পাতা:ত্রৈলোক্যনাথ রচনাসংগ্রহ.djvu/৬৯৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

তৃতীয় অধ্যায় সুবালা ও পশুপক্ষী ভয়ে সুবালার মুখ শুষ্ক হইয়া গেল। ভয়ে তাহার পদদ্বয় কঁাপিতে লাগিল। খাট হইতে তিনি যে পলায়ন করিবেন, অথবা সে স্থানে বসিয়া তিনি যে চীৎকার করবেন, সে ক্ষমতা তাঁহার রহিল। না। তবে বাঘা নিকটে আছে, সেজন্য কিয়ৎপরিমাণে তাঁহার মন আশ্বাসিত হইল। পূৰ্ব্বেই বলিয়াছি যে, সুবালা বাঘার প্রাণরক্ষা করিয়াছিলেন। বড় হইয়া সেও সে ঋণ পরিশোধ করিয়াছিল। দীন-দুঃখী-পীড়িত-তাপিত মানুষদিগের প্রতি যেরূপ সুবালার দয়া-মায়া ছিল, জীব-জন্তুর প্ৰতিও সেইরূপ দিয়া ছিল। বাড়ীতে অনেকগুলি দুগ্ধবতী গাভী ছিল। তাহাদের ভালরূপ সেবা হইতেছে কি না, প্রতিদিন সন্ধ্যার পূৰ্ব্বে সুবালা নিজে গোয়ালে গিয়া সে বিষয়ের তত্ত্বাবধারণ করিতেন। কোন গরুর সম্মুখে আহার না থাকিলে কখন কখন তিনি নিজেই খড় কাটিতে বসিতেন। গোেশালা সৰ্ব্বদাই পরিষ্কারপরিচ্ছন্ন থাকিত। কোন স্থানে বিন্দুমাত্র গোময় বা গোমূত্র পড়িয়া থাকিত না। কোন গরুর গাত্রে বিন্দুমাত্র লাগিয়া থাকিত না। কোন বিষয়ে অপরিষ্কার দেখিলে তিনি নিজে পরিষ্কার করিতেন । মাতা উপদেশ দিয়াছিলেন যে,— “সুবালা! কখনও নিষ্ঠুর হইওনা। চড়ুই পাখীটি ছাড়িয়া দাও।” জ্ঞান হইলে সুবালা বুঝিয়াছিলেন যে, পক্ষীপ্রগকে পিঞ্জরে বন্ধ করিয়া রাখিলে তাহাদের ক্লেশ হয়, সেজন্য কখনও তিনি পক্ষী পাির্দষ্ট করেন নাই। তবে ঘটনাক্রমে একবার একটি শালিক পাখী তাহার হস্তগত w পাখীতে বাসা করিয়াছিল। তাহাদের দুইটি ১t মাটিতে পড়িয়া গিয়াছিল, একটি মরিয়াংখ্রিয়ছিল, অপরটি জীবিত ছিল; কিন্তু তাহার একটি পা ভাঙ্গিয়া গিয়াছিল। ছানাটিকে বাড়ী সানিয়া ভাঙ্গা পায়ে চুন-হলুদ লেপন করিয়া, নেকড়ার ফালি দিয়া সুবালা তাহার উপর ছানাটিকে রাখিয়া, পাখীদের বাসার নিকট গাছে সেই চুবড়ীটি তিনি বুলাইয়া দিলেন। ছানাটির মাতা-পিতা প্রথম নিকটে আসিতে সাহস করে নাই। নিকটস্থ ডালে বসিয়া কেচর-মোচর করিতে লাগিল। শাবককে বাসায় আসিবার নিমিত্ত যেন তাহারা ডাকিতে লাগিল। যখন দেখিল যে, ছানা ঘরে ফিরিয়া আসিল না, তখন ক্রমে ক্রমে নিকটে আসিয়া তাহারা তাহার মুখে আহার দিতে লাগিল। দূর হইতে সুবালা পাখী দুইটির ব্যবহার দেখিতেছিলেন। মাতা-পিতা সন্তানকে আহার দিতে লাগিল দেখিয়া সুবালার আনন্দ হইল। সন্ধ্যা হইলে সুবালা ছানাটিকে বাড়ীতে আনিয়া রাখিলেন। তিনি মনে করিয়াছিলেন যে, বড় হইয়া উড়িতে শিখিলে সে তাহার মাতা-পিতার সহিত চলিয়া যাইবে। কিন্তু ততদিন পৰ্যন্ত মাতা-পিতা তাহাকে প্রতিপালন করিল না। ছানাটি উড়িতে শিখিবার পূৰ্ব্বেই তাহারা কোন স্থানে চলিয়া গেল। তখন হইতে সুবালাকে কাজেই তাহার প্রতিপালনের ভার গ্ৰহণ করিতে হইল। পাখীটি বড় হইয়া সৰ্ব্বদা সুবালার নিকট থাকিতে, তাহার কাধে বসিতে, অথবা তাঁহার সহিত এ ঘর সে ঘর বেড়াইতে ভালবাসিত। রাত্রিকালে সে একটি আলমারির মাথায় শয়ন করিয়া নিদ্রা যাইত। সুবালা কখনও তাঁহাকে পিঞ্জরে আবদ্ধ করিয়া রাখিতেন না। গ্ৰীষ্মকালে দিনের বেলা কখন কখন সে বাগানে যাইয়া কোন গাছের পত্রের ভিতর লুক্কায়িত থাকিত। কিন্তু সুবালা ডাকিলেই সাড়া দিত ও গাছ হইতে উড়িয়া তাঁহার মাথায় আসিয়া বসিত। w8 দুনিয়ার পাঠক এক হও! ৩ www.amarboi.comন্মিলাক্যনাথ রচনাসংগ্ৰহ