পাতা:ত্রৈলোক্যনাথ রচনাসংগ্রহ.djvu/৬৮৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

যাহাকে ইচ্ছা, তাহাকে প্ৰদান করুন। আমি কিছুমাত্র গোল করিব না। কেবল কৌতুহলের বশবৰ্ত্তী হইয়া আমি আমার উকীলকে প্রেরণ করিলাম।” বিজয়বাবু যে নিজে আসিবেন না, বড়ালমহাশয় তাহা বুঝিয়াছিলেন। তিনি আসিবেন জানিলে, বড়ালমহাশয় বোধ হয় তাহাকে আহবান করিতেন না। যাহা হউক, ২১শে শ্রাবণ রায়-গৃহিণী উইল করিলেন। বড়ালমহাশয়, ধনুকধারী, নূতন চিকিৎসক, রায়মহাশয়েরর উকীল ও বিজয়বাবুর উকীল, এই কয়জন সে স্থানে উপস্থিত ছিলেন। ধনুকধারী ব্যতীত আর সকলে উইলে সাক্ষী হইলেন। নূতন চিকিৎসার গুণে রোগিণী কয়দিনে বিশেষরূপ ফললাভ করিয়াছিলেন। ক্ষয়কাস ও উদরাময় রোগে এতদিন যে তিনি ভূগিতেছিলেন, মুখশ্ৰী দেখিয়া তাহা বোধ হইল না। তবে অনেক দিন রোগে ভূগিলে যাহা হয়,-তিনি খিটখিটে ও রাগী হইয়াছিলেন। উইল করিবার সময় চিকিৎসকের আজ্ঞায় ধনুক ধায়ী তাঁহাকে ঔষধ দিতে গেল। ঔষধে কি একটু পড়িয়াছিল। তাহা দেখিয়া ক্ৰোধে তিনি কাচের গেলাস ছুড়িয়া ফেলিয়া দিলেন। গেলাসটি মেজেতে ঝনাৎ শব্দে পড়িয়া শতখণ্ডে ভাঙ্গিয়া গেল! কাৰ্য সমাপ্ত হইলে উকীল দুইজন একবাক্যে বলিলেন, “আপনাকে যে এরূপ সুস্থ অবস্থায় দেখিব, সে প্রত্যাশা আমরা করি নাই। আপনি যে কঠিন রোগে কষ্ট পাইতেছেন, আপনার মুখশ্ৰী দেখিয়া তাহা বোধ হয় না। ভরসা করি, শীঘ্রই আপনি সম্পূর্ণভাবে আরোগ্যলাভ করিবেন।” এই বলিয়া সকলে প্রস্থান করিলেন। রায়-গৃহিণী যে উইল করিলেন, তাহার মৰ্ম্ম এইরূপ,- প্রথম। স্থাবর-অস্থাবর সমুদয় সম্পত্তির সুবালা অধিকারিণী হইবেন। দ্বিতীয়। অনেকদিন বিশ্বাসের সহিত কাজটুকুৰ্ম্ম করিয়াছেন, সেজন্য পুরস্কারস্বরূপ বড়ালমহাশয় এক হাজার টাকা পাইবেন। ৫৫%, তৃতীয়। যতদিন বড়ালমহাশয় , ততদিন তিনি পঞ্চাশ টাকা হিসাবে মাসিক বেতন পাইবেন । চতুর্থ। তাঁহার মৃত্যু হইলে তাঁহার স্ত্রী ভরণপোষণের নিমিত্ত ত্রিশ টাকা হিসাবে মাসিক বৃত্তি পাহিবেন । পঞ্চম। তাঁহার মৃত্যু হইলে তাঁহার কৰ্ম্মে ধনুকধারী নিযুক্ত হইবে। আপাততঃ সহকারী কৰ্ম্মচারিস্বরূপ ধনুকধারী কুড়ি টাকা বেতন পাইবে । নূতন চিকিৎসার গুণে রায়-গৃহিণী আরোগ্য লাভ করিবেন, সকলে এইরূপ আশা করিয়াছিল। কিন্তু সে আশা সফল হইল না। উইল করিবার দুইদিন পরে অর্থাৎ ২৩শে শ্রাবণ সহসা তাঁহার মৃত্যু হইল। সকলে বলিল যে, “সুবালার কি সৌভাগ্য। কেবলমাত্র দুইদিন পূৰ্ব্বে যদি রায়গৃহিণীর মৃত্যু হইত, তাহা হইলে সুবালা এ সম্পত্তি পাইতেন না। সুবালাকে বিষয় দিবার নিমিত্তই যেন তিনি জীবিত ছিলেন ।” এই দুর্ঘটনার চারিদিন পরে বড়ালমহাশয় সুবালাকে আনাইলেন। সুবালার কাকা ও বিধবা পিসী সঙ্গে আসিলেন। কাকা কলিকাতায় কৰ্ম্ম করেন। তিনি নিয়ত সুবালার কাছে থাকিতে পারিলেন না। সুবালার খুড়ীমাতা ছোট ছোট পুত্ৰ-কন্যা লইয়া ব্যস্ত। তিনি আসিতে পারিলেন না। সুবালাকে রক্ষণাবেক্ষণ করিবার নিমিত্ত পিসীমা তাঁহার সহিত বাস করিতে লাগিলেন। বড়ালমহাশয় সমুদয় কাজকৰ্ম্ম করিতেন। কাকা মহাশয় মাঝে মাঝে আসিয়া তত্ত্বাবধারন করিতেন।

                • দুনিয়ার পাঠক এক হও! ~ www.amarboi.com ~