পাতা:ত্রৈলোক্যনাথ রচনাসংগ্রহ.djvu/৭১৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

বড়ালমহাশয় উত্তর করিলেন,- “না, সে ইট এই বাড়ীতে কোন স্থানে লুক্কায়িত আছে। পূৰ্ব্বে বলিয়াছি যে, টাকা-কড়ি সম্বন্ধে তাঁহার ভাব অনেকটা সেকালের লোকের মত ছিল। বোধ হয়, কোন স্থানে সেই সমুদয় ইট তিনি পুঁতিয়া রাখিয়াছেন, অথবা কোনরূপ নূতন উপায় অবলম্বন করিয়া তিনি তাহা লুক্কায়িত রাখিয়াছেন। সুবালা দিদি রাগ করিও না। আমি ভাবিলাম যে, এ কথা যদি প্ৰকাশ করি, তাহা হইলে রায়মহাশয়ের আজ্ঞায় সকলে এ বাড়ী তন্ন তন্ন করিয়া অনুসন্ধান করিবে। একটি পয়সাও আমি পাইব না। সেজন্য আমি নিজেই চুপি চুপি অনুসন্ধানে প্ৰবৃত্ত হইলাম। মনে করিলাম যে, যদি পাই তাহা হইলে একখানি রাখিয়া বাকীগুলি দেয়াল ভাঙ্গিয়া দেখিয়াছি, বাগানে অনেক অনুসন্ধান করিয়াছি; ফলকথা খুঁজিতে আমি কিছু বাকী রাখি নাই, কিন্তু সেইটের আমি সন্ধান পাই নাই। যাহা হউক, এতদিন পরে এ কথা আজ আমি প্ৰকাশ করিলাম। এক্ষণে প্ৰকাশ্যভাবে পুনরায় অনুসন্ধান করিব।” অন্ধকার ঘর হইতে খোেনা স্বরে শব্দ আসিল, — “সে সোনার ইট আমার। রাজাবাবু আমাকে দিয়াছেন।” চমকিত হইয়া বড়ালমহাশয় জিজ্ঞাসা করিলেন, — “ও কে?” একটু হাসিয়া বিনয় উত্তর করিলেন,- “খীদা ভুত।” ঘোরতর বিস্মিত ও ভীত হইয়া বড়ালমহাশয় বলিলেন,- “খাদা ভূত! দিনের বেলা খাদা ভূত!” বিনয় হাসিতে লাগিলেন। সুবালার মুখে হাসি দেখা দিল। বড়ালিনী ভয়ে কাপিতে লাগিলেন । ○ মাঝের দ্বার খুলিয়া বিনয় বললেন,—“ড্ৰািঞ্ছত। এই স্থানে এস।” খাদা ভূত আসিয়া সকলের সম্মুখে আিদ । বড়ালমহাশয় একদৃষ্টিতে তাহাকে দেখিতে লাগিলেন, সে-ও তাহার মুখের দিকে ঝুঁহিয়া রহিল। অবশেষে বড়ালমহাশয় জিজ্ঞাসা —“জীয়ন্ত মানুষ, না ভূত?” বিনয় উত্তর করিলেন,- “জীয়ন্ত মানুষ। কালা-বালা মনে নাই, ইনিই সেই কালা-বাবা।” বিনয়ের দিকে চাহিয়া বড়ালনী বলিলেন, — “বটে! আমি মনে করিয়াছিলাম, তুমি অতি ভাল মানুষ; মিছামিছি ভয় দেখাইতেছিলে!” বিনয় ঈষৎ হাস্য করিলেন । বড়ালমহাশয় খাদা ভুতকে বলিলেন,- “কি মনে করিয়া পুনরায় আসিয়াছ, বাপু? রাজাবাবুর সংসার ছারেখারে দিয়াছ। রায়মহাশয়ের সর্বনাশ করিয়াছ। আবার কি মনে করিয়া আসিয়াছ, বাপু?” খাদা ভুত উত্তর করিল,— “রাজাবাবু সম্বন্ধে আমাকে দোষী বলিলেও বলিতে পার; কিন্তু রায়মহাশয়ের আমি কি করিয়াছি? শুনিয়াছি যে, কে একজন রায়মহাশয় আসিয়া এই বিষয়ের অধিকারী হইয়াছিলেন। আরও শুনিয়াছি যে, কয়েক বৎসরের ভিতর তাঁহার পরিবারের অনেকগুলি লোক মারা গিয়াছে। কিন্তু তাঁহাতে আমার দোষ কি? যাহাদের কােল পূর্ণ হইয়াছিল, তাহারা মরিয়া গিয়াছে।” বড়ালমহাশয় জিজ্ঞাসা করিলেন,- “শাকচুন্নি আনিয়া এ গ্রামে ছাড়িয়াছিলে কেন?” খাদা ভূত উত্তর করিল,— “শাকচুন্নি!! আমি শাকচুন্নি কোথায় পাইব?” বড়ালমহাশয় পুনরায় জিজ্ঞাসা করিলেন, —“গরীব চপলাকে তুমি খাইয়াছ কেন?”

                • দুনিয়ার পাঠক এক হও! ~ www.amarboi.com ~ Roy