পাতা:ত্রৈলোক্যনাথ রচনাসংগ্রহ.djvu/৬৬৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

সুবালা বলিল,- “সে কোথায় মা? সে স্থানে গেলে যদি দিদিকে দেখিতে পাই, তাহা হইলে আমিও সেইখানে যাইব । তুমি যদি মা, সেই স্থানে যাও, তাহা হইলে আমাকে সঙ্গে লইয়া চল ।” মাতা উত্তর করিলেন,- “সুবালা! মনে করিলে কেহ সে স্থানে যাইতে পারে না। আমাদের মাথার উপর যে পরমেশ্বর আছেন, তিনি না লইয়া গেলে সে স্থানে কেহ যাইতে পারে না। তিনি আমাকে ডাকিতেছেন, সেইজন্য আমি সেই স্থানে যাইতেছি। যখন তুমি বুড়ো হইবে, যখন তোমার দাঁত পড়িয়া যাইবে, চুল পাকিয়া যাইবে, তখন তোমাকেও তিনি ডাকিবেন। তখন তুমি সেই স্থানে যাইবে। তখন আমাকেও তুমি সেই স্থানে দেখিতে পাইবে!” সুবালা বলিল,- “তোমার চুল পাকে নাই, দাঁত পড়িয়া যায় নাই, তবে তিনি তোমাকে ডাকিতেছেন কেন?” মাতা উত্তর করিলেন,- “কোন কোন লোককে তিনি আগে থাকিতে ডাকিয়া লন, সেইজন্য আমি যাইতেছি।” সুবালা জিজ্ঞাসা করিল,- “সে কিরূপ স্থান মা?” মা উত্তর করিলেন,- “সে অতি সুন্দর স্থান। সে স্থানে কোনরূপ দুঃখ নাই। তোমার দিদি। রোগে কত কষ্ট পাইয়াছিল। সে স্থানে কাহারও রোগ হয় না, কেহ সেরূপ কষ্ট পায় না। তোমার দিদি আমাকে ছাড়িয়া গিয়াছে। তোমার দিদির জন্য আমি কত কাঁদিতেছি, তুমি কত কাদিয়াছ। সে স্থানে কেহ কাহাকেও ছাড়িয়া যায় না, পিতা-মাতাকে সে স্থানে কাঁদিতে হয় भां ।” ঈল কাজ করে, তাহা হইলে তাঁহাদের পুত্ৰ-কন্যা ষ্টীয় না। বড় হইলে তোমারও পুত্র-কন্যা হইবে। তুমি কখনও কুকাজ করিও না। তাহা তুমি মনের সুখে থাকিবে, কখনও তোমাকে দুঃখ ভোগ করিতে হইবে না।” সুবালা বলিল,— “তুমি যখন যাহা বল, তাহা আমি শুনি। সেদিন সেই চড়ুই পাখী। ধরিয়াছিলাম; তুমি বলিলে,— “সুবালা! চড়ুই পাখীকে কষ্ট দিও না; আমি তৎক্ষণাৎ তাহাকে ছাড়িয়া দিলাম।” মাতা বলিলেন, — “তুমি লক্ষ্মী মেয়ে। ভগবান তোমাকে কুশলে রাখুন, ভগবান তোমাকে সুখী করুন। আমি যাহা বলিতেছি, এক্ষণে ভালরূপ তাহা তুমি বুঝিতে পরিবে না। দেখ, সুবালা! কখনও মিথ্যা কথা বলিও না, কখনও প্রতারণা করিও না, কখনও নিষ্ঠুর হইও না, নীচের ন্যায় ব্যবহার করিও না, কখন কাহাকেও কষ্ট দিও না। কাহারও নিকট হইতে কিছু লইব- এ প্রত্যাশা কখনও করিও না। লোককে দিতে পারি, সেই কামনা করিবে। পরমেশ্বর সর্বদা তোমার নিকট আছেন, এই কথা ভাবিয়া সকল কাজ করিবে। বালকবালিকাদিগকে তিনি বড় ভালবাসেন। আমি মা, পরমেশ্বর তোমাকে দিয়াছিলেন—তুমি আমার প্রাণের সুবালা, তাহার অনুগ্রহে তোমাকে পাইয়াছিলাম। এস, মা! একবার জনমের মত তোমাকে আদর করি।” সুবালা মাতার মুখের নিকট আপনার মস্তক অবনত করিল। দুই হাতে মাতা তাহার গলা জড়াইয়া ধরিয়া তাহার মুখচুম্বন করিলেন। মাতার বক্ষঃস্থলে মাথা রাখিয়া সুবালা কাঁদিতে

                • দুনিয়ার পাঠক এক হও! ~ www.amarboi.com ~ CCI)