পাতা:ত্রৈলোক্যনাথ রচনাসংগ্রহ.djvu/৭৩২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

হইতে পুণ্ডৱীক পূর্ণ একটি ঘোল লইলেন। ঘটিটি বাড়ীর ভিতর লইয়া গেলেন। অন্য পাত্রে ঘোলটি ঢালিয়া ঘটিটি তিনি জলে পূর্ণ করিলেন। তাহার পর সেই একঘটি জল আনিয়া গোয়ালার হাঁড়িতে ঢালিয়া দিলেন। আশ্চৰ্য্যান্বিত হইয়া গোয়ালা জিজ্ঞাসা করিল,-“ও কি করিলেন মহাশয়?” পুণ্ডরীক উত্তর করিলেন,- “যা বেটা, এখন চলিয়া যা।” গোয়ালা জিজ্ঞাসা করিল,- “আমার পয়সা?” পুণ্ডৱীক উত্তর করিলেন, — ‘পয়সা ! পয়সা আবার কি? তোর তো যেমন ছিল, তেমনি হইল। তোর তো ঢককে ঢক্‌ বজায় হইল। পয়সা আবার কিসের?" এই বলিয়া তিনি তাহাকে বাড়ী হইতে দূর করিয়া দিলেন।” সুবালা হাসি সংবরণ করিতে পারিলেন না । হাসিতে হাসিতে তিনি বলিলেন,- “কি আশ্চৰ্য্য! পৃথিবীতে এমন লোকও থাকে!” বিনয় বলিলেন,- “আরও দুই একটি পুণ্ডরীক-কাহিনী তোমাকে বলিতেছি। পুণ্ডরীকের জামাতা একবার শ্বশুরবাড়ী আসিয়াছিলেন। জ্যেষ্ঠ শ্যালক অর্থাৎ পুণ্ডৱীকের জ্যেষ্ঠ পুত্রের সহিত তিনি পুষ্করিণীতে স্নান করিতে গিয়াছিলেন। দৈবক্রমে পুণ্ডৱীকের পুত্ৰ গভীর জলে গিয়া পড়িল। সে সীতার জানিত না, সেই জন্য হাবুডুবু খাইতে লাগিল। জামাতা তাহার প্রাণরক্ষা করিতে গেলেন। ভগিনীপতিকে সে জড়াইয়া ধরিল। উভয়ে জলমগ্ন হইলেন। শক্রিয় বাগদী নামে একজন লোক নিকটে ছিল । পুণ্ডরীকের জামাতা ও পুত্রের প্রাণরক্ষা করিবার নিমিত্ত সে জলে গিয়া পড়িল। এই কাৰ্য্যে কিছুক্ষণের নিমিত্ত তাহার নিজেরও প্রাণসংশয় হইল। যাহা হউক অতি কষ্টে সে দুইজনের জীবনরক্ষা করিল। বাগদীর একপাল ছেলেপুলে। ঘোরতর পরিশ্রম করিয়াও সে তাহাদিগকে উদর য়া অন্ন দিতে পারিত না। সে ভাবিল,—নিজের প্রাণ সংশয় করিয়া আমি এই র জীবনরক্ষা করিলাম, নিশ্চয় ভালরূপ পুরস্কার পাইব ।” তাহার। আশা নিতান্ত ভি ছিল না। কারণ, জামাতা তাহার পিতাকে লিখিয়া দশটি টাকা আনাইলেন। য়কে তিনি বলিলেন— “শক্রিয় বাগদী আমার প্রাণরক্ষা করিয়াছে, তাহাকে পু করিবার নিমিত্ত আমার পিতা দশ টাকা প্রেরণ করিয়াছেন।” পুণ্ডরীক উত্তর — “আমার পুত্রেরও সে প্রাণরক্ষা করিয়াছে। আমি তাহাকে ভালরূপে পুরস্কার করিব। ও দশ টাকা আমাকে এখন দাও, তোমার ও আমার টাকা একসঙ্গে তাঁহাকে দিব।' জামাতা শ্বশুরের হাতে দশ টাকা অৰ্পণ করিলেন; কিন্তু সেই অবধি শক্রিয় বাগদী একটি পয়সাও পাইল না।” সুবালা বলিলেন,- “ছি ছি! কি জঘন্য লোক! কি নীচতা!” বিনয় উত্তর করিলেন,- “হ্যা, ইহাকে নীচতা বলে । সামান্য প্ৰবঞ্চনা ইহা নহে।” বিনয় পুনরায় বলিলেন,- “একবার পুণ্ডরীক আপনার গ্রামে গিয়াছিলেন। গিয়া দেখিলেন যে, তাহার ভ্রাতুষ্পপুত্ৰ-সাত বৎসরের বালক-বন হইতে একটি খরগোসের ছানা ধরিয়াছিল। শশক-শাবকটিকে সে বড় ভালবাসিত, সৰ্ব্বদা তাহাকে বুকে করিয়া রাখিত। নবীন শ্যামল দূৰ্ব্বাদল ও কোমল নবপল্লব সংগ্ৰহ করিয়া অতি যত্নে তাহাকে প্রতিপালন করিত। শশকশাবকটি দেখিয়া পুণ্ডরীকের লোভ হইল। তাঁহার কনিষ্ঠ পুত্র তখন বালক ছিল। নিজের পুত্রের নিমিত্ত তিনি খরগোস-ছানাটি লাইতে ইচ্ছা করিলেন। ভ্রাতুষ্পপুত্রের নিকট তিনি তাহা চাহিলেন। বালক বলিল— ‘‘না জ্যোঠামহাশয়! খরগোস ছানাটি আমি আপনাকে দিতে পারি না। অতি কষ্টে আমি ইহাকে ধরিয়াছি। ইহাকে ধরিতে আমার পায়ে কত কাটা ফুটিয়াছিল, কাঁটা লাগিয়া ফালা ফালা হইয়া আমার কাপড় ছিড়িয়া গিয়াছিল।” পুণ্ডৱীক সাতিশয় রাগান্বিত হইলেন।

      • firls six g3 881 - www.amarboicom a ASRA