পাতা:ত্রৈলোক্যনাথ রচনাসংগ্রহ.djvu/৬০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

নানাবিধ কাপড় আছে, সে কাপড় পরিলে খাঁদারও নাক হয়।”

 এই কথায় কাঁকড়া মহাশয়ের রাগ হইল। তিনি বলিলেন,— “তুমি কি আমাকে ঠাট্টা করিতেছ না কি? তোমার না হয় নাকটি একটু বড়, আমার না হয় নাকটি ছোট, তাতে আবার ঠাট্টা কিসের?”

 বুড়ো দরজী উত্তর করিলেন,— “না, না! তা কি কখনও হয়! তোমাকে আমি ঠাট্টা করিতে পারি? কেন? তোমার নাকটি মন্দ কি? কেবল দেখিতে পাওয়া যায় না, এই দুঃখের বিষয়।”

 বুড়ো দরজীর এইরূপ প্রিয় বচনে কাঁকড়া মহাশয়ের রাগ পড়িল। সন্তোষ লাভ করিয়া তিনি উত্তর করিলেন,— “তা বটে! তা বটে! আমার নাকটি ভাল, তবে দোষের মধ্যে যে দেখিতে পাওয়া যায় না। কোথায় আছে, আমি নিজেই খুঁজিয়া পাই না। যদি দেখিতে পাওয়া যাইত, তাহা হইলে আমার নাক দেখিয়া সকলেই প্রশংসা করিত, সকলেই বলিত, আহা! কাঁকড়ার কি নাক! যেন বাঁশীর মত। আর যারা ছড়া বাঁধে তারা লিখিত— 'তিল ফুল জিনি নাসা!' 'কিম্বা শুকচষ্ণু মত নাসা!' যা বল, যা কও, আমার অতি সুন্দর নাক।”

 কঙ্কাবতী ভাবিলেন,— “ব্যাপারখানা কি? আমি দেখিতেছি সব পাগলের হাতে পড়িয়াছি। এ কাঁকড়াটা তো বদ্ধ পাগল। এরে পাগলা গারদে রাখা উচিত।” মুখ ফুটিয়া কিন্তু কঙ্কাবতী কিছু বলিলেন না।

 সকলে পুনরায় সেখান হইতে চলিলেন। আগে কাঁকড়া মহাশয়, তাহার পর কঙ্কাবতী, শেষে কচ্ছপ। এইরূপে তিনজনে যাইতে লাগিলেন। যাইতে যাইতে অনেকদূর গিয়া অবশেষে

৪৮
ত্রৈলোক্যনাথ রচনাসংগ্রহ