পাতা:ত্রৈলোক্যনাথ রচনাসংগ্রহ.djvu/৬৩৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

যোগাড় কর।” এই কথা বলিতে বলিতে শ্বশুর মহাশয় আমার ঘরের দ্বারে আসিয়া দাঁড়াইলেন। আমার মুখের দিকে একবারমাত্র দৃষ্টি করিয়াই তিনি ঘোরতর ভীত হইলেন। ভয়ে সে স্থান হইতে পলায়ন করিবার উপক্ৰম করিলেন। কিন্তু তিনি সাহসী পুরুষ ছিলেন। পালাইলেন না। পুনৰ্ব্বার আমার মুখের দিকে চাহিয়া বিস্মিত হইয়া বলিলেন, “সৰ্ব্বনাশ! এ কি হইয়াছে! তোমার নিজের মুখ কোথায় গেল। সৰ্ব্বাঙ্গসুন্দরীর মাথা তোমার ঘাড়ের উপর কি করিয়া আসিল?” সৰ্ব্বাঙ্গসুন্দরী আমার পরলোকগতা স্ত্রীর নাম ছিল। আমার নিজের মুণ্ড আমার স্কন্ধে নাই। সে স্থানে তাহার মুণ্ড বসিয়াছে। হাসিতে হাসিতে ঘাড় কেন যে খুঁটু করিয়াছিল, এখন তাহার কারণ বুঝিলাম। মুখ আমার হাঁ হইয়াছিল। আমি কোন কথা বলিতে পারিলাম না। উত্তর না। পাইয়া, শ্বশুর মহাশয় সে স্থান হইতে প্ৰস্থান করিলেন। বাড়ীর ভিতর গিয়া তিনি শাশুড়ী ঠাকুরাণীকে ডাকিয়া আনিলেন। শাশুড়ী ঠাকুরাণীও আমার ঘাড়ের উপর তাঁহার কন্যার মুখ দেখিয়া প্ৰথমে ভয়ে ব্যাকুলিত হইলেন ও সে স্থান হইতে পলাইবার উপক্ৰম করিলেন। কিন্তু রায় মহাশয় তাহার হাত ধরিয়া রাখিলেন, যাইতে দিলেন না। শাশুড়ী ঠাকুরাণী তাহার পর আমার দ্বারের নিকট মাটিতে বসিয়া পড়িলেন। কন্যার শোক এখন ক্ষুদ্ৰ উথলিয়া পড়ল। তিনি উচ্চঃস্বরে কঁদিতে আরম্ভ করিলেন। তিনি বলিলেন,- “ওগৃেষ্ঠা ! যদি ভূত হইয়া দেখা দিলি, তো সৰ্ব্বশরীরে দেখা দিলি না কেন? পরের ধড়ের খৰ্ব জর মুণ্ড বসাইলি কেন! ওগো মা গো! তুই আমার যে বড় সাধের মেয়ে ছিল। তেৱা,যেমন রূপ তেমনি গুণ ছিল। সেইজন্য আমরা শাশুড়ী ঠাকুরাণী একটু চুপ কৱিষ্ট্ৰে’শ্বশুর মহাশয় অবস্থায় দেখিলে ভয়ে লোক সব পলাইয়া যাইবে । সন্ধ্যার পর অনেকে নিমন্ত্রণে আসিবে। তাহাদের প্রণামী তাহা হইলে আমি পাইব না। যাত্ৰাও তাহা হইলে হইবে না। অতএব তুমি আজ রাত্ৰিতে এই ঘরে চুপ করিয়া বসিয়া থাক। কাল প্ৰাতঃকালে রোজা আনাইয়া তোমার ঝাড়ান-কাঁড়ান করাইব । যাহাতে এ মুখ গিয়া পুনরায় তোমার নিজের মুখ হয়, সে চেষ্টা করিব।” আমি হাঁ বুজিতে পারিলাম না। কোন উত্তর করিতে পারিলাম না। শাশুড়ীর হাত ধরিয়া শ্বশুর মহাশয় চলিয়া গেলেন। তাহারা চলিয়া গেলে, আরসিখানি লইয়া আমি মুখ দেখিলাম। আশ্চৰ্য্য কথা। আমার কীথের উপর আমার নিজের মস্তক নাই। আমার মৃত স্ত্রীর মস্তক রহিয়াছে। আহা! সেই রং, সেই দাঁত, সেই মধুর হাসি, সেই মুখশ্ৰী, আমার মুণ্ডর পরিবৰ্ত্তে, তাহার মুণ্ড আমার স্কন্ধে বসিয়াছিল বটে, কিন্তু বুদ্ধি আমার নিজের ছিল। বলা বাহুল্য যে, “আমার ঘোরতর ভাবনা হইল। এই মুণ্ড যদি আমার কাঁধে থাকিয়া যায়, তাহা হইলে আমার দশা যে কি হইবে, তাহাই ভাবিতে লাগিলাম।” কিনু বলিলেন,- “ঘোর বিপদের কথা বটে। তাহার পর?” sNAls viði (SS BS! ro www.amarboi.com ro