পাতা:ত্রৈলোক্যনাথ রচনাসংগ্রহ.djvu/৬০৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

বুঝিল যে, সমুদয় বিদ্যাধরীর চালাকি, দানা, অনন্ত ও টাকার লোভ দেখাইয়া তাহদের নিকট হইতে সে ফাঁকি দিয়া খাইতেছে। অনুসন্ধান করিতে করিতে আরও প্রকাশ পাইল যে, ময়রাকে একখানি সেইরূপ উইল দিয়া বিদ্যাধরী অনেক টাকার সন্দেশ খাইয়াছে। গোয়ালাকে সেইরূপ একখানি উইল দিয়া সে দুধ, রাবিড়ী ও মাখন খাইয়াছে। উড়ে দোকানদারকে উইল দিয়া, সে মুড়ির চাক্তি আর তেলেভাজা বেগুনি খাইয়াছে। এইরূপ সকলকে এক একখানি উইল দিয়া, অনেক লোকের নিকট হইতে সে অনেক দ্রব্য খাইয়াছে। একটা সামান্য স্ত্রীলোক তাহাকে ফাঁকি দিয়াছে—সেই লজ্জায় পুরুষোত্তম কাহাকেও কোন কথা বলিল না। বিশেষতঃ সে ভাবিল যে,-“ম্যাগীর কােছ হইতে এ টাকা যেমন করিয়া হউক, আমায় আদায় করিতে হইবে। একথা লইয়া যদি আমি গোল করি, তাহা হইল সকলে কেবল হাসিবে, আমার টাকা আদায় হইবে না।” কিন্তু কিরূপে সে টাকা আদায় করিবে? ঝগড়া করিলে কোনো ফল হইবে না; ফাঁসি দিয়া আদায় করিতে হইবে। পুরুষোত্তম ভাবিতে লাগিল। দুই-তিন দিন চিন্তা করিয়া একদিন সন্ধ্যাবেল বিদ্যাধরীকে নিভৃতে পাইয়া জিজ্ঞাসা করিল— “তোমার জন্য কাল আমি যে মাছের ঝোল রান্ধিয়াছিলাম, তাহা খাইয়া তুমি কেমন আছ? পেট-জ্বালা বুক-জ্বালা করিতেছে?” বিদ্যাধরী বলিল,- “কেন, পেট-জ্বালা, বুক জ্বালা করিবে কেন? সে মাছের ঝোলে কি छिन?” পুরুষোত্তম উত্তর করিল,- “এমন কিছুই নয়! বাঁচি । তোমাকে যদি কেহ বিষ দিয়া মারে, তাহ শুইলৈ তাহার অনেক পুণ্য হয়। মনে নাই? তুমি কবিরাজ মহাশয়ের কােছ হইতে সেইজুৰ্ভঙ্গুষধ চাহিয়াছিলে? আমি ভাবিলাম যে,-- আহা! বিদ্যাধরী রোগের যন্ত্রণায় বড় কণ্ঠস্ট ছ, বাঁচিতে ইচ্ছা নাই, তা আমি উহাকে একটু বিষ দিই, যাহাতে শীঘ্ৰ ঈগলাভ হয়! তাই আমাদের দেশের প্রাণমুগরো গাছের শিকড় বাটিয়া মাছের ঝোলের সহিত য়া দিয়াছিলাম।” বিদ্যাধরী যেন আকাশ হইতে পড়িল। শশব্যস্ত হইয়া সে বলিল,-“বলিস কি রে আটকুড়ির বেটা। আমাকে বিষ দিয়েছিস! বলিস্ কি রে—উনুনমুখো ডেকরা বামুন!” পুরুষোত্তম বলিল,- “তা তুমি তো নিজে আমাকে বারবার বলিয়াছ যে, একতিল আমার বঁচিতে ইচ্ছা নাই। এখন অমন কথা বলিলে চলিবে কেন?” বিদ্যাধরী বলিল,- “ওরে সর্বনেশো ওরে আটকুড়ো উড়ে বামুন ! তোর মনে কি এই ছিল? ওঃ! আমার পেট জুলিয়া গেল, আমার বুক জুলিয়া গেল। প্ৰাণ যায়, ও মা! আমার প্রাণ যায়া” এইরূপ বলিতে বলিতে বিদ্যাধরী সেইখানে ধড়াশ করিয়া শুইয়া পড়িল, আর কাঁদিতে কাঁদিতে ক্ৰমাগত বলিতে লাগিল,- “আমার পেট গেল, আমার বুক গেল, আমার প্রাণ যায়। ও গিনী-মা! তোমার বিদ্যাধরী ঝি যায়। শীঘ ডাক্তার লইয়া এস। ও পিতেম! ও গোলাপী! শীঘ আয় রে! সকলে মিলিয়া আমার প্রাণ বাঁচা রে। ওমা কালি আমাকে বাঁচাও মা! তোমাকে জোড়া পাঠা দিব, মা! হে বাবা তারকনাথ! আমাকে বাঁচাও বাবা, গণ্ডি দিয়া আমি তোমার মন্দিরে গিয়া পূজা দিব বাবা!” পাছে অধিক চীৎকার করে, সেজন্য হাত দিয়া পুরুষোত্তম তাহার মুখ চাপিয়া ধরিল। পুরুষোত্তম বলিল,— “চুপ চুপ।” (y află cios (gs se - www.amarboi conf**