পাতা:ত্রৈলোক্যনাথ রচনাসংগ্রহ.djvu/৬৩৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

নিকটে একখানি খোলার বাড়ী ছিল। সেই বাড়ীর লোকদিগের সহিত আমার আলাপপরিচয় ছিল। এ স্থানে লোকের অধিক বাস ছিল না। রাত্রিকালে এ গলিতে লোকের বড় যাতায়াত ছিল না। দিনের বেলা দুই-তিন বার সেই গলিতে গিয়া বাহির হইতে বাগানের প্রাচীর ও সেই চালাতেগাছ দেখিয়া আসিলাম। চালতা-বৃক্ষের নিম্নদেশে ডাল ছিল। দুই তিনটি শাখা প্রাচীরের উপর পড়িয়াছিল। সেই ডাল ধরিয়া প্রাচীরের উপর হইতে বাগানের ভিতর সহজে নামিতে পারিব। কিন্তু বাহির হইতে প্রাচীরে কি করিয়া উঠিব, তাহাই ভাবিতে লাগিলাম। ঘুরিতে ঘুরিতে একস্থানে দুইটি বঁাশ পড়িয়া আছে দেখিলাম, মনে করিলাম, এই বঁশের সহায়তায় আমি প্রাচীরের উপর উঠিব। নবমী পূজার দিন সন্ধ্যার পর ঘোর বাদলা উপস্থিত হইল। আকাশ নিবিড় মেঘে ঢাকিয়া গেল। সমস্ত রাত্রি বৃষ্টি পড়িতে লাগিল। মাঝে মাঝে বিদ্যুতের আলোকে পৃথিবী আলোকিত হইতে লাগিল! আমি মনে ভাবিলাম যে, ভালই হইয়াছে। এ দুৰ্যোগে কেহ ঘর হইতে বাহির হইতে পরিবে না। অনায়াসে আমি বাক্সটি আনিতে পারিব। রাত্রি তিনটার সময় খোলার ঘর হইতে বাহির হইলাম। প্রাচীরের গায়ে বঁাশ দিয়া উপরে উঠিলাম। চালাতেগাছের ডাল ধরিয়া নীচে নামিলাম। হাত দিয়া মাটি খুঁড়িয়া বাক্স বাহির করিলাম। বাক্স গৰ্ত্তর উপর তুলিলাম। কিন্তু সৰ্ব্বনাশ! বাক্স অতিশয় ভারি। কি করিয়া ইহা লইয়া গাছে উঠিব, কি করিয়া প্রাচীর পার হইয়া গলিতে গিয়া নামিব! এ বুদ্ধি পূৰ্ব্বে আমার যোগায় নাই। যাহা হউক, অতিকষ্টে বাক্স আমি মাথায় তুলিলাম। এক হাতে বাক্স ধরিয়া অপর হাত দিয়া চালাতেগাছের উপর উঠিতে লাগিলাম। ভাগ্যক্রমে গাছের ডালগুলি সুবিধামত ছিল। তাই উঠিতে পারিলাম। একটি ডালের উপর উঠিলাম। দুইটুিড়িালের উপর উঠিলাম। প্রাচীরের মাথা আর অল্প দূরে আছে, আর দুই-তিনটা ডাল পার হুইসেই, তাহার উপর গিয়া উঠিতে পারি, এমন সময় বিদ্যুতের আলােকে দিনের ন্যায় চারিদিকুন্ঠলৈাকিত হইল। সেই সময় হঠাৎ করিয়া শ্বশুরবাটীর খিড়কীদ্বার কে খুলিয়া ফেলিল। পুনরায়ুঞ্জীর একবার বিদ্যুৎ হইল। ঘোর বিপদ। আমি দেখিলাম যে, দক্ষিণ হাতে ভোজালে, আর বামহাতে লণ্ঠন লইয়া মশ-মশা করিয়া শ্বশুর মহাশয় সেই চালতে তলার দিকে আসিতেছেন। তাঁহার পশ্চাতে শাশুড়ী ঠাকুরাণী আসিতেছেন। ভয়ে আমার সাৰ্ব্বশরীর কাপিয়া উঠিল। আমার হাত-পা অবশ হইয়া গেল। গাছ হইতে আমি পড়িয়া যাই আর কি। যাহা হউক, আমি নিজে পড়িলাম না। কিন্তু বাক্সটি ঝনাৎ করিয়া নীচে পড়িয়া গেল। ডালটি ভাঙ্গিয়া দূরে নিক্ষিপ্ত হইল। চকচকে টাকা সব চারিদিকে ছত্রাকার হইয়া ছড়াইয়া পড়িল । শ্বশুর-শাশুড়ী চালাতে তলায় আসিয়া উপস্থিত হইলেন। সম্মুখে একটি কাগজের তাড়া দেখিয়া শ্বশুর মহাশয় প্রথম তাঁহাই কুড়াইয়া লইলেন। লন্ঠনের আলোতে কাগজগুলি নিরীক্ষণ করিয়া দেখিতে লাগিলেন । শাশুড়ী জিজ্ঞাসা করিলেন,- “ও কি কাগজ?” শ্বশুর উত্তর করিলেন,- “নোট; এক একখানি হাজার টাকার নোট, অনেকগুলি আছে।” শাশুড়ী জিজ্ঞাসা করিলেন,- “এ বাক্স, এ নোট, এসব টাকা কোথা হইতে আসিল?” শ্বশুর উত্তর করিলেন,- “এ বাড়ী পূৰ্ব্বে একজন বড়মানুষের ছেলের ছিল। নিজের বিষয় উড়াইয়া সে কাবুলী চাকর দ্বারা ডাকাতি করাইত। চোরাই মাল সে বোধ হয়, এই স্থানে পুতিয়া রাখিয়াছিল। আমরা এইবার বড়মানুষ হইব।” ysis is! sNAls viði (SS BS! ro www.amarboi.com ro