পাতা:ত্রৈলোক্যনাথ রচনাসংগ্রহ.djvu/৫৩৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

নিজের মাথায় ঢাল,—এ অভ্যাস বহুকাল হইতে র্তাহার ছিল। গোবর-ভ্ৰমে এক্ষণে বিষ্ঠা জলে গুলিয়া তিনি ঘরে দ্বারে প্রাঙ্গণে বিছানায় হাঁড়িতে কুড়িতে, সৰ্ব্বত্র ছড়াইতে লাগিলেন। কেবল তাহা নহে। ইহাদের বাড়ীর পশ্চাতে পুষ্করিণীর এক পার্শ্বে যে পতিত ভূমি ছিল, তাহাতে পাড়ার নীচ লোকেরা মল ত্যাগ করিত। গোবর-জ্ঞানে মাশ্চটক-গৃহিণী সেই সমুদয় বিষ্ঠা অতি যত্নে সংগ্ৰহ করিতেন ও হাঁড়ি পূর্ণ করিয়া বাড়ী আনিতেন। “অনেক গোবর পাইয়াছি।” এইরূপ আনন্দে তিনি সেই সমুদয় বিষ্ঠা জলে গুলিয়া বাড়ীর সর্বত্র ছড়াইতেন ও দিনের মধ্যে চারি বার নিজের মাথায় ঢালিতেন। বিষ্ঠার গন্ধে বাড়ী পরিপূর্ণ হইয়া গেল। মাশ্চন্টক মহাশয় তক্তপোষের উপর বসিয়া ভোজন করিতেন। ভাত দাল ও তরকারী বিছানার উপর পাড়িত। মাশ্চটক-গৃহিণী কত আর পরিষ্কার করবেন! তিনি ভাবিলেন যে, গােবর-জল দিলেই শগুড়ির দোষ কাটিয়া যাইবে। এইরূপ ভাবিয়া, সেই বিষ্ঠামিশ্ৰিত জল তিনি বিছানায় ছড়াইতে ও মাশ্চন্টক মহাশয়েরও মাথায় দিনের মধ্যে চারিবার ঢালিতে লাগিলেন। সেই সময় মাশ্চন্টক মহাশয় "ময়না। ময়না” করিয়া কেঁউ মেউ করিতেন। কিন্তু গৃহিণী তাঁহার আপত্তি গ্ৰাহ্য করিতেন না। বলপূৰ্ব্বক তাঁহাকে ধরিয়া সেই তরল বিষ্ঠা তাঁহার মাথায় ঢালিয়া দিতেন। ফল কথা, শগড়ি ও বিষ্ঠায় মাখামাখি থাকিয়া স্ত্রীপুরুষে এখন কালাতিপাত করিতে লাগিলেন। মাশ্চটক-গৃহিণী প্রায় সৰ্ব্বদাই সদর দরজা বন্ধ করিয়া রাখিতেন। সহজ অবস্থাতেই পাড়ার লোক বড় কেহ তাঁহাদের বাটী গমন করিত না। কিন্তু এক্ষণে এই সমুদয় ব্যাপার দেখিয়া একেবারেই আর কেহ তাহদের বাটী যাইত না । প্রথমে, সদর দ্বারে বসিয়া দূরে দূরে থাকিয়া, মুদি তাঁহাকে দ্রব্যাদি দিয়া যাইত। সুরেশ মুদিকে টাকা দিয়া আসিত। এই ভাবে চারি বৎসর কাটিয়া গেল। কাঠ ল অথবা অন্য কোন দ্রব্য ক্রয় করিবার নিমিত্ত মাশ্চটক-গৃহিণী মাঝে মাঝে সদর য়া বাহিরে আসিতেন। একবার সকলে দেখিল যে, সাত আট দিন তাঁহাদের বন্ধ রহিল। সেই সময় মাসিক দ্রব্যাদি প্ৰদান করিবার সময় হইল। মুদি ডাকা-ডাকি করিল ও সদর দ্বার ঠেলিল। কিন্তু কোন উত্তর পাইল না। খিড়কি দ্বারে”গিয়া সে দ্বারাও বন্ধ দেখিল। তখন গোপাল, গোপালের মা প্রভৃতি প্রতিবেশী ও প্রতিবেশিনীদিগের স্মরণ হইল যে, সাত আট দিন মাশ্চন্টক-গৃহিণী স্নান করিতে, জল লইতে অথবা অন্য কোন কাজ করিতে পুষ্করিণীতে আসেন নাই। কোন একটা ঘটনা ঘটিয়াছে, সকলে এক্ষণে সেইরূপ অনুমান করিল। বাড়ীর বাহিরে বৃহৎ একটী বৃক্ষ ছিল। একজন তাহার উপর উঠিয়া দেখিল, ঘরের দ্বার জানালা সমুদয় বন্ধ রহিয়াছে। মাশ্চটক-গৃহিণীকে সে দেখিতে পাইল না। অবশেষে সকলে পরামর্শ করিয়া পুলীশে সংবাদ দিল। পুলীিশ আসিয়া দ্বারা ভাঙ্গিয়া কয়েক জন প্রতিবেশীর সহিত বাটীর ভিতর প্রবেশ করিল, তাহার পর মাশ্চন্টক মহাশয়ের ঘরের দ্বার ভাঙ্গিয়া ঘরের ভিতর প্রবেশ করিল। সকলে দেখিল যে, তক্তপোষে মাশ্চন্টক মহাশয়ের এবং মেজেতে তাঁহার গৃহিণীর মৃত দেহ পড়িয়া রহিয়াছে। সাত আট দিন পূৰ্ব্বে তাঁহাদের প্রাণত্যাগ হইয়া থাকিবে। কারণ, দুইটী দেহই স্ফীত হইয়াছিল ও পচিয়া গিয়াছিল। দুই জনেরই চক্ষু ইন্দুরে খাইয়া গিয়াছিল ও শরীরের নানা স্থান পিপীলিকা দ্বারা আবৃত হইয়াছিল। গলিত দেহ দুইটী হইতে এরূপ ভয়ানক দুৰ্গন্ধ বাহির হইতেছিল যে, ঘরের ভিতর কেহ তিষ্টিতে পারিল না; সকলেই ব্যস্ত হইয়া বাহিরে আসিয়া দাড়াইল । পুলীশের লোক ও প্রতিবেশিগণ সকলে দেখিল যে, ঘরের ভিতর বৃহৎ একখানি ভগ্ন লৌহ কড়াতে কয়লা ও গুলের ছাই পড়িয়া আছে।

  • "Worl76o7an 371 sig oriż35. g35 RFG! My www.amarboi.com My (OS