পাতা:ত্রৈলোক্যনাথ রচনাসংগ্রহ.djvu/৬৭০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

একধামা সন্দেশ ও দুই হাঁড়ি ক্ষীর খাইয়া গেল। কিন্তু খাদা ভূত কি জোড়া শাকচুন্নি তাহারা কিছুই করিতে পারিল না। এখন করা যায় কি?” গড়া হইল, পূজাও হইল। “খাদা ভূত ও তাহার শাকচুন্নি জোড়াকে মা, তুমি দূর কর”-এই কামনায় স্ত্রীলোকেরা ধূনা পোড়াইল। তাহার পর গ্রামের পুরুষগণ প্রতিমার সম্মুখে যোড়হাতে দাঁড়াইয়া প্রার্থনা করিল,— “হে মা রক্ষাকালী! তোমার নিকট আমরা আর কিছু চাই না, খাদা ভূত ও শাকচুন্নি জোড়ার দৌরাত্ম্য হইতে তুমি আমাদিগকে রক্ষা কর। হে মা! ভূতের উপদ্রবে: আমরা জরজর হইয়াছি। তুমি খাদা ভূতের দমন কর, শাকচুন্নি জোড়াকে তুমি দূর করা। যদি না কর, মা, তাহা হইলে আর কেহ তোমার পূজা করিবে না।” রক্ষাকালী পূজা করিয়া উপকার হইল। শাকচুন্নি জোড়াকে আর কেহ দেখিতে পাইল না। সে বৎসর খাদা ভুতকেও আর কেহ দেখিতে পাইল না। কাৰ্ত্তিক মাসে সুবালা বাড়ী ফিরিয়া আসিল। বাড়ী আসিয়া সেও চপলা সম্বন্ধে নানারূপ তদন্ত করিল। পরদিন প্ৰাতঃকালে যাহারা সেই পূৰ্ব্বদিকের ঘর দেখিয়াছিল, তাহারা বলিল, “কাজ-কৰ্ম্ম সারিয়া, আপনার ঘরে গিয়া মাদুরের উপর বসিয়া চপলা, বোধ হয়, মাথা আঁচড়াইতেছিল। ঘরে প্রদীপ জ্বলিতেছিল। সকালবেলা আমরা দেখিলাম যে, প্ৰদীপের সমস্ত তেল ও সলিতা পুড়িয়া গিয়াছে। মাদুরের উপর চিরুণী ও ছেড়া চুল পড়িয়া আছে। এলোচুলে মাথা আঁচড়াইবার সময় ভূতে ছিদ্ৰ পাইয়া তাহাকে উড়াইয়া লইয়া গিয়াছে।” চপলার মাতা বলিল,— “কি বলিব দিদি! দুইটি মেটায় লইয়া এই সংসারে ছিলাম। বিধাতা তাহাতেও বাদ সাধিলেন!” 9. য়া সেখাির্কতে পারিত না। যেদিন হইতে রায়মহাশয় তাহাকে তোমাদের বাড়ী যাইতে মানা করিলেন, সেইদিন হইতে তাহার বড় কষ্ট হইল। তোমাদের বাগানে দাঁড়াইয়া দােতলায় জানালার দিকে সে একদৃষ্টিতে চাহিয়া থাকিত। একবার যদি দূর হইতে চপলাকে সেই জানালার ধারে দেখিতে পাইত তাহা হইলে কৃতাৰ্থ হইয়া প্ৰফুল্লমুখে সে বাটী ফিরিয়া আসিত। আমি এ দিনের বেলার কথা বলিতেছি। রাত্ৰিতে সে কোথায় গিয়াছিল, তাহা আমি জানি না।” সুবালা বলিল,- “সে রাত্রে পাগলী বােধ হয় খাদা ভূতকে দেখিয়াছিল?” চপলার মা উত্তর করিল,- “হাঁ দিদি! তাহাই বোধ হয় হইয়াছিল। একে তো পাগলী! তাহার উপর ভয় পাইয়াছিল। মুখ শাকবর্ণ হইয়া সে বাড়ীতে আসিয়া পড়িল। আমরা তাহার দাঁতকপাটি ভাঙ্গিলাম। কিন্তু জ্ঞান আর কিছুতেই হয় না। অনেকক্ষণ পরে জ্ঞান হইল। তাহার পর “খাদা ভুত” এই কথাটি বলে আর পুনরায় মূৰ্ছিত হয়। রাত্রি দুই প্রহরের পর খাদা ভূতের সেই ভয়ানক ‘হু হু' শব্দ হইল। সেই শব্দ শুনিয়া মেয়েটা এমনি মূৰ্হিত হইল যে, আমরা মনে করিলাম, আর সে বঁাচিবে না। যাহা হউক, আপাততঃ তাহার প্রাণটা বঁচিয়াছে। কিন্তু সেই অবধি কাহারও সহিত ভালরূপ কথা কয় না। কবিরাজমহাশয় বলিয়াছেন যে, তাহা “স্তান্ত্রিত বাই” হইয়াছে। তোমরা দিদি, বড়-মানুষ। কিন্তু আমি খাদা ভূতের কি করিয়াছি যে, সে আমার উপর এরূপ বাদ সাধিল । আমার একটি কন্যাকে সে একেবারে খাইয়া ফেলিল। আর

                • দুনিয়ার পাঠক এক হও! ~ www.amarboi.com ~ wo