পাতা:ত্রৈলোক্যনাথ রচনাসংগ্রহ.djvu/৫২২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

মৃত্যুর পর এই স্নেহ মমতা ভালবাসা বরং আরও প্রসারিত হয়। পুণ্যাত্মগণ স্ত্রী পুত্র পরিবারের সহিত অনন্ত কাল অনন্ত সুখ উপভোগ করেন।” আমি জিজ্ঞাসা করিলাম,- “পুত্ৰ যদি ঘোর পাপী হয়, তাহা হইলে কি হয়?” মহাত্মা উত্তর করিলেন,- “সে যখন পৃথিবীতে থাকে, তখন তাহাকে আমরা সৎপথে আনিতে চেষ্টা করি। মৃত্যুর পরও তাঁহাকে আমরা সেইরূপ শিক্ষা প্ৰদান করি। আমাদের চেষ্টা প্রায় বিফল হয় না। তাহার চিত্ত প্রসারিত ও পরিষ্কৃত করিয়া তাহাকে আমরা এ স্থানে আনিতে সমর্থ হই। যদি একান্ত আমাদের চেষ্টা বিফল হয়, যদি পুনরায় তাহাকে মনুষ্য অথবা নিকৃষ্ট জীব হইয়া জন্মগ্রহণ করিতে হয়, তাহা হইলে তাহার সহিত আমাদের সম্বন্ধ বিচ্ছিন্ন হইয়া যায়। ঈশ্বরের কৃপায় তাহার উপর আমাদের স্নেহ মমতা থাকে না। ঈশ্বরের কৃপায় তাহাকে আমরা বিস্মৃত হইয়া যাই।” ” আমি জিজ্ঞাসা করিলাম,- “শিক্ষা-দান ব্যতীত জীবিত মানুষদের অন্য বিষয়ে আপনারা উপকার করিতে পারেন?” মহাত্মা উত্তর করিলেন,- “আমাদের শক্তি অসীম নহে। তাহা ব্যতীত জগদীশ্বর মানুষকে কতক পরিমাণে স্বাধীন করিয়াছেন। নিজের কৰ্ম্ম-ফলে মানুষ দেবত্ব লাভ করুক, ইহাই তাহার অভিপ্ৰায়। সেজন্য জ্ঞান-লাভের নিমিত্ত অনেক সময়ে কষ্টভোগ আবশ্যক। এরূপ স্থলে শক্তি থাকিলেও আমরা মানুষকে বিপদ ও দুঃখ হইতে রক্ষা করি না। চলিতে শিখিবার সময় অনেকে আছাড় খায়। তা বলিয়া মাতা তাহাকে কোলে বন্ধ করিয়া রাখেন না। যাহা হউক, এই স্থান হইতে আমাদের রশ্মি সৰ্ব্বদাই আত্মীয় স্বজনের ৱণ করি ও তাহাদিগকে নানা বিপদ হইতে রক্ষা করি। রেলের ঘটনা তুমি লোক রেল তুলিয়া ফেলিবে, তাহা জানিয়া তোমার পিতাকে আমিই সে স্থানে যাই। জ্বলন্ত চাদর নাড়িতে আমিই তোমার পিতাকে উপদেশ প্ৰদান করি ।” আমি জিজ্ঞাসা করিলাম, - “ আপনি কে ছিলেন?” মহাত্মা উত্তর করিলেন,- “পৃথিবীতে আমিই তোমার পিতার পিতা অর্থাৎ পিতামহ ছিলাম। তোমার পিতামহীও এই স্থানে আছেন। আরও পবিত্ৰ স্থানে যাইবার জন্য আমরা অনুমতি পাইয়াছি। কিন্তু তোমার পিতা মাতার জন্য অপেক্ষা করিতেছি।” আমি জিজ্ঞাসা করিলাম,- “কিরূপ ভাল কাজ করিলে মানুষ এস্থানে আসিতে পারে?” মহাত্মা উত্তর করিলেন, — ‘ঈশ্বরে ভক্তি, সত্যপথে বিচরণ ও পরাহিতে আত্ম-বিসর্জন— ইহাই ধৰ্ম্মের সার।’ আমি জিজ্ঞাসা করিলাম,- “আত্ম-বিসৰ্জন কাহাকে বলে?” মহাত্মা উত্তর করিলেন,- “নিজে কষ্ট পাইয়া পরের দুঃখ মোচন করা, নিজের ক্ষতি করিয়া পরের উপকার করা, ইহাকেই আত্ম-বিসর্জন বলে।’ আমি জিজ্ঞাসা করিলাম,- “গরিব দুঃখীকে দান?” মহাত্মা উত্তর করিলেন,- “দান আত্ম-বিসর্জনের ভিতর। নিজে কষ্ট পাইয়া যে দান, তাহাঁই প্রধান দান। লোককে দিতে পারি, সেই শক্তির জন্য মানুষ যেন প্রার্থনা করে। লোকের নিকট হইতে লইব, সে কামনা মানুষ যেন কখন না করে। তাহা অপেক্ষা নীচ প্রবৃত্তি আর নাই। কিন্তু ভগবানু তাহার কামনা পূর্ণ করেন। নানা বিপদে পড়িয়া সে লোকের অবস্থার দিন দিন অবনতি হইয়া থাকে। অবশেষে চিরকাল তাহাকে পর-প্রত্যাশী হইয়া থাকিতে হয়।

      • " ooi*" sig ooinž35 g35 KG a, www.amarboi.com My ርPSርሱ