তখন সেইরূপ হয় ।

  • if:lls itb{ qx & Glm www.amarboicom a 8Sw