পাতা:ত্রৈলোক্যনাথ রচনাসংগ্রহ.djvu/৫৯২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

মাতুল প্ৰস্থান করিলে, রাধামাধব ঘরের দ্বার উত্তমরূপে বন্ধ করিয়া দিলেন। তাহার পর ঘরের অন্যান্য দ্বার-জানালা ভালরূপ বন্ধ আছে কি না, তাহাও পরীক্ষা করিয়া দেখিলেন। অবশেষে ল্যাম্পের আলোক কমাইয়া দিলেন। ল্যাম্প মিটমিট করিয়া জুলিতে লাগিল। কিন্তু ঘরের সকল বস্তু স্পষ্টভাবে দেখা যাইতে লাগিল। আজ সমস্ত রাত্রি জাগিয়া কাটাইবি, এইরূপ প্ৰতিজ্ঞা করিয়া কোচের উপর রাধামাধব শয়ন করিলেন। কিন্তু একঘণ্টা পরেই তিনি ঘোেরনিদ্রায় অভিভূত হইয়া পড়িলেন। কতক্ষণ নিদ্রা গিয়াছিলেন, তাহা তিনি বলিতে পারেন না। সহসা তাঁহার নিদ্রাভঙ্গ হইল। ঘরের ভিতর ঠিকঠক শব্দ হইতেছিল। সেইদিকে তিনি চাহিয়া দেখিলেন। দেখিলেন যে, আলমারীর ধারে ধারে একজন পুরুষমানুষ বেড়াইতেছে। নিজ হাতে রাধামাধব ঘরের দ্বার-জানালা বন্ধ করিয়াছিলেন। বাহির হইতে ঘরের ভিতর লোক আসিবার সম্ভাবনা ছিল না। “এ মানুষ নহে— এ ভূত”— রাধামাধবের মনে নিশ্চয় এইরূপ বিশ্বাস হইল, ভয়ে প্রাণের ভিতর তাহার গুরু গুরু করিয়া উঠিল। সৰ্ব্বশরীরে লোমাঞ্চ হইল। চীৎকার করিয়া ফেলেন আর কি। — “ এমন সময় মনকে দৃঢ় করিয়া তিনি ভাবিতে লাগিলেন, — পৃথিবীতে ভূত নাই, থাকিলেও তাঁহাকে আমি ভয় করি না। চিরকাল লোকের নিকট আমি এইরূপ মুখশাপট করিয়াছি। আজ যদি ভয়বিহবল হইয়া চীৎকার করিয়া ফেলি, তাহা হইলে সকলের নিকট আমি হাস্যাম্পদ হইব। অতএব, প্ৰাণ থাকে আর যায়, কিছুতেই আমি চীৎকার করিব না।” রাধামাধব এইরূপ মনকে আশ্বাস দিয়া, ভূত কি করে চুপ করিয়া তাহা দেখিতে লাগিলেন। আলমারীর উপর যে সমুদয় শিশি সাজান ছিল একে একে সেই সমুদয় শিশি অতি মনোযোগের সহিত নিরীক্ষণ করিয়া দেখিতে লখ্রিষ্টার্স কোন শিশিটি বা হাতে করিয়া নাড়িয়াচাড়িয়াও দেখিতে লাগিল। ঘরের অপর পার্শ্ব শিশি দেখিতে দেখিতে ভূত রাধামাধবের দিকে ক্রমে অগ্রসর হইতে লাগিল । বুলিতেছে। বিনুনী দেখিয়া রাধামাধব ভাবিলেন যে,- “এঃ! এটা দেশী ভূত নহে, চীনে ভূত।” অর্থাৎ কি না কলিকাতায় যাহারা জুতা গড়ে ও সূত্রধরের কাজ করে, সেই চীন দেশের লোকের ভূত। আরও একটু নিকটে আসিলে তাহার পাণ্ডুবৰ্ণ মুখ দেখিয়া, রাধামাধবের মনে নিশ্চয় প্রতীতি হইল যে, সে চীনে ভূত বটে। তাহার পোষাকও সেইরূপ ছিল। নিম্নদেহ, নীল বর্ণের ঢ়িলা-ঢ়িলা ইজের দ্বারা ও উদ্ধাদেশে সেই বর্ণের ঢ়িলা-ঢ়িলা ঘুণ্টিওয়ালা জামার দ্বারা আচ্ছাদিত ছিল। করিয়া দেখিল। যখন সমুদয় শিশি দেখা হইয়া গেল, তখন সে ঘোর দুঃখসূচক এক দীর্ঘনিশ্বাস পরিত্যাগ করিল, তাহার মুখ বিষগ্র হইল, তাহার চক্ষু দিয়া ফোঁটায় ফোঁটায় জল পড়িতে লাগিল। তাহার পর কোচের নিকট আসিয়া রাধামাধবের সম্মুখে দাঁড়াইল ও অতিশয় ক্ষুন্নমনে আপনার হাত দুইটি তুলিয়া যেন কি দেখাইল । হাত দুইটি নহে, দেড়টি হাত। রাধামাধব দেখিলেন যে, তাহার দক্ষিণ হাতের আধখানি আছে। জামার আস্তিন কেবল কোণুই পৰ্যন্ত উঠিল। অবশিষ্ট ভাগ বুলিয়া পড়িল; কারণ, তাহার ভিতর হাত ছিল না। ভয়ে রাধামাধব অচেতন্যপ্ৰায় হইলেন। তাহার। সৰ্ব্বশরীর ঘৰ্ম্মে সিক্ত হইয়া গেল। চীৎকার করিয়া ফেলেন। আর কি!--এমন সময় ভূত অদৃশ্য হইয়া গেল। むbrや2 দুনিয়ার পাঠক এক হও! ~ www.amarboi.com4িঙ্গাকনাথ রচনাসংগ্ৰহ