পাতা:ত্রৈলোক্যনাথ রচনাসংগ্রহ.djvu/৫১৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

থাকিতে হইবে। বাপ ভাই রাজা হইলেও মেয়ে-মানুষের পক্ষে সে ঘর কিছু নহে। এইরূপ ভাবিয়া আমি চুপ করিয়াছিলাম। মনে করিতাম যে, দুঃখ আমার চিরকাল থাকিবে না। সেবা করিয়া, ভক্তি করিয়া শ্বশুর শ্বাশুড়ীকে আমি বশ করিব। তখন আমার প্রতি তাঁহাদের দয়া হইবে।” মা বলিলেন,-“ বাছা আমার!” চুপ করিয়া দুই জনে কাঁদিতে লাগিলেন। কিছু ক্ষণ কাদিয়া মা পুনরায় জিজ্ঞাসা করিলেন, — “তোর গায়ে এ সব দাগ কি করিয়া হইল? এ তো বেতের দাগ নয়, জুতারও দাগ নয়, ঝাটারও দাগ নয়, এ সব কিসের দােগ?” প্রভা বলিল,- “চারিদিন পূৰ্ব্বে এ সব দাগ হইয়াছে। মা! আমার কোন দোষ ছিল না। বলিলেন,- “দেখ, মা! আমার ভাতের ভিতর এই শিকড়টা ছিল।” প্রভাবতীর মাতা জিজ্ঞাসা করিলেন, — “কে এ কথা বলিল? ভাতের ভিতর হইতে কে শিকড় বাহির করিল? সে কে?” প্রভা কিছুক্ষণ চুপ করিয়া রহিল। কিন্তু যখন সে দেখিল যে, তবুও তাঁহার মা বুঝিতে পারিলেন না, তখন সে চুপি চুপি বলিল,— “তোমার জামাই।” মা জিজ্ঞাসা করিলেন, — “তাহার পর কি হইল?” প্রভা বলিল,— “গুণ জ্ঞান তুক তাকের, মা, আমি ক্লি জানি? শ্বাশুড়ী বলিলেন যে, আমার ছেলেকে গুণ করিবার নিমিত্ত তুই এ শিকড় ভ র রাখিয়াছিলি ।” তোমার জামাই হাসিতে লাগিলেন। বোধ হয়, তামাসা &| || 32 তিনি নিজেই ভাতের ভিতর একটা শিকড় রাখিয়াছিলেন; তাহার পর নিজেই বাহির করিয়াছিলেন। যাহা হউক, এই কথা লইয়া হুলস্থূল পড়িয়া গেল। শ্বাশুড়ী ভূআমাষ্টর্ক অনেক তিরস্কার করিলেন। সন্ধ্যার পর শ্বশুর। বাড়ী আসিলে তাঁহাকে তিনি সেই কুঁই য়া দিলেন। তাহার পর তামাক খাইবার কলুকে ও চিমটা আগুনে পোড়াইয়া তিন জনে মিলিয়া আমার সর্বশরীরে ছাঁকা দিলেন। ভাই আমার গায়ে এরূপ দাগ হইয়াছে। এ বেতের দাগ নহে! সেইদিন রাত্ৰিতে আমার জ্বর হইল। মা, নিশ্বাস ফেলিতে আমার কষ্ট হইতেছে। ইহাদের ইচ্ছা যে, আমি মরিয়া যাই। আমি মরিয়া গেলে পুনরায় বিবাহ দিয়া ইহারা অনেক টাকা পাইবেন। যাহাতে আমি শীঘ্ৰ মরিয়া যাই, সকলের সেই ইচ্ছ। তার জন্য ইহারা আমাকে এত মারেন ধরেন। এই কথা ইহারা সৰ্ব্বদাই বলিয়া থাকেন। এইবার ইহাদের মনস্কামনা পূর্ণ হইবে।” মা বলিলেন, — “বালাই।" প্ৰভা বলিল,— “মা এখানে আসিয়া পৰ্যন্ত প্ৰথম প্রথম যা পাইয়াছিলাম; কিন্তু তাহার পর একদিনও আর পেট ভরিয়া ভাত খাইতে পাই নাই। আমাকে রাধিতে হয়, সকলকে দিইয়া থুইয়া খাইতে হয়। শ্বাশুড়ী জানিয়া শুনিয়া রাধিবার নিমিত্ত কম করিয়া চাউল দেন। শেষকালে আমার আর কুলায় না। জল খাবার কাহাকে বলে, তা তো ভুলিয়া গিয়াছি। দুই বেলা দুইটী ভাত। তাও যদি পেট ভরিয়া না পাই, তাহা হইলে কাজ কৰ্ম্ম কি করিয়া করি! বৈকাল বেলা ক্ষুধায় মাথা ঘুরিতে থাকে, দাঁড়াইতে পারি না, বসিয়া পড়ি। কিন্তু বসিলেই আবার শ্বাশুড়ী গালি দিতে থাকেন। এ বাড়ীর পিছনে ছোট একটী তেঁতুল গাছ আছে দেখিয়াছ? পেটের জুলায় সেই গাছ হইতে রাশি রাশি কাচা তেঁতুল পাড়িয়া খাই। তাও খুব চুপি চুপি ৷ শ্বাশুড়ী (*xo দুনিয়ার পাঠক এক হও! ৩ www.amarboi.com/f46লাকনাথ রচনাসংখব