পাতা:ত্রৈলোক্যনাথ রচনাসংগ্রহ.djvu/৬৪৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

চতুৰ্থ অধ্যায়। ভয়াবহ শব্দ রাইচরণ রায়মহাশয় যথাসময়ে গোলোকধামে আসিয়া বেণীবাবুর বাটীতে বাস করিতে লাগিলেন। বড়ালমহাশয় তাহাকে সমুদয় সম্পত্তি বুঝাইয়া দিলেন। বড়ালমহাশয়কে তিনি কৰ্ম্মচুত্যুত করিলেন না। যেমন বেণীবাবুর সময়ে তিনি কাজকৰ্ম্ম করিতেন, এখনও তিনি সেইরূপ কাজকৰ্ম্ম করিতে লাগিলেন। বেণীবাবুর আত্মীয়স্বজন কেহ ছিল না। সেজন্য উইলের প্রোবেট লাইতে কোন গোলযোগ হয় নাই। কিন্তু অল্পদিন পরে গ্রামবাসীদিগের সহিত গোলযোগ উপস্থিত হইল। গ্রামের সকলেই রায়মহাশয়ের প্রজা। প্ৰজাদিগের খাজনা বৃদ্ধি করিতে রায়মহাশয় চেষ্টা করিলেন। তাহদের সহিত সেজন্য নানারূপ মোকদ্দমা-মামলা চলিতে লাগিল । রায়মহাশয়ের পুত্র ছিল না, কেবল এক কন্যা। কন্যা ও জামাতা তাঁহার বাড়ীতেই থাকিত। তাহা ব্যতীত রায়মহাশয়ের স্ত্রীর ভগিনীর কন্যা, অর্থাৎ বোন-ঝি ও তাঁহার দুই কন্যা এই সংসারে থাকিত। স্ত্রীর ভগিনীর কন্যা বিধবা ছিলেন। সাত বৎসর এইরূপে কাটিয়া গেল। তাহার পর একদিন রাত্রিতে রায়মহাশয়ের সহসা নিদ্রাভঙ্গ হইল। মানুষের পদশব্দ তাঁহার কর্ণগোচর হইল। বাটীতে চোর প্রবেশ করিয়াছে, এইরূপ অনুমান করিয়া তিনি আলো জ্বলিলেন। দোতলার প্রায় সকল ঘরেই সারসি খড়খড়ি সম্বলিত জানালা ছিল । রায়মহাশয় যে ঘরে শয়ন করি বাটীর ভিতর দিকে তাহাতে দুইটি জানােলা ছিল। বিছানার নিকট যে জানালা,(স্তোিহর খড়খড়ি খোলা ছিল; কিন্তু সারসি অর্থাৎ কাচ বন্ধ ছিল। রায়মহাশয় দেখিলেন যে৯%দালানে দাঁড়াইয়া একজন ঘোর কৃষ্ণকায় লোক সেই কাচের উপর মুখ রাখিয়া উকিও মন্ত্র । কাচের উপর এত সবলে সে আপনার মুখ রাখিয়াছে যে, তাহার নাক যেন বৃষ্টিাির্গয়াছে। নাক যেন নাই এইরূপ বােধ হইতেছিল। “কে ও! কে ও!” বলিয়া রায়মহাশয় তাড়াতাড়ি ঘর হইতে বাহির হইলেন। দুড়দুড় করিয়া পদশব্দ হইল। পূৰ্ব্বদিকের সিঁড়িতেও সেইরূপ শব্দ হইল। তাহার পর আর কিছু তিনি শুনিতে বা দেখিতে পাইলেন না। বাটীর সকলে জাগিয়া উঠিল। নীচে একজন চাকর বাস করিত, সে দৌড়িয়া আসিল । রায়মহাশয়ের জামাতা উঠিলেন। বাহির বাটীতে বড়ালমহাশয় বাস করিতেন, তিনি আসিলেন । সমস্ত বাটী সকলে তন্নতন্ন করিয়া অনুসন্ধান করিল। চোরের চিহ্নমাত্র কেহ দেখিতে পাইল না। সদর দরজা ও অন্তঃপুরের খিড়কি-দরজা সন্ধ্যার পর যেরূপ বন্ধ করা হইয়াছিল, এখনও সেইরূপ বন্ধ ছিল। আশ্চৰ্য্য কথা! চোর কিরূপে পলায়ন করিল? বদ্ধদ্বার জানালার ভিতর দিয়া অথবা প্রাচীর ভেদ করিয়া রক্ত-মাংসের শরীরবিশিষ্ট মানুষ পলাইতে পারে না। রায়মহাশয় কি স্বপ্ন দেখিয়াছিলেন? অথবা যে কৃষ্ণকায় মূৰ্ত্তি তিনি দেখিয়াছিলেন, তাহা কি মানুষ নহে? নানারূপ তর্ক-বিতর্ক হইতে লাগিল। একমাত্র বড়ালমহাশয় নিস্তব্ধ রহিলেন। কিছুক্ষণ চিন্তা করিয়া অবশেষে জিজ্ঞাসা করিলেন, — “মানুষটা কিরূপ ঠিক করিয়া তাহা আমাকে বলিতে পারেন?” রায়মহাশয় উত্তর করিলেন,- “কেবল নিমিষের নিমিত্ত সে আমার নয়নগোচর হইয়াছিল। আমি অধিক কিছু বলিতে পারি না যে, তাহার বর্ণ অতিশয় কালো। বয়ঃক্রম চল্লিশ হইবে।

                • দুনিয়ার পাঠক এক হও! ~ www.amarboi.com ~ w8wo