পাতা:ত্রৈলোক্যনাথ রচনাসংগ্রহ.djvu/৫১২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

অগাধ সম্পত্তি রাখিয়া গিয়াছেন। তাঁহাদের পুত্র পৌত্ৰগণ পায়ের উপর পা দিয়া সুখে কালব্যাপন করিতেছেন। বল তো বাবু, তাঁহাদের মধ্যে কয়জন যুধিষ্ঠির ছিলেন? যাহা হউক, এ স্থানে আর বসিতে নাই।” এই কথা বলিয়া তিনি নীেকার ভিতর হইতে বাহিরে আসিয়া বসিলেন; রৌদ্রে তাঁহার সৰ্ব্বশরীর ভজা-ভজা হইতে লাগিল। সাধু লোকের নিন্দা ভাল লোকের প্রাণে সহ্য হয় না। সে স্থান পরিত্যাগ করাই কৰ্ত্তব্য। মাশ্চন্টক মহাশয়ের সব সুখ হইয়াছিল। তাঁহার টাকা হইয়াছিল। লোকের নিকট মান সন্ত্রম হইয়াছিল। গৃহিণী মনের মত শুদ্ধাচারিণী ছিলেন। পুত্ৰটীরও বিষয় কৰ্ম্মে মন ছিল, আর পিতার ন্যায় তিনিও ধৰ্ম্মপরায়ণ ছিলেন। কিন্তু পৃথিবীতে পূর্ণ সুখ কাহারও হয় না, একটি আধটী বিষয়ে খুঁত থাকে। পুত্রবধূটীর জন্য মাশ্চন্টক মহাশয় অসুখী ছিলেন। প্রভাবতী ততদূর শুদ্ধাচারিণী ছিল না। শ্বাশুড়ী বলিয়াছিলেন যে,- “বাসনগুলি প্রথম তিনবার ছাই দিয়া মজিবে, তাহার পর তিনবার গোবর দিয়া মাজিবে, তাহার পর সাতবার পুকুর-জল দিয়া ধুইবে, তাহার পর সাতবার গঙ্গাজল দিয়া ধুইবে । ছাড়া কাপড়গুলি তিনবার পুকুরে কাচিবে, তাহার পর তিনবার গঙ্গাজলে ধুইবে । বঁটা গাছটী প্ৰতিদিন খুলিয়া এক একটী কাটি গোবর দিয়া মাজিবে, তাহার পর পুকুর-জলে ধুইবে, তাহার পর গঙ্গাজলে ধুইবে। ঘরের দ্বারে ও বাড়ীর প্রাঙ্গণে দিনের মধ্যে সাতবার গোবর-জলের ছড়া দিবে। সকালে, মধ্যাহ্নে, অপরাহে ও সন্ধ্যার পর, দিনের মধ্যে চারিবার জলে গোবর গুদিয়া স্লেই জল আপনার মাথায় ঢালিবো।” সংসারের কাজ কৰ্ম্ম বিষয়ে শ্বাশুড়ী ঠাকুরাণী উপদেশ দিয়াছিলেন। কিন্তু সকল সময়ে প্ৰভাবতী তাঁহার আদেশ মত কাজ করিতে না। বাসন সাতবার গঙ্গাজলে না ধুইয়া ভ্রমক্রমে হয় তাে ছয়বার ধুইত। একবার,কুঁধীর, তিনবার, চারিবার, পাঁচবার, ছয়বার,” কয়বার ধোয়া হইল, আড়ালে বসিয়া ঠাকুরাণী তাহা গণিয়া দেখিতেন। শীতকালে সন্ধ্যার পর কোন কোন দিন হয় মাথায় ভাল করিয়া গোবর-জিল ঢালিত না । কদাচার যাদব মুস্তাফির কন্যা আর কত ভাল হইবে! সেজন্য শ্বশুর শ্বাশুড়ী তাঁহাকে একেবারেই দেখিতে পারিতেন না; স্বামী অধর, তাহার মুখ দৰ্শন করিতেন না। প্রভাবতীকে সৰ্ব্বদাই শাসন করিতে হইত, সৰ্ব্বদাই তাহাকে নিদারুণভাবে প্রহার করিতে হইত। কখন শ্বশুর এক দিক ও অধর অন্য দিক, দুই জনে তাহার দুই দিক ধরিতেন, শ্বাশুড়ী ঠাকুরাণী যথাশক্তি ঝাঁটার বাড়ী তাঁহাকে মারিতেন। কখন বা পিতা মাতা দুই জনে তাহাকে ধরিতেন, অধর তাহাকে যথাশক্তি কিল চাপড় অথবা বেত মারিতেন। ঝাটা দ্বারা প্রহার করিতে করিতে শ্বাশুড়ী ঠাকুরাণী শ্ৰান্ত হইয়া গেলে, কখন বা মাতাপুত্রে তাঁহাকে ধরিতেন, শ্বশুর মহাশয় নিজে জুতার প্রহারে তাহার সৰ্ব্বশরীর ক্ষত বিক্ষত করিয়া দিতেন। কিন্তু মাজিলে, ঘষিলে, শতবার ধুইলে কয়লা কি কখন কৃষ্ণবর্ণ পরিত্যাগ করিয়া শুভ্রবর্ণ ধারণ করে? এমন দিন যায় না— যে দিন প্রভাবতীর একটী না একটী দোষ বাহির হইয়া পড়ে। তাহার জ্বালায় ধৰ্ম্মপরায়ণ মাশ্চন্টক মহাশয়ের হৃদয় জর্জরীভূত হইল। তাহার জ্বালায় স্বামী অধর বাহিরে রাত্রি যাপন করিতেন। মা টাকা দিতেন।

  • "*" (*7****" sig ož35 g5 3KG a, www.amarboi.com My Gł06