পাতা:ত্রৈলোক্যনাথ রচনাসংগ্রহ.djvu/৫৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

 কঙ্কাবতী উত্তর করিলেন,—

“টাকা কড়ি কাজ নাই বসন-ভুষণ।
আগুনে পুড়িছে পিতা শরীর এখন।
দারুণ যাতনা পিতা আর ত’ সহে না!
এই কঙ্কাবতীর নৌকাখানি ডুবে যা।”

 এই বলিতেই কঙ্কাবতীর নৌকাখানি নদীর জলে টুপ্‌ করিয়া ডুবিয়া গেল।


দ্বিতীয় পরিচ্ছেদ

জলে

নৌকার সহিত কঙ্কাবতীও ডুবিয়া গেলেন। কঙ্কাবতী জলের ভিতর ক্রমেই ডুবিতে লাগিলেন। ক্রমেই নীচে যাইতে লাগিলেন। যাইতে যাইতে অনেকদূর চলিয়া গেলেন। তখন নদীর যত মাছ সব একত্র হইল। নদীর ভিতর মহাকোলাহল পড়িয়া গেল যে, “কঙ্কাবতী আসিতেছেন।” রুই বলে,— “কঙ্কাবতী আসিতেছেন,” পুটি বলে,— “কঙ্কাবতী আসিতেছেন।” সবাই বলে, —"কঙ্কাবতী আসিতেছেন।” পথপানে একদৃষ্টে চাহিয়া জলচর জীবজন্তু সব সেখানে দাঁড়াইয়াছিল, ক্রমে কঙ্কাবতী আসিয়া সেখানে উপস্থিত হইলেন। সকলেই কঙ্কাবতীকে আদর করিল। সকলেই বলিল,— “এস, এস, কঙ্কাবতী এস।”

 মাছেদের ছেলেমেয়েরা বলিল,— “আমরা কঙ্কাবতীর সঙ্গে খেলা করিব।”

 বৃদ্ধা কাতলামাছ তাহাদিগকে ধমক দিয়া বলিলেন,— কঙ্কাবতীর এ খেলা করিবার সময় নয়। বাছার বড় গায়ের জ্বালা দেখিয়া আমি কঙ্কাবতীকে ঘাট হইতে ডাকিয়া আনিলাম। আহা কত পথ আসিতে হইয়াছে। বাছার আমার মুখ শুকাইয়া গিয়াছে। এস মা, তুমি আমার কাছে এস। একটু বিশ্রাম কর, তারপর তোমার একটি বিলি করা যাইবে।

 কঙ্কাবতী আস্তে আস্তে কাতলামাছের নিকট গিয়া বসিলেন।

 এদিকে কঙ্কাবতী বিশ্রাম করিতে লাগিলেন, ওদিকে জলচর জীবজন্তুগণ মহাসমারোহে একটি সভা করিলেন। তপস্বীমাছের দাড়ি আছে দেখিয়া, সকলে তাঁহাকে সভাপতিরূপে বরণ করিলেন। “কঙ্কাবতীকে লইয়া কি করা যায়”— সভায় এই কথা লইয়া বাদানুবাদ হইতে লাগিল।

 অনেক বক্তৃতার পর, চতুর বাটামাছ প্রস্তাব করিলেন,— “এস ভাই! কঙ্কাবতীকে আমরা আমাদের রাণী করি।”

 এই কথাটি সকলের মনোনীত হইল। চারিদিকে জয়ধ্বনি উঠিল।

 মাছেদের আর আনন্দের পরিসীমা নাই। সকলেই বলাবলি করিতে লাগিল যে,— ভাই! কঙ্কাবতী আমাদের রাণী হইলে, আর আমাদের কোনও ভাবনা থাকিবে না। বঁড়শী দিয়া আমাদিগকে কেহ গাঁথিলে হাত দিয়া কঙ্কাবতী সূতাটি ছিড়িয়া দিবেন। জেলেরা জাল ফেলিলে ছুরি দিয়া কঙ্কাবতী জলটি কাটিয়া দিবেন। কঙ্কাবতী রাণী হইলে আর আমাদের কোনও ভয়

কঙ্কাবতী
৪৫