পাতা:ত্রৈলোক্যনাথ রচনাসংগ্রহ.djvu/৬৮০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

যে-সে পথ নহে, তিন মাথার পথ, অর্থাৎ তিনটি গ্ৰাম্য পথ এই স্থান হইতে তিন দিকে গিয়াছিল। তেমাথা পথের ঠিক সন্ধিস্থলে পুঁটুলি তিনটি পড়িয়াছিল। লোকে ভাবিয়া দেখিল যে, নিরীক্ষণ করিয়া দেখিল । ভয়ে তাহারা হতভম্ব অবাক হইয়া রহিল! বলিবে আর ছাইভস্ম কি ! এ ঘোর সকর্বনাশের কথা বাক্য দ্বারা প্ৰকাশ করিয়া বলিতে পারা যায় না । সেজন্য অতি গভীরভাবে দুই-চারি বার ঘাড় নাড়িয়া তাহারা স্ব স্ব স্থানে প্ৰস্থান করিল। কিন্তু গ্রামের লোক নিৰ্ব্বোধী নহে! বুঝিতে। আর কিছু বাকি রহিল না। উহাকে তুক বা গুণ বলে। অতি সাংঘাতিক তুক্‌! এ তুক মাড়াইলে বা ডিঙ্গাইলে আর রক্ষা নাই। গ্রামের লোকের এরূপ সৰ্ব্বনাশ কে করিয়াছে, তাহাও কি আর বুঝিতে বাকী থাকে? কাহার অনেক টাকা আছে? মরণাপন্নরোগগ্ৰস্ত হইয়া কে বিছানায় পড়িয়া আছে? কে তাহাকে বঁাচাইয়া রাখিতে চেষ্টা করিতেছে? বড়ালমহাশয়কে সকলে ছিছি করিতে লাগিল । দূর হইতে পুঁটুলি তিনটির উপর অনেক শুষ্ক খড় নিক্ষেপ করিয়া অগ্নিদ্বার দগ্ধ করা হইল। তাহা যেন হইল। কিন্তু যুধিষ্ঠির ঘোষের পুত্র হেরম্ব পুঁটুলির উপর যে পা রাখিয়াছিল, এখন তাহার উপায় কি? সকলে বলিল যে, সে আর কিছুতেই রক্ষা পাইবে না! তাহার পিতামহী, তাহার মাতা, তাহার জ্যেঠাই-মা, তাহার খুড়ী-মা সকলে উচ্চৈঃস্বরে ক্ৰন্দন করিতে লাগিল। গ্রামের অন্যান্য স্ত্রীলোকও আসিয়া সেই ক্ৰন্দনে যোগদান করিল। ক্ৰন্দনের কোলাহলে গ্রাম পরিপূর্ণ হইল। বালক হেরম্ব তৎক্ষণাৎ শয্যাশায়ী হইয়ুপুড়িল। মুখ দিয়া তাহার কথা বাহির হয় না, দেখিতে দেখিতে সে দুৰ্ব্বল হইয়া পড়িলু (6রৈাগ নহে যে, ডাক্তার-বৈদ্য আসিয়া চিকিৎসা করিবে। যুধিষ্ঠির ঘোষ মাথায় হাত শি হইয়া বসিয়া পড়িল । ভাগ্যে গ্রামে গৌরিবিণী নামে এক রণী ছিল। সেকালে যখন ডাইনীর উপদ্রব অতিশয় প্রবল ছিল, তখন গীেরবিণী দিদিমায়ের নিকট হইতে অনেকগুলি আড়াই অক্ষরের মন্ত্র ও অনেকগুলি ঔষধ রাখিয়াছিল। তুকের জনরব ও কান্নার রোল শুনিয়া লাঠি ধরিয়া ঠক ঠক করিতে গুড়ি গুড়ি গীেরবিণী বুড়ী আসিয়া উপস্থিত হইল। “ভয় নাই, ভয় নাই, আমি ছেলেকে বঁাচাইব”, এই বলিয়া সকলকে সে আশ্বাস প্ৰদান করিল। তাহার পর হেরম্বর নিকটে বসিয়া সে ঝাড়-ফু আরম্ভ করিল। মন্ত্র ও ফুৎকারের প্রভাবে বালক উঠিয়া বসিল। গীেরবিণী বলিল যে, রাম-কবিচের কৰ্ম্ম নহে। এ ভূত নহে যে, রাম-কবচকে ভয় করিবে। ইহাকে যাদু বলে। অবশেষে সে ঔষধসম্বলিত একটি নেকড়ার পুঁটুলি অর্থাৎ মাদুলি বালকের গলায় পরাইয়া দিল! তাহা পরিধান করিয়া বালক সম্পূর্ণরূপে সুস্থ হইল। গ্রামের লোক ভাবিল যে, গীেরবিণী অসাধ্য সাধন করিল, বলিতে গেলে মরা মানুষকে প্ৰাণদান করিল। সকলে তাহাকে ধন্য ধন্য করিতে লাগিল। গীেরবিণীর আরও সুখ্যাতি এইজন্য হইল যে, মন্ত্র অথবা ঔষধের মূল্যস্বরূপ কাহারও নিকট হইতে সে একটি কপৰ্দকও গ্ৰহণ করে না। তবে কি জান যে, যে গাছের শিকড় ঔষধস্বরূপ ব্যবহৃত হয়, সে গাছকে প্রথম জানান দিতে হয়। পূৰ্ব্ব রাত্রিতে সে গাছের মূলে পাঁচটি পয়সা, পাঁচ সের ধান, পাঁচ গণ্ডা পান, পাঁচ গণ্ডা সুপারি ও পাচ গণ্ডা বিচালি বা খড়ের আটটি রাখিয়া আসিতে হয়। গীেরবিণী বলিল, “এবার আমি অনেক কষ্ট শিকড় পাইয়াছি। কিন্তু আজ রাত্রিতে ঐ সকল দ্রব্য সেই গাছের গোড়ায় রাখিতে হইবে। যদি না রাখি, তাহা হইলে ভবিষ্যতে আর আমি কখন ঔষধ পাইব না। শিকড় দূরে থাকুক গাছটি পৰ্যন্ত অদৃশ্য হইয়া যাইবে।” পুত্রের পাপের পরিণাম। sNAls viði (SS BS! ro www.amarboi.com ro &9ግ6ኡ