পাতা:ত্রৈলোক্যনাথ রচনাসংগ্রহ.djvu/৫০৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

না হয়, তুমি নালিশ করিয়া লও।” এই কথা বলিয়া মাশ্চটক সে স্থান হইতে প্ৰস্থান করিলেন। বাটী হইতে বাহির হইয়া তিনি কোথায় চলিয়া গেলেন। কাঁদিতে কঁদিতে মুস্তফি মহাশয় কলিকাতায় ফিরিয়া আসিলেন। “কি করি, কোথায় যাই, কি করিয়া টাকার যোগাড় করি, কিরূপে এ ঘোর বিপদ হইতে উদ্ধার পাই”— পথে আসিতে আসিতে ক্ৰমাগত তিনি এইরূপ ভাবিতে লাগিলেন, আর ক্রমাগত একান্ত মনে তিনি ভগবানকে ডাকিতে লাগিলেন। কলিকাতায় আসিয়া প্ৰথমে তিনি তাঁহার পিতার মনিব ধরণীধর মণ্ডলের বাড়ী গমন করিলেন। ধরণীধর মণ্ডল তখন জীবিত ছিলেন না। তাহার পুত্ৰগণ পরস্পরে মোকদ্দমা করিয়া সৰ্ব্বস্বােন্ত হইয়াছে, এ কথা তিনি পূৰ্ব্বে শুনিয়াছিলেন। এ স্থানে যে টাকা পাইবেন, সে আশা তাহার কিছুমাত্র ছিল না। তথাপি জলমগ্নপ্রায় লোক যেরূপ তৃণগাছটীও ধরিয়া আপনার প্রাণরক্ষা করিতে চেষ্টা করে, আশা না থাকিলেও ইনি সেইরূপ তাহদের বাড়ীতে গমন করিলেন। কিন্তু সেস্থানে তাহার মনস্কামনা সিদ্ধ হইল না। মণ্ডল-পুত্ৰগণ হাসিয়া তাঁহাকে বলিল যে,- “আমরা যদি পাঁচশত টাকা পাই, তাহা হইলে লই; তোমাকে কোথা হইতে দিব?” তাহার পর যতগুলি বন্ধুর নাম তিনি মনে করিতে পারিলেন, যে যে লোকের তিনি কখন কোন উপকার করিয়াছিলেন, একে একে সকলের বাটীতে তিনি গমন করিলেন। কিন্তু কোন স্থানে তিনি টাকা পাইলেন না। কেবল এক জন লোক বলিলেন, — “মুস্তফি মহাশয়! অসময়ে আপনি আমার উপকার করিয়াছিলেন । আমার নিকট থাকিলে নিশ্চয় আমি আপনাকে দিতাম। আমার নিকট টাকা নাই। কিন্তু আমার চারি খানি গহনা আছে। বাধা দিলে দুই শত কি আড়াই শত টাকা হইতে পারে। যদি আপনার কাৰ্য সমাধা হয়, তাহা হইলে বলুন, গহনা বাধা দিয়া আপনাকে नि३।” মুস্তফি উত্তর করিলেন, — “না, বা টাকার কোন ফল হইবে না, সে টাকায় আমি বিপদ হইতে উদ্ধার পাইতে পারিব নষ্টা আমার বাড়ীতে এমন কোন বস্তু নাই, যাহা বেচিয়া অবশিষ্ট টাকার যোগাড় করিতে পারি; সুতরাং তোমার টাকায় আমার প্রয়োজন নাই। যাহা হউক, ভগবান তোমাকে সুখে রাখুন,- অধিক আর কি বলিব ।” এইরূপ সমস্ত দিন তিনি ঘুরিয়া বেড়াইলেন। কোন স্থানে টাকার যোগাড় করিতে পারিলেন না । সমস্ত দিন তিনি জলস্পর্শ করিলেন না। প্ৰাণের ভিতর তাঁহার ধু ধু করিয়া আগুন জুলিতেছে! ক্ষুৎ-পিপাসা আজ তাঁহার ছিল না। সন্ধ্যা হইয়া গেল। মুস্তফি মনে মনে ভাবিতে লাগিলেন, — “আফিসের চাবি লইতে আজ নিশ্চয় লোক আসিয়া থাকিবে। সে লোক নিশ্চয় গিয়া সাহেবকে বলিবে যে, আমি বাড়ীতে নাই। সাহেবের মনে সন্দেহ হইবে। কাল তিনি লোহার সিন্দুক মিস্ত্রী দিয়া খুলাইবেন। তখন আমার দোষ ধরা পড়িবে। তাহার পর আমার নামে গ্রেপ্তারি পরওয়ানা বাহির হইবে, আমাকে জেলে যাইতে হইবে। সে অপমান আমি সহ্য করিতে পারিব না। আত্মহত্যা বিনা আমার আর উপায় নাই! কিন্তু বাড়ী গিয়া মরিতে পারিব না, স্ত্রী পুত্র বড় বিপদে পড়িবে। তাহার পর, কি উপায়ে আত্মহত্যা করি! আফিম খাইয়া মরিতে অনেক বিলম্ব হইবে। পথে অজ্ঞান হইয়া পড়িলে পুলীশের লোক হয় তো হাসপাতালে পাঠাইবে। সে বড় বিড়ম্বন হইবে। চিকিৎসা করিয়া ডাক্তারগণ হয় তো আমাকে বঁাচাইবে। আমি সীতার জানি। গঙ্গায় ঝাঁপ দিলে আমার মৃত্যু হইবে না। এক কাজ করি, কলিকাতার বাহিরে যাই; মাঠের মাঝখানে, নিৰ্জ্জুন স্থানে, কোনও গাছে গিয়া গলায় দড়ি দিয়া মরি।” 8 află cios (gs se - www.amarboi conf**