পাতা:ত্রৈলোক্যনাথ রচনাসংগ্রহ.djvu/৭০৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

সুন্দর বকলসটি ধরিয়া রহিলেন। সুবালার পশ্চাদিকে কোলাহল ক্রমে নিকটবৰ্ত্তী হইতে লাগিল। সুবালার হাত হইতে মুক্ত হইয়া সেই দিকে যাইবার নিমিত্ত বাঘা লম্বফ ঝমৃঢ় করিতে লাগিল। মাটিতে বসিয়া দুইহাতে প্ৰাণপণে সুবালা তাহার গলার বকলস ধরিয়া রহিলেন। কিন্তু বাঘা এত লাফালাফি করিতে লাগিল যে, তাহাকে ধরিয়া রাখা ভার হইল। পশ্চাদিকে গোলমাল আরও নিকটবৰ্ত্ত হইল। বাঘাকে লইয়া সুবালা ব্যস্ত ছিলেন । পশ্চাদিকে কেন এত । গোলামাল হইতেছিল, তাহা দেখিবার নিমিত্ত তিনি অবসর পাইতেছিলেন না। পশ্চাদিকে ত্ৰিলোচন ও শঙ্করার কণ্ঠস্বর তিনি শুনিতে পাইলেন । উচ্চৈঃস্বরে তাহারা চীৎকার করিতেছিল,— “সুবালা দিদি, পলাও, সুবালা দিদি, পলাও!” সেই মুহূৰ্ত্তে সম্মুখ দিক হইতে বড়ালমহাশয় চীৎকার করিয়া বলিলেন,- “সুবালা দিদি, বাঘকে ছাড়িয়া দাও। শীঘ্ৰ বাঘাকে ছাড়িয়া দাও।” সুবালা বাঘকে ছাড়িয়া দিলেন। তাহার পর ফিরিয়া দেখিলেন যে,- সৰ্ব্বনাশ! একটা হন্যা বা ক্ষিপ্ত শৃগাল নক্ষত্ৰবেগে তাঁহার দিকে দৌড়িয়া আসিতেছে। তাহার পশ্চাতে ত্ৰিলোচন, শঙ্করা ও অন্যান্য অনেক লোক লাঠি হাতে করিয়া দৌড়িতেছে। কিন্তু সে-দ্রুতগামী ক্ষিপ্ত শৃগালের সহিত কে দৌড়িতে পারে? তাহারা অনেক পশ্চাতে পড়িয়াছিল। সম্মুখ দিকে বড়ালমহাশয়ও অনেক দূরে দৌড়িয়া আসিতেছিলেন। কি পশ্চাতের, কি সম্মুখের কেহই সুবালাকে রক্ষা করিতে পারিত না। তাহার সেস্থানে পীে ছিবার পূৰ্ব্বেই শৃগাল সুবালার উপর পড়িয়া তাহাকে দংশন করিয়া ক্ষত-বিক্ষত করিত। নিকটস্থ গ্রামে অনেকগুলি মানুষ ও গরুকে সে দংশন করিয়াছিল। যে সকল মানুষ ও সে দংশন করিয়াছিল, তিনমাসের মধ্যে তাহারা সকলেই ভয়ানক জলাতঙ্ক রোগে পতিত হইয়াছিল। সেজন্য সুবালাকে যদি হন্য শৃগাল কামড়াইত, তাহা হইলে ঘটিত । বাঘকে ছাড়িয়া, পশ্চাদিকে ফিরিয়া, দেখিলেন যে, শৃগাল তখন প্রায় বিশহত দূরে রহিয়াছে। কিন্তু এত দ্রুতবেগে সে আসিতেছিল যে, নিমিষের মধ্যে সে সুবালার উপর আসিয়া পড়িত। ভাগ্যে বড় * ছাড়িয়া দিতে বলিলেন, ভাগ্যে সুবালা তৎক্ষণাৎ তাহাকে ছাড়িয়া দিলেন, তাই সুবালার প্রাণরক্ষা হইল। চক্ষুর পলকে বাঘা গিয়া শৃগালের উপর পড়িল। তাহার টুটি ধরিয়া দুই চারিবার তাহাকে এ-দিকে ও-দিকে ঝাকাইল। সামান্য আঘাতেই ক্ষিপ্ত শৃগালের প্রাণবিয়ােগ হয়। তীক্ষ্ণদন্ত দ্বারা তাহার গলদেশ ধরিয়া বাঘা যেই তাহাকে দুই চারিবার এ-দিকে ও-দিকে নাড়িল, আর তৎক্ষণাৎ তাহার মৃত্যু হইল। বাঘা এইরূপ কৌশলে তাহাকে ধরিয়াছিল যে, শৃগাল তাহাকে কামড়াইতে অবসর পায় নাই। কিন্তু শৃগাল যদি দংশন করিত, তাহা হইলে বাঘারও প্রাণসংশয় হইত। পশ্চাৎ ও সম্মুখদিকের লোকসকল আসিয়া মৃত শৃগালের নিকট দাঁড়াইল। ঘোর বিপদ হইতে সুবালা রক্ষা পাইলেন, সেজন্য সকলের আনন্দের সীমা রহিল না। বাঘাকে সকলে আদর করিতে লাগিল। অস্থিসম্বলিত ভাল মাংস আনাইয়া রায়-গৃহিণী সেদিন বাঘকে নিমন্ত্ৰণ করিলেন। শৈশবকালে সুবালা বাঘার প্রাণরক্ষা করিয়াছিলেন, বাঘা এক্ষণে সেই ঋণ পরিশোধ করিল। অন্ধকার ঘর হইতে খোনা স্বরে কে যখন বলিল,- “তুমি আমার্কে ডাকিলে কেঁন?” তখন বাঘা সেইদিকে একদৃষ্টিতে চাহিয়া মেঘগৰ্জ্জনের ন্যায় গভীর গর্জনে গোঙাইতে লাগিল। “সুবালাকে একেলা ফেলিয়া যাওয়া উচিত নহে,” বোধ হয় এইরূপ ভাবিয়া বাঘা সে স্থান হইতে উঠিল না, অন্ধকার ঘরের ভিতর প্রবেশ করিতে সে চেষ্টা করিল না। Vestr দুনিয়ার পাঠক এক হও! ~ www.amarboi.comৰ্ম্মিািক্যনাথ রচনা সংগ্ৰহ